Beanibazarview24.com
গত ৪ বছর ধরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। একে এত অধিক সংখ্যক মানুষের আশ্রয় দেয়ার চাপ, অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসা শরণার্থীদের মধ্যে জঙ্গি মিশে থাকার আতঙ্ক চিন্তায় ফেলেছে ইউরোপের দেশগুলোর সরকার প্রধানদের।
মূলত এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মানুষের ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যুদ্ধ এবং সহিংস পরিস্থিতির শিকার হয়ে যেমন বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরোপে প্রবেশের জন্য জীবনবাজি রাখছেন, তেমনই উন্নত জীবনের হাতছানিতেও অনেকে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউকে শনিবার একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি ভূ-মধ্যসাগর পথে ইউরোপে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যারা ইউরোপে প্রবেশ করতে চান তাদের মধ্যে সিরিয়ার নাগরিকই বেশি। এছাড়াও আফগানিস্তান, ইরাক, ইরিত্রিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোর বাসিন্দারাও রয়েছেন।
কিন্তু লিবিয়ার চোরাকারবারীরা তাদের নির্মম মানব ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এশিয়ার মানব পাচারকারীরাও সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। আর অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের প্রলোভন দেখাতে তারা বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের প্রথম ৩ মাসে ইতালিতে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন মাত্র ১ জন। কিন্তু চলতি বছর দেখা গেছে, এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮শ’ জনে। পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশিরাই এখন সবচেয়ে এগিয়ে।
ভূ-মধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া বেশ ক’জন বাংলাদেশি জানিয়েছেন, তারা দালালদের দ্বারা প্রতারণার শিকার। বিমানে দুবাই কিংবা তুরস্ক হয়ে লিবিয়ার পাড়ি জমাতে তারা প্রত্যেকে ১০ হাজার ডলার অর্থাৎ ৮ লাখ টাকা করে দালালদের দিয়েছেন। কিন্তু লিবিয়ায় গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হন। মানব পাচারকারী এসব চক্র আগত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেই তাদের সঙ্গে থাকা কাগজপত্র নিজেদের কাছে রেখে দেন। এরপর কাজ দূরে থাক, ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে পাঠাতে তাদের তুলে দেয়া হয় নৌকায়।
আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা (IOM) জানায়, সমুদ্রপথে সাব সাহারার দেশগুলোর মানুষের অবৈধ প্রবেশ বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ায় মানব পাচারকারীরা এখন ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। ফলে একসময় ওই অঞ্চলের মানুষ বেশি প্রবেশ করলেও বর্তমানে সেই জায়গা দখল করেছে বাংলাদেশিরা।
বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিমানে লিবিয়ায় পৌঁছলেও এসব বাংলাদেশিরা নিস্তার পান না। ইউরোপে পাড়ি দিতে নৌকায় উঠতে হলেও প্রতারিত এসব বাংলাদেশিদের খরচ করতে হয় আরও ৭শ’ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার টাকা।
আইওএম বলছে, উত্তর আফ্রিকা থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইতালি আনতে মানব পাচারকারীরা যে পথ ব্যবহার করে তা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরই এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায় ১১শ’ মানুষের সলিল সমাধি ঘটেছে। তাই সেদিকে এখন মনোযোগ কমছে পাচারকারীদের।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লিবিয়া বিষয়ক গবেষক হানান সালাহ জানিয়েছেন, ইউরোপে যেতে বাংলাদেশ থেকে আগতদের স্রোত তো আছেই এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে লিবিয়ায় থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকেরাও। গৃহযুদ্ধের পর লিবিয়ার পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় তারাও এখন ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.