Beanibazarview24.com
সোমালি বংশোদ্ভূত ৩৭ বছরের ইলহান ওমর এবং ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৪২ বছরের রাশিদা তালেব – এরা দুজনেই ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী ছিলেন। এরা দুজনেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসী-বিরোধী এবং মুসলিম-বিরোধী বাগাড়ম্বরের প্রকাশ্য এবং ঘোরতর সমালোচক।
মঙ্গলবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিতে এরা ইতিহাস তৈরি করেছেন। তারাই প্রথম দুই মুসলিম নারী যারা মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য হয়েছেন। রাশিদা তালেব জিতেছেন মিশিগান রাজ্য থেকে। ইলহান ওমর জিতেছেন মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের একটি আসন থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক মুসলিম প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেছেন। একটি মুসলিম সংগঠনের দেওয়া হিসাবে, মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা ছিল, একশ’র কাছাকাছি।
‘স্বপ্নের সীমা নেই’
জেতার পর তার প্রথম ভাষণে, ইলহান ওমর বলেন,” মিনেসোটায় আমরা অভিবাসীদের শুধু সাদরে বরণই করিনা, আমারা তাদের ওয়াশিংটনে পাঠাই। আজ রাতে অনেকগুলো ‘প্রথম’ বিশেষণের অধিকারী হিসাবে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি – প্রথম অশ্বেতাঙ্গ হিসাবে আমি এই রাজ্যকে কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছি, হিজাব পরিহিত নারী হিসাবে কংগ্রেস যাচ্ছি, আমিই প্রথম শরণার্থী যে কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছি, এবং প্রথম একজন মুসলিম নারী হিসাবে কংগ্রেসে যাচ্ছি।”
হিজাব-পরিহিত ইলহান ওমর ১৪ বছর বয়সে বয়সে পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনে আগে কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে চার বছর কাটিয়েছিলেন।
স্থানীয় একটি গির্জার স্পন্সরশীপে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তার পরিবার মিনিয়াপোলিসে আসার সুযোগ পান। বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে, ১৪ বছর বয়সে যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে, ইলহান ওমর সামান্যই ইংরেজি জানতেন এবং মাত্র তিন মাসের ভেতর ভাষা রপ্ত করে ফেলেন। তখন থেকেই তার দাদার অনুবাদক হিসাবে সাথে ডেমোক্র্যাটদের বিভিন্ন সভায় যেতে শুরু করেন।
তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কট্টর সমর্থক। একইসাথে, ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৫ ডলার মজুরীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে মিনেসোটা রাজ্য সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
সেই নির্বাচনে জেতার পর তিনি বলেছিলেন, “এ বিজয় শরণার্থী শিবিরে ৮-বছর বয়সী এক শিশুর বিজয়। এই বিজয় একজন তরুণীর যাকে জোর করে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয় তাদের যাদের বলা হয় যে তাদের স্বপ্ন দেখার সীমা রয়েছে।”
‘আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নয়’
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রাশিদা তালেব মিমিগান অঙ্গরাজ্যের একটি আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন। তার জন্ম ঐ রাজ্যেরই রাজধানী শহর ডেট্রয়েটের দরিদ্র, খেটে খাওয়া এক অভিবাসী ফিলিস্তিনি পরিবারে।
রাশিদা তালেব: “আমি আমার দুই ছেলের জন্য নির্বাচন করছি যাদের মধ্যে তাদের মুসলিম পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।” ৪২ বছরের তালেব ১৪ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসাবে মিশিগান রাজ্য পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি জানান, মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আসা নিষিদ্ধ করা সহ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু রীতির বিরোধিতা করার জন্যই তিনি কংগ্রেস নির্বাচনের দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
“ইতিহাস রচনার জন্য আমি নির্বাচন করিনি,” এবিসি টিভিকে বলেন রাশিদা তালেব। “আমি অবিচারের জন্য নির্বাচন করেছি। আমাদের ছেলেদের জন্য করেছি যাদের মনে তাদের মুসলিম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তারা বুঝতে পারছে না তাদের অবস্থান কোথায়। আমি কখনই দূরে দাঁড়িয়ে দেখার মানুষ নই।”
ডেট্রয়েটের কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রাশিদা নিজেকে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকারের প্রতিভূ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় রিপাবলিকানদের একটি নির্বাচনী সভায় ঢুকে তালেব মুখের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা শুরু করনে। তাকে তখন জোর করে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বৈষম্য
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে – যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮ শতাংশ মুসলিম অভিযোগ করেছে গত ১২ মাসে তারা কোনো না কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
৭৫ শতাংশ মুসলিম মনে করে, তাদের বিরুদ্ধে “মারাত্মক” বৈষম্য করা হচ্ছে। প্রায় একই সংখ্যক মুসলিম মনে করে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিম বিদ্বেষী।
২০১৭ সালের এক হিসাব মতে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমের সংখ্যা সাড়ে ৩৩ লাখ। এই সংখ্যা এক দশক আগের তুলনায় ১০ লাখ বেড়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.