Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ইউরোপের মুসলিম নারীদের মুখে হিজাব বিড়ম্বনার গল্প








মমিনুল ইসলাম: সম্প্রতি ফ্রান্সের ৩০টি শহরের সৈকতে নিষিদ্ধ করা হয় আপাদমস্তক ঢাকা সাঁতারের পোশাক বুরকিনি। এ বিতর্কের ঘটনার যারা শিকার তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে নিউইয়র্ক টাইমস। ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও অন্যান্য দেশ থেকে সহস্রাধিক মন্তব্য সংগ্রহ করেছে পত্রিকাটি। তবে সাঁতারের পোশাক নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার চেয়েও গভীর উদ্বেগ উঠে এসেছে এসব ভুক্তভোগীদের মন্তব্য থেকে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন অনেক মসুলিম নারী রয়েছেন, যারা ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করে বড় হয়েছেন। বর্তমানে হয়ত তারা পেশাগত বা অন্য কারণে বাইরে রয়েছেন। আর দেশে ফেরত যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।



প্যারিসের উপকণ্ঠ প্যান্টিন থেকে ৩০ বছর বয়সী তাসলিমা অমর লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমাদের নোংরা দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে অনেক। আমি কখনও (কর্মক্ষেত্র থেকে) বাড়িতে ফিরতে পারব কিনা তা নিয়ে চিন্তা হয়।’

পরবর্তীতে অমর বলেন, বর্তমানে তিনি এবং তার স্বামী ফ্রান্স ছাড়ার চেষ্টা করছেন। ৩২ বছর বয়সী লরি আবুজেইরের বাড়ি দক্ষিণ ফ্রান্সের তুলুজে। তিনি জানান, নিজ বাড়িতে শিশুদের পরিচর্যা করার ব্যবসা চালু করার চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। যাতে করে তিনি হেড স্কার্ফ পরার সুযোগ পান। কেননা বর্তমানে ফ্রান্সে নির্দিষ্ট কিছু কর্মক্ষেত্রে স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ। অনেক নারী লেখেছেন ২০১৫ সালের জানুয়ারি প্যারিসের চার্লি হেবদোতে হামলা ও ব্রাসেলস, প্যারিস এবং সম্প্রতি নিস হামলার পর মুসলিম বিরোধী পক্ষপাতিত্ব তীব্র হয়েছে।



হালিমা নামে ফ্রান্সের এক ২১ বছর বয়সী ছাত্রী লেখেন, জনগণের আমাদের দিকে তাকানোর পন্থাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। কটূক্তির জবাব দিতে দিতে জিহ্বাই খসে গেছে। এখন একজন মুসলিম নারীকে বাড়িতে ফিরে যেতে বললে কেউই আর বিস্মিত হয় না।

তবে ব্যাতিক্রম কিছু মন্তব্যও পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। বেলজিয়ামের লিবেকের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ডিনা (২৩) বলেন, যখন বুরকিনির উদ্ভব ঘটে, তখন আমি আমার বোনকে নিয়ে খুশি অনুভব করি। আগে সে ছুটির দিন সৈকতে গিয়ে ছায়াময় জায়গায় বসে থাকাত। অবশেষে বুরকিনি পরে সে সন্তানদের নিয়ে খেলাধুলা করতে শুরু করেছে।



ডিনা বলেন, আমি মনে করি বুরকিনিকে যারা বিতর্কিত করেন, তারা কেবলই ছোট মনের মানুষ। তাদের সবকিছুকে ঘৃণা করা ছাড়া করার কিছু নেই। বাস্তবতা হলো, আমি মনে করি ইউরোপ বুরকিনির বিরুদ্ধে। আধুনিক বিশ্বে কি করে সম্ভব, যেখানে সৈকতে নগ্ন থাকা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু কাপড় পরা কেন গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ফ্রান্সের লিয়নের ডিজাইনার হজির জিন্নু সৈকতে পুলিশের বুরকিনি খুলতে বাধ্য করা প্রসঙ্গে বলেন, এ দৃশ্য আমার হাইস্কুল জীবনের প্রথম দিকগুলোর কথা স্মরণ করে দেয়। ওই সময় স্কুলে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ফ্রান্স। একদিন স্কুলে আমার অন্যান্য সহপাঠীদের সামনেই আমার মাথার হেড স্কার্ফ খুলে ফেলতে বাধ্য করে আমার শিক্ষক। আমি অপমানিত হই। আজ আমি অনুভব করি আমার হৃদয় আবার ভেঙে গেছে। আমি কেবল ওই নারীকে তার কাপড় সরাতে বাধ্য করার দৃশ্য দেখি। আর নিজেকে জিজ্ঞেস করি- এর অবসান হবে কবে?



