Beanibazarview24.com
কোনোভাবেই থামছে না দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই দেশটির কোনো না কোনো অঞ্চলে স্বজন হারানোদের কান্নার রোল শোনা যায়। রমজানের প্রথম দিন থেকে গেলো ৪ দিনে ৩ বাংলাদেশি খুন হয়েছে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হামলায়।
গত ৯ মে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে ফেলিকনপার্ক এলাকায় ইমন হোসেন নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর দোকানে আফ্রিকান সন্ত্রাসীরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে হামলা করে এবং যাওয়ার সময় ইমনকে গুলি করে হত্যা করে।
তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি গত তিন বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসেন এবং কিছুদিন চাকরি করার পর কেপটাউন শহরের এক আত্মীয়ের সযোগিতায় ফেলিকনপার্ক এলাকায় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন।
শুক্রবার তার দেশের বাড়িতে মৃত্যুর খবর পৌঁছলে স্বজনদের মাঝে নেমে আসে শোকের মাতন। তারা তাদের প্রিয় সন্তানকে এক নজর দেখতে দেশে লাশ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করছেন।
নিহত ইমন হোসেনের (২৫) দেশের বাড়ি নোয়াখালী সদর উপজেলার কালিতারায়। তিনি সোনাপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও কালিতারা এলাকার আবু তাহের মাস্টারের ছেলে।
এ দিকে গত ৮ মে নিউক্যাসেল শহরে জয়নাল আবেদীন (৩০) নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে একদল আফ্রিকান ডাকাত ডাকাতি করতে এসে চলে যাওয়ার সময় তার মাথায় গুলি করে ডাকাত দল চলে যায়। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে ফোন দেয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে জয়নালের মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নিহত জয়নাল আবেদীনের মামা দুদু মল্লিক জানান, এইচএসসি পাশ করে দশ বছর আগে জয়নাল আবেদীন দক্ষিণ আফ্রিকা আসেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নিউক্যাসেল শহরে নিজের দোকান পরিচালনা করতেন। দোকানের পাশেই একটি কন্টেইনারে থাকতেন তিনি। বুধবার রাতে কাজ সেরে প্রতিদিনের মত জয়নাল সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে জয়নাল আবেদীন ছিল দ্বিতীয়। ২০১৫ সালে একইভাবে খুন হন জয়নাল আবেদীনের ছোট ভাই আমিন (২৫)। ঢাকার কেরানীগঞ্জে থেকে তিনি ম্যান পাওয়ারের ব্যবসা করতেন। নিখোঁজ হওয়ার কদিন পর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে আমীনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মর্মান্তিকভাবে দুটি ছেলেকে হারিয়ে তাদের পিতা-মাতা এখন পাগল প্রায়। এখন পরিবারের পক্ষ থেকে জয়নাল আবেদীনের লাশ দ্রুত ফিরে পাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ৭ মে দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথ মোঃ শাহজাহান নামে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আফ্রিকান সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছে। সকালে কাস্টমার সেজে এক আফ্রিকান মোঃ শাহজাহানের দোকানে ‘পাই’ কিনতে আসে। এ সময় মোঃ শাহজাহান দোকান থেকে বাহিরে বের হচ্ছিলেন। সে সময় ঐ আফ্রিকান পিছন থেকে মোঃ শাহজাহানের মাথায় ও গাড়ে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
মুমূর্ষু অবস্থায় মোঃ শাহজাহানকে মার্কেনটাইল হসপিটালে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।তার দেশের বাড়ি কুমিল্লা লাঙ্গল কোর্ট।
দেশটিতে প্রতিদিনই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা পাচ্ছে না কোনো বিচার বা সহায়তা। সব সময়ই অপরাধীরা ঘুরে বেড়ায় চোখের সামনে। আনা হচ্ছে না বিচারের আওতায়, করা হচ্ছে না কোনো মামলা।
বাংলাদেশ কমিউনিটি বা বাংলাদেশিদের জন্য সঙ্ঘবদ্ধ কোনো সংগঠন না থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারে কাছে এ বিষয়ে যেমন অভিযোগ দেয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার কোনো প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অভিযোগ তুলেছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.