Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বিমানের কার্গো শাখায় ৪১২ কোটি টাকা গচ্ছা : বেশি লোপাট হয়েছে লন্ডনে







বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো শাখায় ৪১২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি লোপাটের ঘটনা ঘটেছে লন্ডনে। অসাধু কর্মকর্তা এবং বিমানের সিন্ডিকেটের যোগসাজসে লন্ডনের একটি কার্গো প্রতিষ্ঠান লন্ডন থেকে সিলেটে কার্গো নিয়ে সেখান থেকে সড়ক পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মালামাল পৌঁছে দিতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্য। আর অতি লাভের আশায় লন্ডনে এসে রীতিমতো কার্গো ব্যবসায় নেমে যান বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজাররা।



কার্গো শাখায় নন-সিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ইনবাউন্ড-আউটবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ ৭৬ কোটি টাকা লুটপাট হওয়ার পর মন্ত্রণালয় ঘটিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রথম দফায় ৭৬ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনাটি বিমানের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে যে প্রতিবেদন দেয় তাতে বলা হয়, এ পর্যন্ত কার্গো শাখায় ৪১২ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে।



বিমানের অডিট বিভাগের এক কর্মকর্তার মতে, ১০ বছরে উল্লেখিত খাত থেকে ৭২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু সব তথ্য না থাকায় মাত্র ৪১২ কোটি টাকা প্রমাণ করা গেছে। নন-সিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ইনবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক নন-সিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ‘স্লেভ রেট’ ভিত্তিতে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায় করা হয়। যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নন-সিডিউল ফ্রেইটারের বহনকৃত ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিং বাবদ কোনো চার্জ বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়নি।



নন-সিডিউল ফ্রেইটারের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের অর্থ কোষাগারে জমা না হওয়ার বিষয়টি বিমান কার্গো কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ চার্জ বিমানের কোষাগারে জমা হতে শুরু করে। পরে নিরীক্ষা তদন্তে ধরা পড়ে যে, ২০০৮ সালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কন্ট্রাক্ট শাখার টেলেক্সের মাধ্যমে জি-৯ এয়ারলাইন্সের ফ্রেইটারের ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায়ের স্লেভ রেটভিত্তিক একটি তালিকা চট্টগ্রাম স্টেশন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি একই রেটে নন-সিডিউল ফ্রেইটার থেকে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায়ের জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কন্ট্রাক শাখা থেকে ই-মেইল করা হয়। যার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নন-সিডিউল ফ্রেইটার থেকে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায় করছে।



তদন্তে দেখা গেছে, নন-সিডিউল ফ্রেইটার সিল্ক ওয়ে ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নং-ইউ৩ ৭২২৫ (২৪ নভেম্বর ২০১৭)-এর মাধ্যমে বহনকৃত ১৬ হাজার ৬৮৪ কেজি কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ দুই লাখ ৩৩ হাজার ৫২৯ টাকা (পেমেন্ট রিসিট নং-১৫১৫৪৮), ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে সিল্ক ওয়ে ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নং-ইউ৩ ৭২২৫ (১ ডিসেম্বর ২০১৭)-এর মাধ্যমে বহনকৃত ১৮ হাজার ১০৭ কেজি কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৫ টাকা (পেমেন্ট রিসিট নং-১৫২৭৪৮) আদায় করেছে বিমান।



তবে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত নন-সিডিউল ফ্রেইটারে বহন করা ইনবাউন্ড ৫ কোটি ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৭০ কেজি এবং আউটবাউন্ড ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৮ কেজি মালামালের হ্যান্ডলিং করে এসব কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ বিমানের আয় হওয়ার কথা ছিল ৯০ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৮ ডলার (প্রায় ৭৬ কোটি টাকা) যা আদায় করা হয়নি।

তবে এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, সার্কুলার না থাকার কারণে প্রথমে চার্জ আদায় হয়নি। পরে এ বিষয়ে সার্কুলার জারির পর থেকে চার্জ আদায় শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে পুরনো যেসব চার্জ আদায় করা হয়নি সে চার্জও বকেয়া হিসেবে পরে আদায় করা হয়। কাজেই এই টাকা লোপাট বলে ধরা সঠিক হবে না।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিমানের আন্তর্জাতিক স্টেশনগুলোতে কার্গো পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে বেশি হরিলুটের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে লন্ডন, জেদ্দা, দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর স্টেশনের অবস্থা ভয়াবহ। প্রধান কার্যালয়ের কার্গো শাখা, মার্কেটিং বিভাগ ও শীর্ষ পর্যায়ের একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশে স্টেশন ম্যানেজার, কান্ট্রি ম্যানেজার ও স্থানীয় জিএসএর (জেনারেল সেলস এজেন্ট) কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে যুক্ত পরিচালনা পর্ষদেরও দু-একজন অসাধু পরিচালক।

