Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সারা দেশে ওষুধের দাম লাগামহীন







নিয়ন্ত্রণহীন দেশের ওষুধের বাজার। ওষুধের প্যাকেটে খুচরা মূল্য উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দামে বিক্রি হয় না। ১২ টাকার ইনজেকশন ৮শ’ এবং ৬০ টাকার ওষুধ ১৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশব্যাপী বৈধ-অবৈধ প্রায় ২ লাখ খুচরা ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দামে ওষুধ বিক্রি করছেন। তাদের এ কাজে সহায়তা করেন ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা।



এই চক্র দেশের সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যসন্ত্রাস চালালেও নির্বিকার সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিপণন খরচ মেটাতে সময়-অসময় দাম বাড়ায় ওষুধ কোম্পানিগুলো।

মাত্র ১১৭টি ওষুধ ছাড়া বাকিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের। ফলে কারণে-অকারণে ওষুধের দাম বৃদ্ধির নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক সৈকত কুমার কর যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি। বিভিন্ন কোম্পানির দাম বৃদ্ধির কিছু আবেদন থাকলেও সেগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়নি।



তবে দোকানিরা দাম বাড়িয়ে থাকলে বিষয়টি প্রশাসনের জানা নেই। এমনকি তারা কোনো অভিযোগও পায়নি। তিনি জানান, প্রশাসনের কাজ চালাতে প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় দেশের সব ওষুধের দোকানের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয় না।

অস্বাভাবিক দামে ওষুধ বিক্রির একাধিক তথ্য এসেছে যুগান্তরের কাছে। চলতি সপ্তাহে রাজবাড়ীতে ১২ টাকা মূল্যের একটি ইনজেকশন ৮০০ টাকায় বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত সেলাই সুতার দাম ১৫-২০ টাকা।



ঢাকার শাহবাগের একটি দোকানে এই সুতার দাম নেয়া হয় ৬০০ টাকা। যশোরে একটি দোকানে বমির ওষুধ কিনতে গেলে দাম রাখা হয় ১৯০০ টাকা। অথচ ওষুধের প্রকৃত দাম মাত্র ৬০ টাকা। এ ধরনের ঘটনা দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রতিনিয়ত ঘটছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে প্রয়োজনীয় ডসেটিক্সেল, প্যাক্লিটেক্সেল, কার্বোপ্লাটিন, সিসপ্লাটিন, জেমসিটাবিন ইত্যাদি ওষুধের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ক্যাটামিন ইনজেকশনের দাম ৮০-১১৫ টাকা কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়।

খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওষুধের দাম প্রতি পাতায় (ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের ক্ষেত্রে) লেখা থাকে না। লেখা থাকে ৫ পাতা বা ১০ পাতার একটি বাক্সে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতা প্যাকেটের গায়ের দাম দেখার সুযোগ পান না। অন্যান্য পণ্যের মতো ওষুধের দাম সম্পর্কে রোগীদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোগীদের মুখ দেখেই একশ’ থেকে দু’শ গুণ দাম বাড়াতেও দ্বিধা করে না অসাধু বিক্রেতারা।



বেশি দামে ওষুধ বিক্রি সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রাজবাড়ীর সহকারী পরিচালক ওই দোকান মালিককে জরিমানা করেন। রোগী অস্ত্রোপচার টেবিলে থাকায় মাত্রাতিরিক্ত দামে ইনজেকশন কিনতে বাধ্য হন অভিযোগকারী।

গত মাসে শাহবাগে একটি ওষুধের দোকানে অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত সেলাই সুতা কিনতে যান দেলোয়ার হোসেন। এ সময় ওই দোকানি ১৫-২০ টাকা দামের সেলাই সুতা তার কাছে ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন। বোন বারডেম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষে থাকায় তিনি দরদাম না করে সুতা নিয়ে হাসপাতালে ফেরেন। সেখানকার নার্সের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন দোকানি তাকে ঠকিয়েছেন। পরে ওই দোকানে গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে দোকানি বিষয়টি অস্বীকার করেন।



যশোরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে গত ডিসেম্বরে। যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে একটি ফার্মেসিতে অ্যাপোনসেট নামের একটি বমির ওষুধ কিনতে গেলে দোকানি ওষুধের দাম রাখেন ১৯০০ টাকা। অথচ ওষুধের প্রকৃত দাম মাত্র ৬০ টাকা।

দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কোনো ওষুধের দাম বাড়ায়নি কোম্পানিগুলো। তবে ডিসেম্বরের আগে বেশকিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ইনসেপ্টা ফার্মার ওমিডন ২ থেকে আড়াই টাকা, স্কয়ার ফার্মার মোটিগার্ট আড়াই টাকা থেকে ৩ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মার নিউসেপ্টিন-আর আড়াই টাকা থেকে ৩ টাকা, এসিআই ফার্মার অ্যাবেক্যাপ ৫/২০ ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা ও ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল ফার্মার মাইক্রোফ্রি ২৫ টাকা থেকে ২৮ টাকা দামে উন্নীত হয়েছে।



