Beanibazarview24.com
হাফিজ আব্দুল জলিল । প্রতি সপ্তাহের মতোই ৫ই এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে । চার রাকাত সুন্নাত নামাজ শেষ করে যখন খুতবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখনই মৃত্যুদূত এসে জানান দেন পরপারে নিয়ে যাওয়ার । মৃদু অসুস্থতাবোধ করেন শরীরে । একসময় বসা থেকে ফ্লোরে পড়েন যান । সাথে সাথে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন মুসল্লিরা ।
মিম্বর থেকে এগিয়ে আসেন মসজিদের প্রধান ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলামও । তাঁকে শাহাদাহ শোনাতে শুরু করেন । তিনিও শাহাদাহ পড়তে থাকেন। অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে । অর্থাৎ মৃত্যুদূত তাঁকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি তরান্বিত করতে থাকেন । এদিকে মসজিদ থেকে অ্যাম্বুলেন্স কল করা হয় । কিছুক্ষনের মধ্যেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রয়েল লন্ডন হাসপাতালে । ঘণ্টা খানের মধ্যেই তিনি যেখানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
এক শুক্রবার থেকে আরেক শুক্রবার । সাত দিনের মাথায় তিনি ফিরে আসছেন তাঁর প্রিয় স্থান ব্রিকলেন জামে মসজিদে । তবে প্রাণ নিয়ে নয়, প্রাণহীন দেহে । গত শুক্রবার তিনি এসেছিলেন জুমার ফরজ নামাজ আদায় করতে । আর ১২ এপ্রিল শুক্রবার আসছেন জানাজার বিষয়-বস্তু হয়ে । অর্থাৎ তাঁকে সামনে রেখে মানুষ জানাজার নামাজ পড়বে।
বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে হাফিজ আব্দুল জলিল এর মেয়ে মনিরা বেগম সাপ্তাহিক দেশকে জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে তাঁর বাবার মরদেহ ব্রিকলেন ফিউনারেল সার্ভিস গ্রহণ করেছে । তারা মৃতের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করছেন । ১২ এপ্রিল শুক্রবার নামাজে জানাজা শেষে পূর্ব লন্ডনের হেইনুল্ড গার্ডেন অব পিস গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে ।
মনিরা আরো জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর বাবার ময়না তদন্ত করতে চাইলেও তাঁরা তা করতে দেননি । তাঁরা চাননি তাঁদের পিতার মরদেহ কাটাছেরা করা হোক । তাই ময়না তদন্তের পরিবর্তে সাড়ে ৪শ পাউণ্ড দিয়ে সেন্ট্রাল লন্ডনের হোয়াইটটিংটন হাসপাতালে স্ক্যান করিয়েছেন । তিনি পরিবারের পক্ষে তাঁর বাবার রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করেছেন । তার বাবার কথাবার্তায় কেউ কখনো মনোকষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিতেও অনুরোধ করেছেন।
উল্লেখ্য, পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন টুরিন স্ট্রিটের বাসিন্দা হাফিজ আব্দুল জলিল গত ৫ এপ্রিল শুক্রবার ব্রিকলেন জামে মসজিদে জুমার নামাজের সময় আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর বেলা পৌনে ৩টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর । তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে, ২ মেয়ে, বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ৬ এপ্রিল শনিবার তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ব্রিকলেন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলাম সাপ্তাহিক দেশকে জানান, হাফিজ আব্দুল জলিল আমাদের মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি ছিলেন । শুক্রবার জুমার নামাজের সময় তিনি ব্রিকলেন মসজিদের মূল হলে খানিকটা পেছনের দিকে নামাজ পড়ছিলেন। সুন্নাত নামাজ শেষে খুতবা শুরু হওয়ার দুই মিনিট আগে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন খুতবার আজান বিলম্বিত করে তিনি অসুস্থ হাফিজ আব্দুল জলিল এর কাছে এগিয়ে যান । এসময় অন্যান্য মুসল্লিরা হাফিজ আব্দুল জলিলকে চারদিক থেকে ঘিরে দাঁড়ান । সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ভেতরে কোনো ডাক্তার থাকলে এগিয়ে আসতে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। এসময় একজন চিকিৎসক এগিয়ে আসেন এবং অসুস্থ আব্দুল জলিলকে ফার্স্ট এইড (প্রাথমিক চিকিৎসা) দেন । একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক তাঁর কাছে আব্দুল জলিল এর শারিরীক অবস্থা খুব ভালো মনে হচ্ছেনা উল্লেখ করে ইমাম নজরুল ইসলামকে শাহাদাহ শোনাতে অনুরোধ করেন । তখন ইমাম নজরুল ইসলাম তাঁকে শাহাদাহ শোনাতে শুরু করেন ।
হাফিজ আব্দুল জলিলও সাথে সাথে শাহাদাহ পড়ছিলেন । আস্তে আস্তে আল্লাহু-আল্লাহু উচ্চারণ করছিলেন । কিন্তু অবস্থা অবনতির দিকে গেলে মসজিদ থেকে অ্যাম্বুল্যান্স কল করা হয় । কিছুক্ষণের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ব্রিকলেন পৌঁছে তাঁকে হাসপাতাল নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, হাফিজ আব্দুল জলিল-এর দেশের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের উজানীপাড়া গ্রামে । তিনি ১৯৯৪ সালে বৃটেন আসেন । প্রবাস জীবনের প্রথম দিকে তিনি বেথনাল গ্রীনের স্থানীয় একটি মসজিদে কিছুদিন ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ।
শোক প্রকাশ : এদিকে হাফিজ আব্দুল জলিল এর ইন্তেকালে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী শাহবাজপুরবাসীর সংগঠন শাহবাজপুর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব মনজুর রেজা চৌধুরী, সেক্রেটারি মাওলানা মুমিনুল ইসলাম ফারুকী ও ট্রেজারার মোহাম্মদ রহিম গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
অপর এক শোকবার্তায় শাহবাজপুর ইউনিয়নের অধিবাসী (লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক) তাইসির মাহমুদ হাফিজ আব্দুল জলিল এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন । তিনি তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ।
অপর এক শোকবার্তায় ব্রিকলেন মসজিদের প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব সাজ্জাদ মিয়া ও সেক্রেটারি হেলাল উদ্দিন আলী মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। আলহাজ্ব সজ্জাদ মিয়া বলেন, হাফিজ আব্দুল জলিল ব্রিকলেন মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি ছিলেন । মসজিদের সাথে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। তিনি একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
এছাড়াও হাফিজ আব্দুল জলিল এর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তাঁর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ্ব শামসুদ্দিন, মোঃ বদরুল ইসলামসহ অনেকেই বেথনাল গ্রীনস্থ বাসায় ছুটে যান এবং শোকাহত পরিবার পরিজনকে সমবেদনা জানান ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.