Beanibazarview24.com
৭০’র প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৩১টি ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের জীবনহানি ঘটেছে সাড়ে ছ’ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে মেরিঅ্যান ও সিডর ছিলো ৫ ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়। তবে বেশিরভাগ সময়ই ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর কবল থেকে সুন্দরবনের কারণে বারবার ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা কম হয়েছে।
এই অঞ্চলে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়টি হয় ১৯৭০ সালে। এরপর ৩১টি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের উপকূল, জীবনহানি হয়েছে মানুষের, বন্য ও গবাদি পশু-পাখি, আবাদি জমি আর সুন্দরবনের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ঘূর্ণিঝড় ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ।
১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। নাম দেয়া হয়েছিল গোর্কী। ক্যাটাগরি-৩ র এই ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হন। বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ৩০ ফুট। ঝড়ে গবাদি পশু, ঘরবাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর আঘাত হানা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে দেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রায় আট হাজার মানুষ প্রাণ হারান। বাংলাদেশের ৭০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়। এছাড়া ৭০ হাজার গবাদিপশু, ১৫ হাজার হরিণ আর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়।
১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আঘাত হানা ৫ ক্যাটাগরির “ম্যারিঅ্যান” ঘূর্ণিঝড়টি ছিলো ৭০-এর গোর্কী’র পর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়। প্রায় ৬শ কিলোমিটার ব্যাসের ঘূর্ণিঝড়টি ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে বাংলাদেশে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ২০ থেকে ৩০ ফুট। প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ১০ লাখ মানুষ ঘরহারা হন। ক্ষতিগ্রস্ত হন ১ কোটি মানুষ।
১৯৯১’র পর থেকে ২০০৭ সালের মে পর্যন্ত ছোটবড় ৭টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, এর বেশিরভাগই ভারত মহাসাগরের পূর্বে হওয়ায় খুলনা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সুন্দরবনের কারণে আর ভারত হয়ে আসায় দুর্বল হয়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়গুলো। তবে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ৫ ক্যাটাগরির সিডর ২৬০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এতে আবারো লণ্ডভণ্ড হয় বাংলাদেশ। ২ হাজার ২১৭ জন নিহত হন। ঝড়ে বেড়িবাঁধ ভাঙে, ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রায় ৭০ হাজার বাড়িঘর, বিনষ্ট হয় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল।
৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের আইলা ঘূর্ণিঝড়টির গতি ছিলো সিডর থেকেও বেশি। ২০০৭-এর পর ২০০৯ সালে আইলা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমে আঘাত হানে। ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে নিহত হন ১৯৩ জন। মারা যায় ২ লাখ গবাদি পশু। ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙে। প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে এবং অস্থায়ীভাবে সাড়ে চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.