Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সিলেটের শিবির নেতা রাজ্জাক বিদেশে জেল খাটছেন ব্যাংকার বিয়ানীবাজারের রাজ্জাক







সিলেট মহানগর শিবিরের সাবেক নেতা আব্দুর রাজ্জাকের মাথায় অন্তত ৩৭টি মামলা। কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের হয় মহানগরী এলাকার বিভিন্ন থানায়। একপর্যায়ে আব্দুর রাজ্জাক পাড়ি জমান বিদেশে। ৩৭টি মামলায়ই তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। পরোয়ানা তামিল করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় আব্দুর রাজ্জাককে! গত বছরের ১২ই ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় ইসলামী ব্যাংকের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শাখা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই শাখার কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে।



এর পর থেকে জেল খাটছেন রাজ্জাক। কিন্তু ব্যাংকার আব্দুর রাজ্জাকের অপরাধ কী তার কিছুই জানে না পরিবার। তার বন্ধু এবং স্বজনরাও বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র রাজ্জাক নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। পড়াশোনা শেষে কয়েকটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে যোগ দিয়েছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। এ ব্যাংক ছেড়ে পরে যোগ দেন ইসলামী ব্যাংকে। কি কারণে তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা এবং পরোয়ানা! এর কিছুই জানা নেই কারও।

মানবজমিন-এর কয়েক দিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে সিলেট মহানগর শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের দায়িত্ব পালনের সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। ওইসব মামলায় তাকে শিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আব্দুর রাজ্জাক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর এখন মালয়েশিয়ায় আছেন। তার নামে করা মামলায় অন্য আব্দুর রাজ্জাক জেল খাটছেন এমনটি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গ্রেপ্তার আব্দুর রাজ্জাক কখনও শিবিরের কোন দায়িত্বে ছিলেন না। রাজ্জাকের বাড়ি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তর আকাখাজনা গ্রামে। তার বাবা মৃত আব্দুল মোক্তাদির। আর সাবেক শিবির নেতা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দনা গ্রামে।



মামলাগুলো ইস্যুকালীন সময়ে ওই একই নামে তৎকালীন সিলেট মহানগর ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী/সভাপতি ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো মামলাতেই পিতার নাম ও ঠিকানা অজ্ঞাত রেখে দলীয় সভাপতি/ সেক্রেটারী পরিচয়ে মামলা করা হয়। কিন্তু চার্জশিট দাখিলের সময় ব্যাংকার আব্দুর রাজ্জাকের পিতার নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে দাখিল করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াত-শিবিরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা যায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহপরান হলে থাকায় এবং দূর্ভাগ্যজনকভাবে দু’জনের একই নাম হওয়ায় এই বড় রকমের তথ্য-বিভ্রাটের ফাঁদে পড়েন ব্যাংকার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ইসলামী ব্যাংকের নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) শাখায় জেনারেল ব্যাংকিং বিভাগে এ্যাসিসট্যান্ট অফিসার (জেনারেল) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।



রাজ্জাক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ) ইংরেজী বিভাগে (২০১৪) সম্মান/ মাস্টার্স শেষ করেন। গত ডিসেম্বরের শুরুতে পূবালী ব্যাংক (ক্যাশ) থেকে ইসলামী ব্যাংকে (জিবি) চাকুরী পরিবর্তন করেন রাজ্জাক। এর আগেও সিলেটের একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে (স্টার লাইট কলেজ, সিলেট কমার্স কলেজ, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ) ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ব্যাংকার আব্দুর রাজ্জাকের বয়স যখন দশ বছর তখন তার বাবার সঙ্গে তার মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ওই সংসারে তার এক বড় ভাই ও বোন রয়েছেন। তারা দুজনেই এখন লন্ডন প্রবাসী। তার বাবা পরে আবার বিয়ে করেন। গত তিন বছর আগে আব্দুর রাজ্জাকের বাবা মারা যান।

সাবেক শিবির নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ভাই ফার্মাসিস্ট বেলাল হোসেন মুঠোফোনে মানবজমিনকে জানান, আমার ভাই দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি করেছে। ছাত্রজীবন থেকেই সে রাজনীতি করতো। বর্তমানে সে দেশের বাইরে রয়েছে। তার ভাইয়ের মামলায় অন্য আরেকজন জেলে এই বিষয়ে কিছু জানেন কিনা এমন প্রশ্নে বেলাল হোসেন বলেন, আমি এই বিষয়ে কোন কিছুই জানি না। বা কখনো এমন কিছু শুনিও নাই।



আব্দুর রাজ্জাকের মামলাগুলো লড়ছেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী। আর এই মামলাগুলো জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। আব্দুর রাজ্জাকের সবচেয়ে বেশি মামলা লড়ছেন এডভোকেট আব্দুর রব। তার কাছে রয়েছে রাজ্জাকের ২৫টির মতো মামলা। গতকাল তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমার কাছে আব্দুর রাজ্জাকের বেশ কিছু মামলা রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুত বাকিগুলোতেও জামিন পাবেন।

সিলেটের বেশ কয়েকটি থানায় শিবিরের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের নামে মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলো সবগুলোই এখন ব্যাংকার আব্দুর রাজ্জাকের নামে ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে শাহপরান থানায় মামলা হয়েছে ২০টি। এ বিষয়ে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমাদের থানায় আব্দুর রাজ্জাকের নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আমি যতদুর জানি সে সিলেট মহানগর শিবিরের সভাপতি ছিল।

বিয়ানীবাজার উপজেলার আকাখাজনা গ্রামের প্রাবাসী দেলোয়ার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমার থেকে ১০ বছরের ছোট আব্দুর রাজ্জাক। আমাদের চোখের সামনেই সে বড় হয়েছে। আমি কখনো শুনি নাই যে, সে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। শুধু গ্রামে নয় আমাদের পুরো ইউনিয়নে তার একটা সুনাম রয়েছে। আর এই ভাল ছেলেটাই আজ বিনা দোষে জেলের ঘানি টানছে। ব্যাংকার রাজ্জাকের বোন বলেন, আমার ভাই কখনো রাজনীতি করতেন না। উনি সাধারণ একজন মানুষ। তার কারো সঙ্গে কোন শত্রুতা নাই। কেন তাকে জেলে নেয়া হয়ছে আমরা কিছুই জানি না। মামলার জামিনের বিষয়ে কে বা কারা কাজ করছে এমন প্রশ্নে রাজ্জাকের বোন বলেন, ভাই গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েকদিন পরেই আমাদের সঙ্গে কয়েকজন লোক দেখা করে বলে তারা এই জামিনের কার্যক্রম চালাবে। পরে জানতে পারি তারা নাকি জামায়াতের লোক।

স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক হাসানুল বান্না জানান, ব্যাংকার রাজ্জাক যখন শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখন থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি কখনো দেখি নাই বা শুনিও নাই যে তিনি কোন রাজনীতি করেন। তিনি একজন সাধারণ মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত ছিলেন রাজ্জাক। আর সেই ব্যাক্তিটাই এখন বিনা দোষে জেলের ঘানি টানছে। ব্যাপারটি সত্যিই কষ্টের।

এদিকে সিলেট মাহনগর জামায়াত ও ইসলামী শিবিরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের উপস্থিতির ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে কারাগারে থাকা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তার কোন মিল নেই। ব্যাংকার রাজ্জাক দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

বিষটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তার জানা নেই। আর শিবির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের মামলায় ব্যাংকার রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে থাকলে এটি পুলিশের ভুল।
সূত্রঃ মানবজমিন

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.