ফ্রান্সের তুলুজের আর্কিটেকচার ছাত্রী চ্যারলট্টি মনিয়ার (২৩) বলেন, আমি প্রতিদিনিই অপমানিত হই। রেলপথ, বাস, স্কুল সর্বত্রই আমাদের দিকে থুথু নিক্ষেপ করা হয়। তবুও পাল্টা আমি এ পর্যন্ত কাউকে অপমান বা আক্রমণ করিনি। কেননা, আমি কেবলই একজন মুসলিম। অমি অন্যত্র গিয়ে বসবাস করার বিষয়ে গুরুতরভাবে চিন্তা করতাম। যেখানে অন্যান্য মানুষ আমাকে কাঁদাবে না।

ব্রাসেলসের নাবাল আফকির (২৫) বলেন, আমি একজন সামাজিক কর্মী। একটি ন্যায্য ও স্বাধীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমার পক্ষে যা করার তাই করছি। আমার কাছে পর্দা করা মানে একজন পুরুষের দাসত্ব করা নয়। বরং এটা শরীর ও নারীত্বের যথার্থতাকে নির্ধারণ করে।



নেদারল্যান্ডের সামাজিক কর্মী সুয়াদ আল বুচিহাতি (২৬) বলেন, প্রত্যেক সময় আমি মরক্কো সফর করি। পাশ্চাত্যের চেয়ে আমি সেখানে বেশি স্বাধীনতা অনুভব করি।
ফ্রান্সের শিক্ষিকা করিমা মন্দোন (৩৭) বলেন, ফ্রান্সে একজন মুসলিম নারীকে জাতিবিদ্বেষী ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করতে হয়। সৈকতে বুরকিনি নিষিদ্ধ তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। আমি মনে করি ফ্রান্সের মুসলিম নারীদের যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে অনুরোধ করা যুক্তিযুক্ত। ফ্রান্সে মুসলিম নারীরা ব্যাপক নিপীড়নের শিকার বলে জানান তিনি।



লন্ডন থেকে সাইমা আশরাফ (৩৯) বলেন, আমি ফ্রান্সের মুসলিম নারী। হিজাব পরেই আমি লন্ডনে যা অর্জন করেছি, তা একজন ফ্রান্স থেকে কখনই সম্ভব ছিল না। আমি স্থানীয় সরকারের একজন রাজনীতিবিদ। আমি স্কার্ফ পরি। কিন্তু যদি ফ্রান্সে থাকতাম, তাহলে এটা ভুলতে হত আমাকে।

প্যারিসের এক ডায়ালিসিস কেন্দ্রের নার্স লিন্দা আলিম (২৭) বলেন, আমি একজন নার্স। আমি সবসময় হিজাব পরি। কিন্তু কর্মস্থলে আমার পক্ষে হিজাব পরা অসম্ভব। পৌঁছানোর পরপর আমি পর্দা খুলে ফেলি। তখন মাথায় আর কিছুই থাকে না। পুরো শরীর ঢেকে রাখতে লম্বা কোন জামাকাপড়ও পরতে পারি না। আমাদের বসবাসের পথ ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। আমাদের পুল ও সৈকতে যেতে দিতে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে। জানি না, পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে?



বঞ্চনার কথা তুলে ধরে সিয়াম ফারহাত-বাসিত (২৯) নামের সাবেক রিসিপশনিস্ট বলেন, আমার একটি মাস্টার ডিগ্রি রয়েছে। তবুও আমি আমার সাবজেক্ট সংশ্লিষ্ট চাকরি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি আমার ভবিষ্যতের কোন আশা দেখছি না। আমার ইচ্ছা বিদেশে যাওয়ার। আমার অন্তর শতভাগ ফ্রান্স। তবুও আমাকে আমার দেশপ্রীতির প্রমাণ দিতে হবে।



বেলজিয়ামের সাদিয়া (৩১) নামের মুসলিম গৃহিণী বলেন, লেখাপড়ার সময় আমাকে কঠির পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি শিখতে ভালবাসতাম। কিন্তু অব্যাহত স্কুলে যাওয়ার পথে আমি উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। আমি জানতাম একজন পর্দানশীন নারী হিসেবে কর্মজীবনের জন্য আমার কোন ভবিষ্যত নেই।
ফ্রান্সের গ্রিনবেলের অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনার ছাত্রী সারাহ নাহাল (২৪) বলেন, আমি একজন মুসলিম নারী হিসেবে নিজেকে আর নিরাপদ মনে করি না। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছি। আশা করি আমি সেখানে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারব ও কাজ করতে পারব। তবে তা আমাকে মর্মাহত করবে। কেননা আমি দেশকে ভালবাসি।



এদিকে ফ্রান্সের মুসলিম নারীরা যে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য, অমুসলিমদের থেকে একঘরে ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, তার যে চিত্র নিউইয়র্ক টাইমসের এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, তার সমালোচনা করেছে ফ্রান্স। সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভ্যালস এ প্রতিবেদনকে মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছেন।
সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ


You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.