Beanibazarview24.com
গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে একটি পাচঁতলা ভবনে আগুন লাগে। পরে আগুন আশপাশের আরও তিনটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ টি ইউনিট প্রায় ৯ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আর এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং প্রায় অর্ধশত আহত ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এদিকে এ আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পায়নি আশেপাশের কোন কিছুই। কিন্তু কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে সেই ঘটনার সাক্ষ্য দিচ্ছে সুউচ্চ ভবন গুলোও। এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল শুধু চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ। মসজিদটি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল।
আর সেই আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া প্রতিবেশীদের জন্য কান্নার রোল পড়েছে সেই চুড়িহাট্টা জামে মসজিদে। আজ ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার পুড়ে যাওয়া ভবনের ১৫ ফিট উত্তরে অবস্থিত চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদে জুমার নামাজের পর মোনাজাতের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসল্লিরা।
এ সময় জুমার নামাজের মোনাজাতে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের ইমাম বলেন, ‘হে আল্লাহ যারা এ ঘটনায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তাদেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। তাদের পরিবারকে
শোক সহ্য করে ধৈর্য ধরার ক্ষমতা দান করুন।’ এ সময় ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমসহ চুড়িহাট্টাবাসী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
এদিকে নামাজ শুরুর আগে এমপি হাজী সেলিম মুখপাত্রের মাধ্যমে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার আদেশ ও অনুরোধ, আপনারা কেউ নিজের বাসায় কেমিক্যালের গোডাউন ভাড়া দেবেন না।’
চকবাজারে মৃত্যুপুরী সেই হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন নিয়ে বের হল অবাক করা তথ্য!
বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত প্রসাধনী ব্র্যান্ড নাম ‘ক্লেরিস’। শিকাগো শহরের গ্রেসেক ইলিনয়সভিত্তিক এ কোম্পানির অন্যতম পণ্য ডেইলি বেবি লোশন। যা উৎপাদন হয় থাইল্যান্ডে। বাংলাদেশের কোথাও এমনকি ভারতেও নেই এর কোনো কারখানা। কিন্তু চকবাজার চুড়িহাট্টার মৃত্যুপুরী সেই হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে ক্লেরিসের লোগো হুবহু নকল করেই তৈরি হতো এই ডেইলি বেবি লোশন।
একইভাবে দুবাইয়ের ‘স্টারলিং’ ব্র্যান্ডের নকল পারফিউমও তৈরি হতো ওই ভবনে। চারতলা এই ভবনে থাকা বডি স্প্রের হাজার হাজার বোতলে থাকা দাহ্য পদার্থের কারণেই বুধবার রাতে নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদাসীনতার কারণেই বছরের পর বছর ধরে চকবাজারসহ আশপাশের এলাকায় এসব নকল প্রসাধনসামগ্রীর কারখানা গড়ে উঠেছে। এ কারখানাগুলোয় বডি স্প্রে ছাড়াও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক থাকে, যা মারাত্মক দাহ্য।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আগুনের পর হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এখন স্তূপ হয়ে জমে আছে এসব নকল পারফিউম ও লোশনের বোতল। যার সবই পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের কারণে অনেক বোতল আবার পড়ে আছে সামনের রাস্তায়ও। এসব বোতলে একটু চোখ বুলালেই দেখা যাবে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের হুবহু সিল।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান বলেন, পুরান ঢাকায় অন্তত ৫০ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থের গোডাউন ও কারখানা রয়েছে। সরকারের উদ্যোগসহ আমরা সেগুলো সরিয়ে নিতে বললেও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের মুখে তা হয়নি। পাশাপাশি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের নকল পণ্য উৎপাদনের পেছনে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.