Beanibazarview24.com
সিলেটের হাজারো যুবক ও তরুণ স্বপ্নের দেশ ইউরোপে পাড়ি জমাতে ট্রানজিট রুট লিবিয়া-তুরস্কের পথ ধরেছে। কাজের স’ন্ধানে ও জী’বিকার তাগিদে মৃ’ত্যুর সমূহ ঝুঁ’কি নিয়ে কম শিক্ষিতরা ইউরোপে যাচ্ছেন।
ইউরোপে গিয়ে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণ দেখিয়ে আশ্র’য় চাওয়া লোকের সংখ্যাও কম নয়। জীবিকার তাগিদে জী’বন-মৃ’ত্যুর ঝুঁ’কি নিয়ে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালিতে পাড়ি দিচ্ছেন তারা।
রাজধানী ঢাকা থেকে লিবিয়া, এরপর ইউরোপের দেশ ইতালি পৌঁছানোর প্রলো’ভন দেখিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সিলেটের একটি আদ’ম পা’চারকারী চ’ক্র। গত এক বছর লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে ট্রলার ডু’বিতে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের দুই শতাধিক তরুণের প্রাণহা’নির ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি লিবিয়ার উপকূল ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ১২০ জন অভিবাসীর মধ্যে নি’খোঁ’জ রয়েছে ১১৭ জন। নৌকাডুবির ঘটনায় গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখার একাধিক তরুণ, যুবক নি’খোঁজ রয়েছেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তাদের পরিবারে চলছে এখন আ’হাজারি।
লিবিয়া উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারে করে যাওয়ার পথে যারা মা’রা যান। তাদের মধ্যে কয়েকজন যুবক হলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার খাসা গ্রামের ইমরান হোসেন, ফতেহপুর গ্রামের হুমায়ুন রশিদ ইমন, চারখাইয়ের এক মাদরাসা ছাত্র, গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণের সাকের এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখার চান্দগ্রামের ফারুক হোসেন।
ভূমধ্যসাগরে উ’দ্ধার হওয়া শর’ণার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে লিবিয়া বা তুরস্ক যেতে একজনকে ১০ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দিতে হয়। একটি এজেন্সি’ তাদের লিবিয়া পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেয়। ওয়ার্কিং ভিসার জন্য এজেন্সিকে তিন থেকে চার হাজার ডলার দিতে হয় বলেও জানিয়েছেন তারা। অনেক বাংলাদেশী দীর্ঘ দিন লিবিয়াতে বাস করার পর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন এবং সরাসরি ইউরোপে প্রবেশের চে’ষ্টা করেন।
আইওএম-র তথ্যানুসারে, একজন বাংলাদেশী অভিবাসীকে লিবিয়া যেতে ১০ হাজার ডলার এবং ইউরোপে যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার জন্য নৌকা খরচ দিতে হয় ৭০০ ডলার। নি’র্যাতন, তিনবার দা’স হিসেবে বি’ক্রি হওয়া, এবং নিজ আ’ত্মীয়কে ম’রতে দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন খালিদ হোসেন। অথচ স্বপ্ন দেখেছিলেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। মনে করেছিলেন, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানো সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সূত্র জানায়, উঠতি বয়সী যুবক ও কলেজপড়–য়া তরুণদের টা’র্গেট করেই দা’লাল চ’ক্রটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রলো’ভন দেখানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের দেখানো হয় নানা লো’ভ-লা’লসা। মোটা অংকের টাকার চু’ক্তির মাধ্যমে প্রথমে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর শুরু হয় এসব যুবক ও তরুণদের ওপর অমা’নুষি’ক নি’র্যা’তন। তাদের কৌশলে অপহ’রণ করে পরে আ’দায় করা হয় মোটা অংকের টাকা।
খালেদ হোসেন দক্ষিণ এশিয়ার আরো অনেক তরুণের মতো লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই তিনি একদিন হাজির হন লিবিয়ার সমুদ্র উপকূলে। সমুদ্র পাড় হলেই ইতালি। তাই আশায় বুক বাঁধেন তিনি, উঠে বসেন একটি নৌকায়। হোসেনের কথায়, ‘আমি উ’দ্দীপ্ত ছিলাম এটা ভেবে যে, কয়েক ঘণ্টা পরেই ইতালি পৌঁছাব। ভেবেছিলাম, আমার পরিবারের সব আর্থিক সম’স্যা তখন মিটে যাবে। প’ঙ্গু বাবার কাছে প্রমাণ করব আমি ফেলনা নই।’
কিন্তু খালেদের স্বপ্ন দুঃসপ্নে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। ছোট্ট নৌকায় তার সাথে শতাধিক যাত্রী উঠেছিলেন। তাদের মধ্যে আফ্রিকার অনেক মানুষ ছিলেন, ছিলেন হোসেনের নিজের এলাকা বিয়ানীবাজারের বেশ কয়েকজনও। ৩০ ফুট লম্বা প্লাস্টিকের নৌকাটি ইতালির উদ্দেশে মাত্র ঘণ্টা তিনেক চলার পর ভে’ঙে যায়।
ইতালিতে আশ্রয় নেয়া যুবক নাহিদ এই যাত্রার একটি অংশের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- ‘উত্তাল সমুদ্রে ভাসছে নৌকা। প্রব’ল ঢে’উয়ের তোড়ে নৌকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। নৌকা ঘিরে চ’ক্কর দিচ্ছে হা’ঙ্গর ও ডল’ফিন। নৌকা ডুবলেই মানুষগুলোকে গিলে খাবে হা’ঙ্গার! ভাগ্য বদলের আশায় লিবিয়ার জো’য়ারা উপকূল থেকে সাগরে ভাসছেন বাংলাদেশের রবিউলসহ ৮০ জন। গন্ত’ব্য ইউরোপ। কিন্তু ইউরোপ নয় মৃ’ত্যু এখন তাদের খুব কাছে। ডু’বছে নৌকা, সেই নৌকায় সোমালিয়া, ক্যামেরুনের কালো চা’মড়ার মানুষের ভিড়ে থাকা রবিউলদের কা’ন্না কি কেউ শু’নতে পায়? আব্দুছ ছামাদ জুনেদ নামে আরো একজন জানান, মু’হূর্তের মধ্যে নৌকায় আত’ঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ সাগরের পানিতে ঝাঁ’পিয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার নৌকার পা’টাতনে থাকা পেট্রোলের প্লাস্টিকের ক্যা’নগুলো খালি করতে শুরু করেন। আশা সেগুলোতে ভেসে জী’বন বাঁচাবেন।
এই হু’ড়াহু’ড়িতে চোখের সামনেই মা’রা যান এক বাংলাদেশী। খালেদ হোসেনের মতো এমন অবস্থা আরো অনেকের হয়েছে। যদিও দা’লালরা সেসব ঘটনা চে’পে গিয়ে বরং দুয়েকটি সাফল্যের গল্প শুনিয়ে বাংলাদেশী তরুণদের এমন ক’ঠিন যাত্রায় উদ্বু’দ্ধ করে। শুধুমাত্র খালেদের এলাকা বিয়ানীবাজার থেকেই গত এক বছরে হাজারখানেক তরুণ এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর গোটা বাংলাদেশের হিসেব করলে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জীবি’কার জন্য কেউ জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে কোথাও পাড়ি না জমানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রশাসন মানবপা’চার চ’ক্রের ব্যাপারে সজা’গ ও সত’র্ক। কোনো তথ্য পেলেই আ’ইনশৃঙ্খলা বা’হিনী অ’ভিযান চালায়।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.