Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ঘূর্ণিঝড় ফণী: তীব্র ঝুঁকিতে বাংলাদেশ, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা







ফণীর ছোবলে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। এছাড়া উপকূলীয় এলাকাগুলোতে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও জানান তিনি। এক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সরকারি পদক্ষেপ কার্যকরের অনুরোধ জানান এই আবহাওয়াবিদ।

শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তরে দিনের সবশেষ সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সামছুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ফণী যখন বাংলাদেশ অতিক্রম করবে সেসময় ঝড়ো হাওয়া থাকবে। বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। তেমনটা হলে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপেই বাংলাদেশে আঘাত করবে ফণী। কিন্তু এটি আরো ক্ষীণ হয়ে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়েও বাংলাদেশে ঢুকতে পারে।



আবহাওয়া অধিদপ্তর ব্যাখা অনুযায়ী, ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার বাতাস হলেই তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়ে থাকে সে হিসেবে ফণীকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলছে তারা।

ফণীকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে চারটি মাত্রায় ফেলা হয়। ঘন্টায় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে তাকে ঘূর্ণিঝড়। এটি যদি ঘন্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ হলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ঘন্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ হলে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার বা তারও বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে। ফণী যেহেতু ১৪০ থেকে ১৫০ এর মধ্যে থাকতে পারে তাই তাকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ফণীর কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে এবং কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ঝুঁকিতে রয়েছে। ফণীর প্রভাবে আজ রাতে ঝড়ো হাওয়া এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জলোচ্ছ্বাস হবে। একইসঙ্গে আগামীকাল দেশের আবহাওয়া থাকবে দুযোগপূর্ণ। এর পরের দিন থেকে যা কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করবে।



বিকাল সাড়ে তিনটারি ব্রিফিংয়ে পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ফণী এরি মধ্যে উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। যা একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ঘুর্নিঝড় হিসেবে অতিক্রম করেছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অগ্রসর হতে হতে খুলনা উপকূল স্পর্শ করে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে থাকবে। এইসময়ে ঝড়ো হাওয়া হবে, জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এ কারণে আশেপাশের উপকূলীয় নয় জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। তিনি জানান, উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর সংকেতের আওতায় থাকবে।

তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অতীতে এ ধরণের সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ও শস্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই উপকূলীয় এলাকাগুলোতে যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তাদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া উচিত। তাদের নিজেদের জান-মালের স্বার্থেই।

মধ্যরাতে ফণী বাংলাদেশে পৌঁছাবে এর আগে বলা হলেও এখন কেন ছয়টা বলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকাতে দুপুরে যে বৃষ্টি হচ্ছে তা ঘুর্ণিঝড় ফণীর মেঘ থেকেই হয়েছে। ক্ষেত্র কিন্তু প্রস্তুত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অতিক্রমে কখনও ছয়ঘন্টাও লাগতে পারে আবার কখনও ১০ ঘন্টাও লাগতে পারে। আমরা কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের মধ্যেই রয়েছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছয়টার দিকে যদি কোনও ঝড়ো হাওয়া হয় তাহলে তাকেই ধরে নিতে হবে যে ধীরে ধীরে র্ঘূণিঝড়ের বলয়ের মধ্যে পরে গিয়েছি অথবা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানা শুরু করেছে কিংবা ঘুণিঝড় এসে গেছে।

এর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বজ্রপাতে ও গাছ উপড়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশে আট জন ও উড়িষ্যায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশকিছু স্থানে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাতিল করা হয়েছে অনেক ফ্লাইট ও ট্রেন সূচি।

বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর প্রদেশের চান্দাওলিতে জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে চার ব্যক্তির। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরো পাঁচ জন। একই জেলায় গাছ উপড়ে প্রাণহানি ঘটেছে এক বৃদ্ধার।

একই রাতে সোনেভারদা জেলার পান্নুগঞ্জে বজ্রপাতে মারা যান এক তরুণ। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় দুই ভাই। তাদের পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।

বলা হচ্ছে, ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী। এই ঝড়ে প্রায় ১০ হাজার গ্রাম ও ৫০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে।

ফণীর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরি। পুরিতে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ছিলো ভারী বৃষ্টি। বাতাসে উপড়ে গেছে বেশ কয়েকটি গাছ। ধ্বংস হয়ে গেছে একাধিক স্থাপনা। পুরীর জগন্নাথ মন্দির সম্পূর্ণ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।

উড়িষ্যার বিশেষ ত্রাণ কমিশনার বিষ্ণুপাডা সেঠি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতে পারবো। এর মধ্যে একজন, আশ্রয়কেন্দ্রে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা গেছেন। অপর একজন আমাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝড়ের মধ্যে বাইরে যান। সেসময় তার ওপর একটি গাছ উপড়ে পড়লে তিনি মারা যান।

এদিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে উড়িষ্যায় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটার দিকে ১৪২ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে পুরি শহরে আঘাত হানে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়।

উল্লেখ্য, ফণীর প্রভাবে উত্তর প্রদেশে বৈরি আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী দুই দিনের জন্য প্রদেশটিতে আবহাওয়া সতর্কতা জারি করেছে।.














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.