Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

‘বিমানবন্দরে প্রবাসীদের এমনভাবে হয়রানি করা হয়, যেন এরা মানুষ না’







প্রবাসে পাখির ডাকে ভোরে ঘুম ভাঙে না, ভাঙে ঘড়ির অ্যালার্মে। যেন যন্ত্রের সঙ্গে জীবনের সুতোটা বাঁধা। অ্যালার্ম সুতোটা টান দিয়ে জানিয়ে দেয় ওঠ ওঠ, কাজে যেতে হবে। তাড়াহুড়ো করে ছুটে চলতে হয় প্রতিটি প্রবাসীর, এভাবেই তাদের দিন শুরু।

অনেকে অভিবাসী হয়ে আসে, অনেক আসে শিক্ষার্থী ভিসায়, কেউ বা আসে শ্রমিক ভিসায় আবার অনেকে অ–অভিবাসী হয়ে।যে যেভাবেই আসুক না কেন, বাস্তবতা তাদের বুঝিয়ে দেয় জীবন কত কঠিন। তারা বুঝতে পারে, আর যাই হোক-



এই বিদেশ বিভুঁইয়ে জীবনে টিকে থাকতে হলে দরকার হাড়ভাঙা পরিশ্রম।

কেউ বা করে মেধার, কেউ বা করে শারীরিক পরিশ্রম। অনেক আবার স্থায়ী হয়ে যায়, বিশেষ করে যারা পরিবার নিয়ে আসে। নিজের দেশকে তুলে ধরে বিশ্বের কাছে। ভাবে দেশে ফিরে যাওয়া মানে বোঝা হয়ে থাকা, তার চেয়ে বিদেশে স্থায়ী হয়ে যাই, সেই ভালো।

বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের আনাচে–কানাচে বসবাস করছে। এরাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডটাকে শক্ত করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। ২০১৮ সালে প্রায় এক হাজার ৫৫৭ কোটি ডলার পাঠিয়েছে দেশে। স্বপ্ন একটাই, দেশ ভালো থাকুক, পরিবার ভালো থাকুক।



কিছুদিন আগে হয়ে গেল-

একাদশ জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের ইশতেহারে প্রবাসীদের জন্য কোনো প্রতিশ্রুতিই দেয়নি। কী দুর্ভাগা প্রবাসীরা! দেশে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী শপথ নিল। প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী হিসাবে আমরা পেলাম ইমরান আহমেদকে, শুভেচ্ছা তাকে। জানি না, তিনি কতটুকু কাজ করবেন প্রবাসীদের জন্য।

প্রবাসীদের খুব বেশি চাওয়া নেই, হাজারো প্রবাসী স্বপ্ন দেখে কিছু অর্থ আয় করে দেশে ফিরে যাবে। ফিরে যাবে প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে, সন্তানের কাছে, বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু দেশে গিয়ে কী করবে সেই ভাবনা তাদের ঘিরে ধরে। অনেকে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার ফলে দেশে ফিরে দেখে, যে সন্তানের বয়স ছিল পাঁচ সে এখন ১২ কিংবা ১৫ বছরের কিশোর।



এই যে সন্তানকে কাছে না পাওয়ার হাহাকার, আদর-

করতে না পারার যন্ত্রণা, সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় ভিটেমাটি সব দখল করে বসে আছে অন্যরা। কিংবা আপনজনরা অনেক সময় দখল করে রাখে,আর বলে কী জন্য দেশে আইছস? সবচেয়ে বড় ভয়টা থাকে নিরাপত্তার অভাব।

তা ছাড়া দেশে গিয়ে নিজ উদ্যোগে কোনো একটা ব্যবসা শুরু করলে সেখানেও শুরু হয় আমলাতান্ত্রিক হয়রানি, হেনস্তা। তখন তারা প্রায় দিশেহারা হয়ে আবার ফেরত আসে প্রবাসে। কিন্তু নিজের পরিবার ছেড়ে, দেশ ছেড়ে কার থাকতে ভালো লাগে? না লাগে না। বিশ্বাস করুন, আমিও একজন প্রবাসী, ভালো না লাগলেও থাকতে হয় জীবনের প্রয়োজনে।



যাদের অর্থনৈতিক সমস্যা নেই, তাদের-

কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু যারা এই প্রবাসে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে অল্প আয় করে, তাদের দীর্ঘশ্বাস জানে, তাদের ঘাম জানে, তাদের শরীর জানে প্রবাস কী, শ্রম কী! নিরলস কাজ করে যাওয়া প্রতিটি শ্রমিকের ভোর হয় দেশে ফিরে যাবে এই স্বপ্ন নিয়ে।

কিন্তু এই শ্রমিকদের বিমানবন্দরে এমনভাবে হয়রানি করা হয়, যেন এরা মানুষ না। যাদের মানুষ ভাবা হয় তারা হলো ভিআইপি। এর মধ্যে আছে আবার নানা রকম ভিআইপি। যেমন মন্ত্রীর শালীর বান্ধবীর দেবরের বউ, সাংসদের ভাগনের বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘দূর মাঠে বিয়াইছে গাই, সেই সম্পর্কে তালতো ভাই’—এসব ভিআইপির অবস্থা হচ্ছে এমন।



অথচ এসব ভিআইপির চেয়ে শ্রমিকরাই দেশের জন্য বেশি অবদান রাখছে। তাদের অবদানকে তুচ্ছই ভাবা হয়। এ আর এমন কী!

