Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ভাষা শহীদ রফিকের স্বজনরা ভালো নেই, অযত্ন-অবহেলায় জন্মভিটা







৫২’র ভাষা আন্দোলনে প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ। যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা পেয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ১৯৫২ থেকে ২০১৯ অতিবাহিত হয়েছে দীর্ঘ ৬৭ বছর। কিন্তু আজও চিহ্নিত হয়নি জাতীর এই সূর্য সন্তানের কবরটি।

সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি তার জন্মভিটাও। ভাষা দিবসে স্মৃতি জাদুঘর ও শহিদ মিনার চত্ত্বরে হাজারো মানুষের ঢল নামলেও ভিতর বাড়ির খবর নেয়না কেউ। জাতির এই কৃপণতায় হতাশ এলাকাবাসী।



২০০৬ সালে ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের জন্ম ভূমি পারিল গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রফিক নগর করা হয়। গ্রামের নাম পরিবর্তন হলেও এখনো বদলায়নি জনপথটির আর্থ সামাজিক অবস্থা।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা ছিল, গ্রামের নাম পরিবর্তনের সঙ্গে উন্নয়ন হবে এলাকাটির। প্রসার ঘটবে শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় হতাশ এলাকাবাসী। স্থানীয় সমাজ হিতৈষী লে. কর্নেল (অব.) মজিবুল ইসলাম খান পাশার দানকৃত ৩৪ শতাংশ জমির ওপর ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।



দীর্ঘদিনেও তা পূর্ণতা পায়নি। সেখানে শহীদ রফিকের দুটি ছবি ও কিছু বই ছাড়া স্মৃতি বিজরিত কিছুই নেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগেও স্মৃতি জাদুঘরে লাগেনি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ছোয়া। নেই কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ।

এই ভাষা সৈনিকের ব্যবহৃত চেয়ার টেবিল, পাঞ্জাবী, লুঙ্গী এবং নিজ হাতে তৈরি নকশা করা রুমালসহ অনেক জিনিসপত্র স্বজনদের হেফাজতে থাকলেও এর কিছুই ঠাঁই মেলেনি স্মৃতি জাদুঘরে।



ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে। চত্বর জুড়ে অনেক ফুল গাছ লাগানো হলেও পরিচর্যার অভাবে এখন সব গাছ মরে গেছে। জাদুঘরের হলরুমে প্রায়ই বিচার সালিশ বসানো হয়।

প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পান না। শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের বাড়ি ঘেঁষে নির্মিত শহীদ মিনারটিও অরক্ষিত। সীমানা প্রাচীর না থাকায় বর্ষা ও ভারি বর্ষণে শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।



এ ছাড়া ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছরেও শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের জন্মভিটা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০০০ সালে বেসরকারি সংস্থা প্রশিকা দুটি আধা-পাকা ঘর তৈরি করে দেয়। সেখানে থাকেন শহীদ রফিকের প্রয়াত ভাই আব্দুল খালেকের সত্তরোর্ধ স্ত্রী গুলেনুর বেগম ও ভাতিজা শাহজালালের পরিবার।

বাড়িটিতে আত্মীয়-স্বজন ও দর্শনার্থীদের থাকার উপযোগী কোনো ঘর নেই। নেই স্বাস্থ্য সম্মত একটি শৌচাগারও। যে ঘরে রফিকের জন্ম সে ঘরটি এখন জরাজীর্ণ। সে ঘরে জ্বালানি কাঠ রাখা হয়।



সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় দেখা হয় শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের ভাবী গুলেনূর বেগমের সঙ্গে। তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মারা গেছে অনেক আগেই। বয়সের ভারে ন্যুজ এই বিধবা নারী নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। লাঠি ভর দিয়ে চলতে হয় তাকে।

গুলেনুর বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ভাষার মাস আসলে আপনারা আসেন, সারা বছর কত কষ্টে আমাদের দিন কাটে, সে খবর কেউ রাখে না। শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বাড়িটিতে থাকি। ভালো ঘর-দরজা নাই। কেউ আসলে বসতে দিতে পারি না।



শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের একমাত্র জীবিত ভাই খোরশেদ আলমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা জেলা শহর ও ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্মৃতি জাদুঘর এবং রফিকের বাড়ি দেখতে আসেন।

থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকায় এখানে এসে বিপাকে পড়েন অনেক দর্শনার্থী। শহীদ রফিকের বাড়ির দুরাবস্থা দেখে অনেকেই সাহায্যের আশ্বাস দেন। কিন্তু যাওয়ার পর কেউ আর ফিরে আসে না।



একমাত্র জীবিত ভাই খোরশেদ আলম বলেন, শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদকে কবর দেওয়া হয় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে। এখনো তার কবরটি চিহ্নিত করা হয়নি। কবরটি চিহ্নিত করে নামফলক লাগানো হলে দোয়া-দরুদ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা যেতো।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের পদক দেওয়া হয়। অথচ যাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন পদক।



ঈদ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসহ বিশেষ দিনে রাষ্ট্রের বিশিষ্ঠ ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সরকার প্রধানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ পান। পেয়ে থাকেন রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ সুবিধা।

কিন্তু ভাষা দিবসে ভাষা সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের নিমন্ত্রণ জানানো হয় না। এমনকি কি হালে তাদের দিন কাটে, সে খবরও কেউ নেওয়া হয় না। ভাষা সৈনিকদের পরিবারের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।



অমর একুশে পরিষদের সভাপতি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার তোবারক হোসেন লুডু বলেন, শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ আমাদের অহংকার। ভাষা আন্দোলনে তাঁর আত্মদানে সিঙ্গাইরের মাটি ও মানুষ ধন্য।

ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেলেও জাতীর এই সূর্য় সন্তানের কবরটি এখনো সনাক্ত করে করা হয়নি। তিনি সরকারের প্রতি শহীদ রফিকের করবটি চিহ্নিত করার দাবি জানান।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ খান বলেন, সারা বছর গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে দুর-দুরান্ত থেকে দর্শনাথীরা আসেন। থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যান তারা।



এ কারণে দিনদিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। দর্শনার্থীদের থাকা খাওয়ার জন্য একটি ডাক বাংলা নির্মাণ ও শহীদ রফিকের বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।

সিঙ্গাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমতুল্লাহ বলেন, এই উপজেলার আসার পর ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। খোঁজ-খবর নিয়েছি ভাষা শহীদের পরিবারটির।

শহীদ রফিকের ভাতিজা শাহাজালালকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ওই পরিবারে চাকরি করার আরো কেউ থাকলে যোগ্যতানুসারে তাদেরও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এখন পর্যন্ত আমার কাছে ভাষা শহীদ পরিবারের কেউ কোন সমস্যা নিয়ে আসেনি। আসলে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া শহীদ রফিকের বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.