Beanibazarview24.com
চোখে ছলছল করছে জল কিন্তু কাঁদছেন না। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে এক স্বজনকে মুঠোফোনে কল দিয়ে বললেন, ‘চাইরো জনের ফাঁসির রায় হইছে।’ এর পর আরো অনেকগুলো কল রিসিভ করে রায়ের খবর জানালেন জহুর আলী। ছাতকে খুন হওয়া শিশু ইমনের বাবকা তিনি। বুধবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় হয়।
রায়ের পর আদালত চত্বরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। রায় শুনতে পড় ছেলে জামিল (১৯) সাথে নিয়ে বুধবার আদারতে এসেছিলেন জহুর আলি। বাবার পাশে সারাক্ষণই দাঁড়িয়েছিলেন জামিল। তার দুই গালে চোখের জলের দাগ তখনও দৃশ্যমান। রায়ের পর অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পাড়েন তিনি।
ইমন হত্যা মামলায় ৪ আসামিরই ফাঁসির রায় দেন আদালত। রায় শেষে আসামিদের আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মামলার পিপি ও কৌশলিদের বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরাও চলে গিয়েছেন। নেই কোনো উৎসুক জনতা। ইমনের বাবা ও ভাইসহ কয়েকজন আত্মীয় তখনও রয়ে গেছেন আদালত প্রাঁঙ্গনে।
গণমাধ্যম কর্মীসহ আত্মীয় স্বজনদের জানাচ্ছেন রায় নিয়ে সন্তুষ্টির কথা। মুখে সন্তুষ্টির কথা বললেও বাবা ছেলে কারো মুখেই নেই সন্তুষ্টির ছাপ।
ইমনের বাবা জহুর আলী বলেন, ‘এই রায়ে সন্তুষ্ট হলেও জানো শান্তি পাইতাছি না। এই রায় কার্যকর হইলে অন্তত পক্ষে আমরা কিছু শান্তি পাইমু। আমার বাইচ্চার আত্মায় শান্তি পাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন তিনি যেন এই রায় দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা করেন।’
ছাতক ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইমনের ভাই জামিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরার পরিবার তিন বছরের বেশি সময় ধরি অপেক্ষাত আছিল এই রায়ের ল্যাইগগা। ইমন হত্যার পর থাকি আমার আম্মার চোখের পানি পড়া এখনো বন্ধ হইছে না। ফাঁসির রায় হওয়ার পর আম্মারে জানাইছি তারপরও তান কান্দা বন্দ হইছে না।’
এই মামলার পলাতক আসামি সালেহ আহমদকে গ্রেপ্তার করে চার জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানান ইমনের ভাই জামিল।
প্রসঙ্গত, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী জহুর আলীর ছেলে ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ইমনকে ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ অপহরণ করা হয়। পরে মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পরও অপহরণকারীরা শিশু ইমনকে হত্যা করে।
৮ এপ্রিল মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শিশু ইমনের হত্যাকারী ঘাতক ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বিষের বোতল ও রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে। এমনকি বাতিরকান্দি হাওর থেকে ইমনের মাথার খুলি ও হাতের হাড় উদ্ধার করে পুলিশ। একজন ছাড়া গ্রেপ্তার করে জড়িত তিনজনকে। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.