তবে এ ধরনের সাধারণ ওষুধের ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির অভিযোগে ভিন্নতা রয়েছে। বিভিন্ন বিষেশায়িত হাসপাতালের সামনে ওই সব রোগের ওষুধের চাহিদা অনুসারে দাম বাড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে ওষুধের প্যাকেটে লেখা দামের কোনো পরিবর্তন হয় না। যখন যে ওষুধের চাহিদা বাড়ে তখন কোম্পানির প্রতিনিধি ও দোকানিরা মিলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে থাকেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ওষুধের দোকানে দেখা গেছে, ডক্সিভা ২০০ মিলিগ্রাম ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। ওষুধটির নির্ধারিত মূল্য ৬ টাকা হলেও একজন ক্রেতার কাছে ৮ টাকা এবং আরেকজনের কাছে ১০ টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়।



ক্রেতাদের কাছে দাম জানতে চাইলে তারা বলেন, ওষুধের সঠিক মূল্য তারা জানেন না বা জানার চেষ্টাও করেন না। কারণ হিসেবে বলেন, ওষুধ কেনা হয় সুস্থতার আশায়, তাই মূল্য ততোধিক গুরুত্ব পায় না। এ ছাড়া ওষুধ শিল্প সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআইয়ের দাম বাড়ার কারণে বাড়ে ওষুধের দাম। পাশাপাশি বিপণন খরচও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। তারা জানান, বর্তমানে বেশিরভাগ কাঁচামাল আসে ভারত ও চীন থেকে। দাম বাড়লে কোম্পানিগুলো ঔষধ প্রশাসনে দাম বাড়ানোর আবেদন করে। কিন্তু দাম কমলে তারা আর ওষুধের দাম কমানোর কথা চিন্তা করে না।

এ ছাড়া বিদেশি ওষুধের কারণেও দামের তারতম্য দেখা যায়। যেমন ক্যান্সারের কেমোথেরাপির ওষুধের দাম সম্প্রতি বেড়েছে। সম্প্রতি কিছু বিদেশি কোম্পানি ওষুধের দাম অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে প্রয়োজনীয় ডসেটিক্সেল, প্যাক্লিটেক্সেল, কার্বোপ্লাটিন, সিসপ্লাটিন, জেমসিটাবিন ইত্যাদি ওষুধের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার একই কারণে কোনো কোনো ওষুধের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমাতে হয়েছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত হারসেপ্টিন ওষুধের প্রতি পিসের দাম ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্বাভাবিকভাবে সে ওষুধের দাম কমে বর্তমানে ৯০ হাজার ৪০০ টাকায় নেমেছে। এদিকে দেশে প্রস্তুতকৃত বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের একই ওষুধের আগে দাম ৮০ হাজার টাকা থাকলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার টাকা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ বিক্রেতারা জানান, দেশে পপুলার, ইনসেপ্টা, রেনেটা ও গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস ক্যাটামিন ইনজেকশন উৎপাদন করে। সরবরাহ সংকটে বর্তমানে বাজারে ৮০-১১৫ টাকার ইনজেকশনটি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদনকারী চার প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত ইনজেকশনটি ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করে। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদিত জি ক্যাটামিন ৫০ এমজির প্রতিটি ইনজেকশনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৮০ টাকা, পপুলার ফার্মার ক্যাটালার ৫০ এমজির এমআরপি ১১৫, ইনসেপ্টার ক্যাটারিডের এমআরপি ১১৫ ও রেনেটা কেইন ইনজেকশন প্রতি ভায়াল এমআরপি ১০০ টাকা। কিন্তু সরবরাহ ঘাটতির কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো বেশি দামে ইনজেকশনটি বিক্রি করছেন। কোথাও ২০০ টাকা আবার কোথাও ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো যথেষ্ট কম দামে ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। এ ক্ষেত্রে দোকানিরা যদি নিজেদের মতো করে দামে বিক্রি করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। এটি ঔষধ প্রশাসনের দায়িত্ব। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের আরও সচেতন হতে হবে। ওষুধের গায়ের দাম দেখে নির্ধারিত মূল্যে ওষুধ কিনতে হবে।

এদিকে ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায়ও ওষুধের দাম বাড়ে। ১৯৯৪-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়- অত্যাবশ্যকীয় তালিকাবহির্ভূত ওষুধের দাম নিজ নিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। ২৪ বছর আগের সেই নির্দেশনা বলে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায় কোম্পানিগুলো। অথচ ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে যে কোনো ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের ছিল।

এদিকে ১১৭টি ওষুধ সরকারের কাছে রেখে বাকি ওষুধগুলোর মূল্য নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো- এমন প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সোমবার হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি জানান, দ্য ড্রাগস (কন্ট্রোল) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ মতে, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার। যেখানে মাত্র ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ সরকারের কাছে রাখে। বাকি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। এটা তো আইনের ব্যত্যয়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.