অভিযোগ আছে কার্গো শাখার এ বাণিজ্য এতটাই লাভজনক যে, বিমানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব স্টেশনে গিয়ে আর ফেরত আসছেন না। অনেকে নিজেরাই কার্গো বাণিজ্য শুরু করেছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক টিম অনুসন্ধান শেষে বিমানের দুর্নীতি সংক্রান্ত রিপোর্টে বলেছে, আন্তর্জাতিক অফিসগুলোতে বিমানের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত কার্গো সার্ভিস। কিন্তু এ খাতে বিমানের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে।

আমদানি ও রফতানি পণ্যের ওজন ও ভলিয়ম কম দেখিয়ে বেশি কার্গো বিমানে উঠানো হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কার্গো চার্জ নেয়া হচ্ছে। এ খাতের লাখ লাখ টাকা বিমানে জমা না দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দেখা গেছে, বিমানের লন্ডন অফিসে কার্গো নিয়ে সবচেয়ে বেশি লোপাট হয়েছে। লুটপাট চালাতে দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে কোনো কার্গো জিএসএস নিয়োগ দেয়া হয়নি। নামসর্বস্ব পছন্দের একটি ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে কার্গো পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। আর ওই এজেন্টকে নানা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি কমিশন বাণিজ্য করে সিন্ডিকেট।

জানা গেছে, সিন্ডিকেট লন্ডন রুটে জেএমজি নামের এ ট্রাভেল এজেন্টকে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই জেএমজির কারণে লন্ডনে বিমানের অফিসিয়াল কার্গো এজেন্ট গ্লোবাল এয়ারও টিকতে পারেনি বেশিদিন। একপর্যায়ে গ্লোবাল এয়ারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাদের বাদ দেয়া হয়। অথচ বিমানের অন্যান্য স্টেশনে বছরের পর বছর নবায়ন করে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে কার্গো জিএসএর মেয়াদ। অভিযোগ আছে, লন্ডনে একটি কার্গো এজেন্টের অলিখিত পার্টনার ছিলেন স্থানীয় অফিসের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম ও আতিকুর রহমান চিশতী। এদের মধ্যে শফিকুল ইসলামকে সম্প্রতি ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। আর চিশতীকে চাকরিচ্যুত করার পর ফের চাকরি দিলেও তিনি এখন চাকরি ছেড়ে লন্ডনে কার্গো ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন।

লন্ডনের ঐ কার্গো এজেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সিলেট কাস্টমস অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাকে অবৈধ সুযোগ দিয়ে সিলেট থেকে পণ্য খালাস করছে। পরে সেই মাল সড়ক পথে ঢাকায় পাঠাচ্ছে। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে তারা যাত্রীর নামে কমার্শিয়াল পণ্য পাঠাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি বিমানে কার্গো পণ্য পাঠানো ওপেন থাকত আর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১০-১২টি এজেন্সির মাধ্যমে পণ্য পাঠানোর সুযোগ পেত। সেক্ষেত্রে বিমান সংস্থা ও কাস্টমসের এ লোকসান হতো না।

শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তিনি বিমানের যুক্তরাজ্যের কান্ট্রি ম্যানেজার থাকা অবস্থায় ২ হাজার ৪৭২টি বিনামূল্যের টিকিট ইস্যু করেন তিনি। এসব টিকিটের মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। আর এ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, স্থানীয় একটি ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশে শফিক এই টাকা লোপাট করে। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ট্রাভেল এজেন্টের কাছে টিকিট দেয়ার আগে তাদের কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হয়। কিন্তু শফিকুল আলম ঐ ট্রেভেল এজেন্টের কাছ থেকে কখনই ব্যাংক গ্যারান্টি নিতেন না। এছাড়া যেসব এজেন্টের কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি নিতেন তাদের কাছেও গ্যারান্টির সীমার বাইরে টিকিট দেয়া নিষেধ ছিল। কিন্তু তারপরও শফিকুল ইসলাম নিজের ব্যক্তিগত লাভের জন্য তার পছন্দের এজেন্টগুলোকে ব্যাংক গ্যারান্টির সীমার বাইরে টিকিট দিতেন। এসব অভিযোগে সম্প্রতি শফিকুল ইসলাম ওএসডি করা হয়।

বিমানের একটি সূত্র জানায়, ডিজিএম শফিকুল ইসলাম চার বছর বিমানের যুক্তরাজ্যের কান্ট্রি ম্যানেজার ছিলেন। গত চার বছরে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই টাকা দিয়ে লন্ডনে কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। শুরু করেছেন ব্যবসা। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন। যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় তিনি সেখান থেকে ২ হাজার ৪৭২টি বিনামূল্যের টিকিট ইস্যু করেন। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসের টিকিট ছিল ১ হাজার ১৩৬টি আর ইকোনমি ক্লাসের ছিল ১ হাজার ৩৩৬টি। এর মধ্যে মহিলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এসব টিকিটের মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
-সৌজন্যে যুগান্তর

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.