Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়া এতই সহজ?







সুনামগঞ্জের গোলাবগঞ্জ উপজেলার হাওরতলা গ্রামে আফজাল মাহমুদের বাড়িতে আজ শোকে বিহ্বল সবাই। ইতালি যাবার কথা ছিল তার। কিন্তু খবর এলো হাজারো মাইল দুরে কোন এক সমুদ্রে নিখোঁজ হয়েছেন তিনি।

তার চাচাত ভাই রাবেল আহমেদ বলছেন, “ও দালালের মাধ্যমে গেছিলো। গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটে করে দুবাইতে নিছে। দুবাইতে সপ্তাহ-দশ দিন দুবাইতে রাখা হইছে। এর পরে তুর্কি। তার পর লিবিয়াতে পাঠাইছে।”



দুই বছর আগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন আফজাল মাহমুদ। যার পরিবারের আরও অনেক পুরুষ সদস্য ইতিমধ্যেই ইতালি ও ফ্রান্সে থাকেন।
বড় ভাইদের পথ ধরে তিনিও যাচ্ছিলেন। যাবার জন্য দেশি দালালদের বেশ বড় অংকের অর্থও দিয়েছিলেন। যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তিনি ইতালি যাচ্ছিলেন তার মধ্যে যে সমুদ্রও পাড়ি দিতে হবে সেই তথ্য কিছুই তারা জানতেন না বলছিলেন রাবেল আহমেদ।



তিনি বলছেন, “এই রকম তো আমরা কোনো দিন কল্পনাও করি নাই। দালালে আমাদের অনেক আশা দিছে। ভালো বিমানে দিবো বা ভালো সুযোগ সুবিধা দিবো। সুন্দরভাবে ইতালি পৌঁছাইব। পানির কোনো সিস্টেম নাই ওইভাবে পাঠান হইবো। পরে শুনি যে একটা ছোট্ট ট্রলারে দিছে। যার মধ্যে ৯০ থেকে ৮০ জন মানুষ আছিলো। কতক্ষণ পর ট্রলারটা চেঞ্জ করছে। তার কতক্ষণ পর সেটা ডুবি গেছে।”

বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে এক নৌকা ডুবিতে নিহত প্রায় ৬০ জন অভিবাসীর অধিকাংশই ছিল বাংলাদেশি নাগরিক। সেই নৌকাতেই ছিলেন আফজাল মাহমুদ।

আহমেদ বলছেন, এসব তথ্য মিলেছে তিউনিসিয়ায় থাকা পরিচিতদের কাছ থেকে।

কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশিদের ইউরোপে যাওয়ার যেসব কাহিনী শোনো গেছে তার সাথে আফজাল মাহমুদের গল্প যেন অনেকটাই একই রকম।



লিবিয়া, তুরস্ক হয়ে ইতালি অথবা গ্রীস, এই নামগুলোই বারবার আসছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক অথবা সাব সাহারা অঞ্চলের কিছু দেশের অধিবাসীরা এই রুট ব্যবহার করে। সেটাই ছিল প্রবণতা।

কিন্তু বাংলাদেশিরা হাজার মাইল দুরের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার এই পথ কেন বেছে নিচ্ছেন?

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলছেন, কিভাবে তার শুরু।

তিনি বলছেন, “২০১০ সালের দিকে প্রচুর বাংলাদেশি লিবিয়াতে কাজ করতো। লিবিয়াতে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন অনেকেই বাংলাদেশে চলে আসেন। ৩৭ হাজারের মতো। আর একটা বড় অংশ যারা আসতে পারেননি তখন তারা কোনও না কোনভাবে ইউরোপ ঢোকার চেষ্টা করে। তখন থেকেই ওই পথটা খুব পপুলার হয়ে ওঠে। মানব-পাচার চক্র গড়ে ওঠে যারা বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া তারপর ইউরোপ নিয়ে যাবে। এখনো তারা এই ঝুঁকিটা নিচ্ছে।”



আইওএমের ২০১৭ সালে একটি জরীপে দেখা গেছে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি ঢোকার চেষ্টা করেছে যেসব দেশের নাগরিকেরা বাংলাদেশিরা রয়েছেন সেরকম প্রথম পাঁচটি দেশের তালিকায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান বিষয়ক পরিদপ্তর ইওরোষ্ট্যাটের তথ্যমতে ২০১৪ সালের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যেসব দেশের নাগরিকেরা ইউরোপে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করেছে সেরকম প্রথম দিকের দশটি দেশের তালিকাতেও বাংলাদেশ রয়েছে।

বাংলাদেশিরা যেকোনো মূল্যেই যেন দেশ ছাড়তে চান। ইউরোপ যেতে পারলেই যেন ভাগ্য খুলে যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তর সচিব মানব-পাচার বিরোধী টাস্কফোর্সের ফোকাল পয়েন্ট আবু বকর ছিদ্দীক, তরুণ প্রজন্মের এমন একটা মনোভাবকেই দায়ী করছেন।

তিনি বলছেন, ” কোন লিগাল কাগজপত্র থাকে না তবুও তারা যাবেই। এমনও লোক আছে যে পাঁচ বছর ধরে যাচ্ছেই। জার্মানি পর্যন্ত তার যেতেই হবে। সে প্রথম গিয়েছে ইরাক। সেখান থেকে সিরিয়া, সেখান থেকে ইস্তাম্বুল, সেখান থেকে গ্রীস। এভাবে বিভিন্ন যায়গায় সে আটকা পড়েছে জেল খেটেছে, আবার ট্রাফিকারদের টাকা দিয়েছে। বাঁচুক আর মরুক জার্মানি যেতে হবে। দেখা গেলো সেখানেও যে এসাইলামও পায়না। মানবেতর জীবনযাপন করে।”



বিদেশ যাওয়ার এই প্রবণতাকে তিনি বলছেন ‘বেপরোয়া আচরণ’।

এমন অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে ইউরোপের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশ কাজ করছেন বলে জানালেন তিনি। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলছেন এরকম ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশ যাত্রা ঠেকাতে একক দেশ নয় বরং একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ছাড়া আর সমাধান নেই।

তার মতে, “আপনি এইখান থেকে ঠেকাতে পারবেন না। লিবিয়া থেকে ঠেকাতে হবে। যারা যাচ্ছে তারা লিবিয়া থেকে যাচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক মানব-পাচারকারী যে চক্র তার পেছনে অনেক বড় বাণিজ্য রয়েছে। আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন কিন্তু লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার যে চেষ্টা সেখানে বাংলাদেশ সরকার বা দূতাবাস খুব শক্ত ভূমিকা নিয়ে প্রতিহত করতে পারবে এমনটা ভাবাটা আসলে সম্ভব না। আন্তর্জাতিকভাবেই আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।”

ওদিকে হাওরতলা গ্রামের আফজাল মাহমুদের পরিবার এখন অপেক্ষায় আছেন কোনো একটা খবরের। হয়ত লাশ পাবেন সেই আশঙ্কায় রয়েছেন। আর রাবেল আহমেদ বলছেন তিনি দালালদের বিচার চান।
সূত্র : বিবিসি














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.