Beanibazarview24.com
সিলেটে এসএসি পরিক্ষায় এইডেড স্কুলের সাবকেন্দ্র কিশোরী মোহন স্কুলে ভুল প্রশ্ন পত্রে গণিত পরীক্ষা ও কিশোরীদের হিজাব খুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষা-২০১৯ সিলেটের একটি কেন্দ্রে ২০১৬ সালের সিলেবাসের প্রশ্নে পরীক্ষা, ১০/১৫ মিনিট পর প্রশ্নপত্র বিতরণ করেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই উত্তরপত্র নিয়ে নেওয়া, মেয়ে শিক্ষার্থীদের হিজাব খুলে নেওয়া, ছেলেদের টাই খুলে নেওয়াসহ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ করেছে ঐ কেন্দ্রের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। যদিও কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাবৃন্দ বিষয়গুলোকে পুরোপুরি সত্য না বললেও কয়েকটি অভিযোগকে সাজানো বলে উল্লেখ করছেন।
সিলেট এইডেড স্কুলের সাবকেন্দ্র কিশোরী মোহন স্কুলে আজকের এসএসসি পরীক্ষার গণিত পরীক্ষায় এমন ঘটনা ঘটেছেপরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হতে না হতেই ঐ কেন্দ্রের অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাংবাদিকদের তারা জানান, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিতে আমাদের ১৫ মিনিট লেট করা হয়। কিন্তু আমাদের অতিরিক্ত কোন সময় না দিয়েই উত্তরপত্র আমাদের কাছ থেকে টেনে নেওয়া হয়। তাছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন তাদের ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাসের পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে দশ মিনিটের ভেতরে সেটা নিয়ে নতুন প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এজন্য পরীক্ষা ১৫ মিনিট পরে নতুন করে শুরু করা হয়েছে।
এছাড়া ঐ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী এবং বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী সহ অন্তত ৪জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলরুমে তাদের হিজাব খুলে নেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। তাছাড়া স্কলার্সহোম স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী তাদের টাই খুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। (সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় নাম ও রোল নাম্বার গোপন রাখা হলো)।
তবে, ঐ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ও এইডেড স্কুলের প্রধান শিক্ষক শমসের আলী সাংবাদিকদের জানান, ২০১৬ সালের প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভূয়া। শুধুমাত্র বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত একজন শিক্ষার্থীই ২০১৬ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়েছে। অন্য কেউ এমন প্রশ্ন পেয়েছে প্রমাণ করতে পারলে আমি ইস্তফা দেবো।
তাহলে নির্ধারিত সময় থেকে ১৫ মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু করলেন কেনো? প্রতিবেদকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমাদের কাছে প্রশ্ন এসে পৌছায় ৯টা ৩৫ মিনিটে। তা সঠিকভাবে বন্ঠন করতে করতে একটু দেরী হয়ে যায়। আজ ১০/১৫ মিনিট দেরীতে প্রশ্নপত্র বিতরণ করলেও আমরা অতিরিক্ত ১০ মিনিট দিয়েছি। ১০টা ১০মিনিটে প্রশ্ন সরবরাহ করে ১টা ১০ পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
কিশোরী মোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং কেন্দ্রের যুগ্ম সচিব গৌরা ঘোষের সাথে আলাপকালে তিনিও অভিযোগ অস্বীকার করে হিজাব-টাই খুলে নেওয়ার ব্যাপারে বলেন, মেয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে কানে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা দিতে না পারে সেজন্য আমরা কান পর্যন্ত হিজাব খুলতে বলেছি। ছেলেদের টাই খুলে নেওয়ার ব্যাপারে বলেন, তদন্ত করে যদি অভিযোগ প্রমাণীত হয় তবে দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, এতোগুলো হলরুমের মধ্যে মাত্র ৩/৪টা হলরুমের শিক্ষার্থীদের কাছে সময় কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদি সত্যিই সময় কম দেওয়া হতো তবে সকল হল রুমের শিক্ষার্থীরাই এসে অভিযোগ করতো।
নির্ধারিত সময়ের আগে উত্তরপত্র নিয়ে নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই উত্তর করতে পারেননি বেশ কয়েকটি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর। অনেকেই ঝুকছেন ফেল হওয়ার শংকায়। আর তাই পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা। অভিভাবকদের সাথে নিয়ে অফিস্রুমে দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলতে গেলে উল্টো অপমানিত হতে হয় তাদের। এমনটিই জানিয়েছেন তারেক আজিজ,তাহমিদ চৌধুরী, মানিক খান, রুমেনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন অভিবাবক।
অভিবাবক ও শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রের গেটে জমা হয়ে এর প্রতিবাদ জানাতে থাকলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কোতয়ালী থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) ছাহাবুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি প্রতিবাদলিপি ও স্মারকলিপি দেয়।
অভিবাবক ও শিক্ষার্থীরা আগামী কালের পরীক্ষার আগেই যাতে বিষয়টি সমাধান করা হয় সেজন্য সিলেট শিক্ষাবোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। অভিবাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহবান জানান।
সূত্রঃ সিলেটে প্রতিদিন২৪ ডটকম
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.