Beanibazarview24.com
গত তিন বছরে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে ৩১টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। ২০১৬ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইসলামি ধর্মীয় স্থাপনাকে আংশিকভাবেও ধ্বংস করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান এবং ওপেন সোর্স সাংবাদিকতার ওয়েবসাইট বেলিংক্যাটের কার তদন্তে এমন তথ্যই ওঠে আসে।
গবেষণায় চীনের উত্তর পশ্চিমের এই স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলটিতে উপগ্রহের ছবি ব্যবহার করে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে ৯১টি ধর্মীয় স্থাপনা পরীক্ষা করেন তারা। গবেষকরা দেখেন, ৩১টি মসজিদ এবং দু’টি প্রধান মন্দিরের কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
এই ৩৩টি ধর্মীয় স্থাপনার অর্ধেক বা পুরোপুরি অংশ ধ্বংস করা হয়েছে। আর এই অঞ্চলটির অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনাগুলোরও বিশেষ বিশেষ আকৃতিগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ আকৃতি বলতে গেটহাউস, গম্বুজ এবং মিনারেটগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে।
তদন্তে ওঠে আসে, এই অঞ্চলে নয়টি স্থাপনা মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে স্থাপনাগুলোর ধর্মীয় স্থাপনার কোনো বৈশিষ্ট্য ছিলো না। আর এই স্থাপনাগুলোও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। স্থাপনাগুলোর বিশ্লেষণ করা হয় অধিবাসীদের এবং গবেষকদের ম্যাপিং সরঞ্জাম সমন্বয় করে।
ধ্বংস করা মসজিদগুলোর মধ্যে ইউটিউয়ান আইতিকা মসজিদটি অন্যতম। এইটি চীনের সীমান্তের উত্তরে হটানের কাছে অবস্থিত। মসজিদটি ১২০০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করা হয়। এটি স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত ছিলো। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বৃহত্তম মসজিদ কারগিলিক মসজিদ এবং ইমাম আসিম কমপ্লেক্সও ধ্বংস করা হয়।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশটিতে তুর্কিক উইগুরসহ অনেক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বসবাস করে। উইগুরদের সাথে অন্যান্য তুর্কী মুসলিম গোষ্ঠীগুলো অত্যাচারের শিকার হচ্ছে বলে এই তদন্তে ওঠে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের পরিসংখ্যান অনুসারে, আট লাখ এবং দুই মিলয়ন মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিবাসিগণ চীনের শিক্ষা শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে। বলা হয়, ওই শিবিরগুলোতে তাদের শিক্ষার নামে নির্মম অত্যাচার করা হয়।
তবে বেইজিং বলেছে, সন্ত্রাসবাদকে মোকাবেলা করার জন্য ওই শিবিরে তাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষা শিবিরগুলোর ব্যাপকভাবে সমালোচনা করছে বিশ্ববাসী।
এর আগেও এই অঞ্চলটিতে গণনার নামে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে ধ্বংস এবং মুসলিম সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার অভিযোগ ওঠে। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসবিদ রিয়ান থুম জানান, ইমাম আসিমের ধ্বংসের ছবিগুলো হতাশাদায়ক। আর নিবেদিত তীর্থযাত্রীদের জন্য এটি আরো মর্মঘাতী।
থুম আরো জানান, চীনা কর্তৃপক্ষ চায় উইঘুরদের সংস্কৃতি ধ্বংস করতে এবং তাদের নিজেদের জমি থেকে তাদের উৎখাত করতে। তবে বেইজিং এই দাবি অস্বীকার করেছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা দেশটির একটি স্তম্ভ হিসেবেই রয়ে গেছে বলে দাবি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালযয়ের।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গিয়ং শুয়াং জানান, চীন সবসময় ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সাধুবাদ জানায়। তবে ধর্মীয় চরমপন্থীদের দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে।
গিয়ং আরো বলেন, চীনের ২০ মিলিয়নেরও বেশি মুসলমান এবং ৩৫ হাজারেরও বেশি মসজিদ রয়েছে। দেশের আইন অনুসারে অধিকাংশই ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপে অবাধে যোগ দিতে পারে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.