অথচ একজন প্রবাসী পরিবার ছেড়ে তার জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করে এই প্রবাসে।

আর বিদেশে স্থায়ী হতে গেলেও পড়তে হয় অনেক ঝামেলায়। উচ্চশিক্ষিত, ভালো চাকরি যারা করে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় স্বল্প আয়ের মানুষদের। ভাষার সমস্যা, পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, অর্থ সমস্যা, সংস্কৃতি—সব মিলিয়ে তারা না পারে স্থায়ী হতে, না পারে দেশে ফিরতে।

এ এক বাঁদুরের মতো ঝুলে থাকা জীবন। আর অসুস্থ হলে তো কথাই নেই, একা একাই সবকিছু করতে হয়। এক শ চার ডিগ্রি জ্বর নিয়েও কাজে যেতে হয়, শরীর কুলায় না, মন সায় দেয় না, তবুও ছুটতে হয় জীবনের তাগিদে। কাজ না করলে চলবে কেমন করে?



বাস্তবতা কতটা কঠিন তারা বুঝতে পারে। কিন্তু আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। তবে অনেকে কঠোর পরিশ্রম করে দাঁড়িয়ে যায়, সচ্ছলতা আসে। কিন্তু তত দিনে সময় এত বেশি গড়িয়ে যায় যে, ওই পাওয়াকে তুচ্ছ মনে হয়। আয়নায় তাকিয়ে দেখে-

যে বয়স গড়িয়ে বার্ধক্য চলে এসেছে। জীবন উপভোগ করার মতো আর কিছুই থাকে না। তখন ভাবে, কী করতে এলাম বিদেশে। দেশে থাকলে অন্তত পরিবারকে তো কাছে পেতাম।



অনেকে বিদেশে বিয়ে করে স্থায়ী হয়ে যায়, একটা আশ্রয় খোঁজে, একটু নির্ভরতা চায়। দেশের মানুষ তখন আফসোস করে বলে, আহা ছেলেটা বিদেশ গিয়ে দেশকে ভুলে গেল। কিন্তু তারা জানে না, ফেরার উপায় থাকে না বলেই একটা পথ খুঁজে নেয়। জীবনযুদ্ধে হোঁচট খেতে খেতে তারা স্থির হয় একটা সময়। অভিমান থেকে, কষ্ট থেকে ভাবে আর কত! সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে তারা যারা পরিবার ছেড়ে আসে। সন্তানের প্রতি পিছুটান, পরিবারের প্রতি কর্তব্য—এই ভাবনাটাই তাদের কুরে কুরে খায়।

এখন ডিজিটাল যুগ, তাই পরিবারের সবার সঙ্গেই এখন কথা বলতে পারে ভিডিও কলের মাধ্যমে। অনেক সময় সন্তানের প্রতি যে মমত্ববোধ বুকের মধ্যে হাহাকার করে, তা সংবরণ করেই আড়াল করেই কথা বলে। সন্তান যখন জিজ্ঞেস করে, মা যখন জিজ্ঞেস করে, বাজান কবে দেশে আইবা?



তখন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে ছুটি নাইরে বাজান, ছুটি পাইলে চইলা আসমু। বাজান তোমার-

কবে ছুটি হইবো সন্তানের এমন প্রশ্নের জবাবে বাবা বলে, জানিনারে বাজান! চাপা দীর্ঘশ্বাস, জানি না, অনেক কাজ তো। কথা শেষ হলে চোখের পানি মুছে ফিরে যায় কঠিন জীবনে।

প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি খুশি হয় যখন বেতন পেয়ে দেশে পাঠায়। কত কষ্টের আয়! তারপরও নিজের কাছে না থাকলে ধার করে অন্যের কাছ থেকে এনে হলেও দেশে পাঠায়। শ্রমিক ভাইয়েরা যেভাবেই হোক তাদের জীবন গুছিয়ে নেয়। কিন্তু চরম সমস্যায় পড়ে নারী শ্রমিকেরা, বিশেষ করে আমরা দেখেছি সৌদি আরবে যেসব নারী শ্রমিক যাচ্ছে, তারা কী ভয়ানক অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আসছে।



প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ, সরকারের কাছে অনুরোধ, শ্রমিকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়েই তবে দেশের বাইরে পাঠান। কারিগরি শিক্ষাটা খুবই দরকার। এমনকি দেশে থাকলেও।

অর্থাৎ কাজ জানা থাকলে অন্তত খেয়ে–পরে

বেঁচে থাকতে পারে, সেটা বিদেশে না এলেও। উচ্চশিক্ষিত হতে হবে এমন তো নয়। শিক্ষা ও সামর্থ্য অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিন। দেখা যায়, বিদেশ এসে কোনো কাজ না জানার কারণে, ভাষা না জানার কারণে শ্রমিকদের বিপদে পড়তে হয় বেশি। বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ
জানা থাকলে অন্তত চলমান জীবন সহজ হয়ে যায়।



আরও একটা অনুরোধ জানাই, প্রতি বছর যে অর্থ প্রবাসীরা দেশে পাঠায় সেখান থেকে প্রায় ৫০ জনকে (যারা সবচেয়ে বেশি ডলার, রিয়েল, পাউন্ড পাঠায় ) নির্বাচিত করে পুরস্কার দেওয়া হোক।

এতে অন্য প্রবাসীরা উৎসাহিত হবে। প্রয়োজনে তাদের ভিআইপি কার্ড দেওয়া হোক। যারা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে, আনন্দ বিসর্জন দিয়ে পরিবারের জন্য, দেশের জন্য এত কিছু করতে পারে তাদের তো এগুলো প্রাপ্য। আমরা না হয় এই প্রাপ্য সম্মানটুকুই তাদের দিই।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.