Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

দালালের খপ্পরে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার কথা বলে এখন ভানুয়াতু দ্বীপে ১০১ জন বাংলাদেশি







ভালো বেতনের প্রলোভনে ভাগ্য বদলের আশায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশ ভানুয়াতু গিয়ে এখন গভীর অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন ১০১ জন বাংলাদেশি।

তাদের পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার বাংলাদেশিকে গত নভেম্বরে গ্রেপ্তার করেছে ভানুয়াতু সরকার, যাদের মধ্যে দুজন সেখানে মিস্টার প্রাইস নামে একটি গৃহস্থালী ও আসবাবপত্রের কোম্পানি চালাতেন।



রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বাংলাদেশিরা ভানুয়াতু গেছেন গত দুই বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে। তাদের মধ্যে অন্তত দুজনের বয়স ১৮ বছরের কম। আপাতত তাদের রাখা হয়েছে পোর্ট ভিলার তিনটি বাড়িতে, খাবার যোগাচ্ছে ভানুয়াতু সরকার।

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএমের হয়ে ভানুয়াতু হিউম্যান রাইটস কোয়ালিশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই বাংলাদেশিদের সহায়তা দিচ্ছে।



বাংলাদেশের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, আটকা পড়া ওই বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য ভানুয়াতু সরকার ও আইওএমের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন তারা। কিন্তু এখনও কোনো সাড়া মেলেনি।

আর ভানুয়াতুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এন্ড্রু সলোমন ন্যাপুয়াট টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেছেন, কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তারা আদালতের সিদ্ধান্ত জেনে নিতে চান।

ফলে ততদিন পর্যন্ত ওই ১০১ বাংলাদেশিকে ভানুয়াতু সরকারের দেওয়া খাবার আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সঙ্গে নিয়ে সেখানেই দিন কাটাতে হবে, কেননা ওই মানবপাচার মামলায় তাদের সবাইকে সাক্ষী করা হয়েছে। অথচ সেখানে তাদের কাজের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না।



মিস্টার প্রাইসের দুই মালিকসহ চার বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মানবপাচারের যে মামলা হয়েছে, তা আদালতে উঠবে আগামী মাসে।

হারুন অর রশিদ নামে আটকা পড়া একজন রয়টার্সকে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা হবে এই আশ্বাসে তিনি আত্মীয়-স্বজন আর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভানুয়াতু এসেছিলেন। এখন দেশে ফিরে যেতে হলে সেই ঋণ শোধ করার কোনো উপায় তার জানা নেই।

“আমরা যদি এখানে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাই, কোনো কাজ আমরা পাব না। আবার দেশে ফিরে গেলে কী হবে, সেটাও ভাবতে পারছি না।”

আটকা পড়া এই বাংলাদেশিরা বলেছেন, ভানুয়াতু অথবা অস্ট্রেলিয়ায় দোকানের সেলসম্যানের চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল তাদের। আর সেজন্য জমি বিক্রি করে বা ঋণ নিয়ে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দালালের হাতে দিয়েছেন কেউ কেউ।



কিন্তু ভানুয়াতু পৌঁছানোর পর তাদের মিস্টার প্রাইসের একটি সুপার মার্কেট নির্মাণের কাজে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়েছে। যে বেতন দেওয়ার কথা ছিল, তা তো জোটেইনি, বরং প্রশ্ন তুললে কপালে জুটেছে পিটুনি।

হারুন অর রশিদ বলেন, “আমাদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছে। আসলে আমরা কোনো পথ দেখতে পাচ্ছিলাম না।”

দালালের খপ্পরে

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আটকা পড়া ওই বাংলাদেশিদের বেশিরভাগের বাড়ি টাঙ্গাইল ও বরিশালে। প্রথমে ভারতে নিয়ে সেখান থেকে সিঙ্গাপুর ও ফিজি হয়ে তাদের পাচার করা হয়েছে ভানুয়াতুতে।



হারুন অর রশিদের পরিবার গতবছর টাঙ্গাইলে মামলা করার পর বাংলাদেশের পুলিশ এক দালালকে গ্রেপ্তারও করেছে।

আটকা পড়া এক বাংলাদেশি রয়টার্সকে বলেছেন, টাঙ্গাইলে তিনি একটি গার্মেন্ট কারখানার মালিক ছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল, ভানুয়াতুতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি মার্কেটে তার পোশাক রপ্তানি করার ভালো সুযোগ আছে। সেই কথা শুনে ভানুয়াতু গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি আসলে ফাঁদে পড়েছেন।

“এদের সবই লোক দেখানো। কতগুলো ঘর তুলে ওরা সেটাকে মার্কেট বলছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার করে আনা লোক দিয়েই তারা ওই মার্কেট বানিয়েছে। ওদের পাল্লায় পড়ে আমি সব হারিয়েছি। দেশে আমার গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।”

ভানুয়াতুর পত্রিকা ডেইলি পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিস্টার প্রাইসে এই বাংলাদেশিদের দিনে দুই বেলা খাবার দেওয়া হত, সকালে কোনো নাস্তা দেওয়া হত না। খাবার হিসেবে কখনও থাকত শুধু ভাত আর লবণ, কখনও তার সঙ্গে বাঁধাকপির ঝোল। তার বিনিময়ে খাটতে হত দিনে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা।

তাদের ওই দাসত্বের জীবনের আপাত অবসান ঘটে গত নভেম্বরে, যখন তিনজন পালিয়ে গিয়ে থানায় খবর দেন। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়েই ভানুয়াতুর পুলিশ মিস্টার প্রাইসের মালিক সেকদা সুমন আর তার স্ত্রী বুজো নাবিলা বিবিকে গ্রেপ্তার করে।

ভানুয়াতু হিউম্যান রাইটস কোয়ালিশনের প্রধান অ্যান পাকোয়া রয়টার্সকে বলেছেন, পাচারের শিকার হওয়া ওই বাংলাদেশিদের সেখনে চিকিৎসারও কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। তারা সবাই এখন প্রচণ্ড হতাশার মধ্যে রয়েছেন।

ভানুয়াতুতে বাংলাদেশের কোনো মিশন নেই। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনই ভানুয়াতুর বিষয়গুলো দেখভাল করে। গত নভেম্বরে আইওএমের মাধ্যমে তারা ওই ১০১ বাংলাদেশির খবর পান।

কিন্তু তাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আইওএমের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে হাই কমিশনের একজন মুখপাত্র টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে জানিয়েছেন।
সূত্র: বিডিনিউজ














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.