Beanibazarview24.com
বর্তমানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে পুষ্টিবিদ হিসাবে প্রায়শই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হই। আর তা হলো, আমার রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে গেছে। আমি কি খাব?
কিভাবে এই মাত্রা স্বাভাবিক হবে? সারাজীবন কি ওষুধ খাব? অথবা আমি কি আর ডিম বা মাংস বা ফ্যাট জাতীয় খাবার খেতে পারব না?
আমি হেসে উত্তর দেই, অবশ্যই পারবেন। কোলেস্টেরল এর মাত্রা স্বাভাবিক ও হবে। তবে তার আগে জানতে হবে আপনার জন্য ওইসব খাবারের চাহিদার পরিমাণ। আমাদের দেহে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিনের শোষণের জন্য ফ্যাট এর প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক।
তাই রোজ আমাদের খাদ্যে দেহের চাহিদা অনুযায়ী কিছু ফ্যাট ও ফ্যাট জাতীয় খাবার থাকতেই হবে। মূল কথায় আসি। আমাদের দেহের চাহিদার বেশির ভাগ কোলেস্টেরল লিভারে তৈরি হয়।
তাছাড়া ফ্যাট এর মধ্যে দু’টি প্রকার আছে যার একটি প্রকার (Saturated fat, Trans fat) আমাদের দেহেই পর্যাপ্ত পরিমানে তৈরি হয় যা আমাদের খাদ্য থেকে গ্রহণের প্রয়োজন হয় না বা খুবই সামান্য গ্রহণীয়।
আবার অন্য প্রকার ফ্যাট (Polyunsaturated fat/PUFA, Monounsaturated fat) যা খাদ্য থেকে গ্রহণ করতে হয়।
আমরা যা খাই তার ‘রকম বা প্রকার’ এবং ‘পরিমাণ’ এই দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন খাবার বেছে নিতে হবে যাতে Saturated fats, Trans fat এর পরিমান খুব নগন্য। আবার পর্যাপ্ত পরিমাণ PUFA এবং Mono un saturated fat থাকে।
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, PUFA এর একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান ওমেগা-৩ ফ্যাট, যার DHA ও EPA একাধারে আমাদের দেহে মস্তিষ্কের ও হৃদপিন্ডের সুস্থতা, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়ানো, শরীরের ইনফ্লামেশন কমানো, বিশেষ কিছু হরমোনের কার্যকারিতা ত্বরান্বিত করা ইত্যাদি কাজ করে থাকে।
এর উৎকৃষ্ট উৎস হলো মাছের তেল, শীতল পানির মাছ-কর্ড, স্যালমন, টুনা মাছ, বিভিন্ন ধরনের বাদাম বিশেষ করে কাঠবাদাম বা Almond nuts, আখরোট বা Walnuts, মিষ্টি কুমড়ার বীচি, Wheat germ ইত্যাদি।
সুতরাং দেহের সর্বোচ্চ সুস্থতার জন্য আমাদের খাদ্যে অবশ্যই ভাল ফ্যাট বেছে নিতে হবে। এখন আসি ভালো ফ্যাট আর মন্দ ফ্যাট জাতীয় খাবার কি, কিভাবে বুঝব ?
আমাদের নিত্যদিনের খাবারে চর্বিযুক্ত গরু/ খাসির মাংস, পায়া রান্না, মুরগীর চামড়া, মগজ, মাছের ডিম, বড় মাছের মাথা, ফুল ক্রিম দুধ বা দই, ডিমের কুসুম, ঘিয়ে ভাজা বা রান্না খাবার, চিংড়ি, কাকড়া, মাখন, মার্জারিন বিশেষ করে প্রানীজ খাবারের প্রাপ্ত ফ্যাট ইত্যাদি খাবার খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি তে সহায়ক।
তাই এসব খাবার গ্রহণে একটু সতর্কতা অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। যেমন- মাংস রান্নার সময় যতটা সম্ভব চর্বি ছাড়িয়ে নেয়া, ডিমের কুসুম সাপ্তাহে ৩ টির বেশি না খাওয়া (প্রতিদিন ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যাবে), মুরগির চামড়া না খাওয়া, ডুবো তেলে ভেজে না খেয়ে শ্যালো ফ্রাই, বেক, সেদ্ধ বা পাতলা ঝোল করে রান্না করা, মাখন, মার্জারিন, মেয়নিজ, সালাদ ড্রেসিং, ঘি ও চিজ যতটা সম্ভব বাদ দেয়া, চিংড়ি ও এই জাতীয় মাছ সাপ্তাহে একবারের বেশি না খাওয়া, ফুল ক্রিম দুধ পানি মিশিয়ে পাতলা করে খাওয়া বা পাতলা দুধের টকদই খাওয়া ইত্যাদি ব্যাপার গুলো মেনে চলা জরুরি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.