Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

৭ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ৫ লিটার পেট্রোল







মানুষের যান্ত্রিক জীবনে জায়গা দখল করেছে পলিথিন এবং প্লাস্টিক। পলিথিনের স্থায়ীত্ব বেশি। সহজে পচন এবং পুড়িয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। অল্প বাজার সহজেই পলিথিনে বহন করা সম্ভব। কিন্তু কাজ শেষে পলিথিনের স্থান হয় ডাস্টবিনে। আর সেই পরিত্যক্ত পলিথিনকে কাজে লাগিয়েছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৫৫ বছর বয়সী ইদ্রিস আলী। পলিথিনকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে তা থেকে তৈরি করেছেন জ্বালানি তেল পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস এবং ফটোকপি মেশিনের কালি।



ইদ্রিস আলীর বাড়ি উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। ১৯৮৫ সালে ৮ম শ্রেণি পাস করেছেন তিনি। তবে অভাবের কারণে পড়াশুনার পাঠ সেখানেই চুকেছে। এরপর জীবন সংগ্রামে নামেন। নিজের জায়গা জমি বলতে কিছুই নাই। শ্বশুরের দেয়া সামান্য জমিতে মাটির বাড়ি। সংসারে পাঁচ ছেলেমেয়ে। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা কৃষিসহ অন্যান্য কাজ করেন। স্ত্রী নূর জাহান বিবি গৃহিনী।



জীবিকা নির্বাহে ইদ্রিস আলী কখনো ভ্যান চালিয়েছেন আবার কখনো কৃষিকাজ করেছেন। এছাড়া ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি, সাইকেল মেরামতের মিস্ত্রির কাজও করেছেন। সর্বশেষ ভটভটি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।

অল্প শিক্ষিত এ মানুষটি তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন জ্বালানি তেল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই ওয়েল্ডিং বা ঝালাই মেশিন। তার এ প্রতিভাকে এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী। এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকারি পৃষ্টপোশকতা পেলে তার এ প্রতিভা বিকশিত করা সম্ভব বলে মনে করছেন সচেতন এলাকাবাসী।



পলিথিন থেকে শুধু জ্বালানি তেলই নয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ওয়েল্ডিং মেশিনও (ঝালাই মেশিন) তৈরি করছেন তিনি। ১২ ভোল্টের তিনটি ড্রাইসেল (শুষ্ক) ব্যাটারি দিয়ে তৈরি এ মেশিনে প্রায় ৫০টি স্টিক ঝালাই করা সম্ভব। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এ মেশিনটি তৈরিতে খরচ পড়েছে প্রায় ৪২ হাজার টাকা।

ইদ্রিস আলী বলেন, পরিত্যক্ত ও নোংরা পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি করা হচ্ছে এমন একটি ভিডিও তিনি ইউটিউব চ্যানেলে দেখেছেন। আর এ বিষয়টি তাকে গত তিন মাস থেকে ভাবাচ্ছে। এরপর তিনি বাস্তবে সেই ভাবনাকে রূপদান করেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে বাজার থেকে তেলের একটি বড় টিনের ড্রাম (ব্যারেল), একটি মাঝারি প্লাস্টিকের ড্রাম, ছোট দুইটি কন্টেইনার, প্রায় ১৫ ফুট স্টিলের চিকন পাইপ ও কয়েক হাত প্লাস্টিকের ফিতা কেনেন। এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে জ্বালানি তেল তৈরি শুরু করেন।



তিনি বলেন, নোংরা ও পরিত্যাক্ত পলিথিন ১০ টাকা কেজি করে টোকাইদের কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিনগুলো টিনের ড্রামে ভরে প্রায় আধাঘণ্টা ড্রামের নিচে খড়ি দিয়ে জ্বাল দেন। এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে ঠাণ্ড হয়ে প্রেট্রোল এবং ডিজেল ছোট কন্টেইনারে জমা হচ্ছে। ৭ কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৫ লিটার পেট্রোল জাতীয় পদার্থ, আধা লিটার ডিজেল বের করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

এ পেট্রোল ইতোমধ্যে মোটরসাইকেলে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ৬০ টাকা লিটার হিসেবে বাজারজাত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। তবে টাকার অভাবে আধুনিক যন্ত্র কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।



স্থানীয় ফাইজুর হোসেন, নাজমুল হুদা ও চৌবাড়িয়া বাজারের হাবিবুর রহমান, রুবেল বাপ্পিসহ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমরা জানতাম পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এ পলিথিন থেকে যে জ্বালানি তেল তৈরি করা হয় তা জানতাম না। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, ইদ্রিস আলীর উদ্ভাবনটির কথা শুনেছি। তবে এর কার্যকারিতা কতটুকু ও পরিবেশবান্ধব কিনা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্ণয়ের মাধ্যমে জানা যাবে। তবে আমরা স্থানীয় প্রশাসন তাকে স্বাগত জানাই।














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.