Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

রোজা ভেঙে হিন্দু রোগীদের রক্ত দিলেন আসামের মুসলিমরা







পুরো পৃথিবীতে রোজা পালন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রমজানের এই মাসটিতে যেখানে রোজা পালন করা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য ফরজ; সেখানে তা ভেঙে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রক্ত দিয়েছেন কয়েকজন। খবর বিবিসির।

ভারতে আসামের হাইলাকান্দি জেলায় কদিন আগেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে এবং যার জেরে এখনও সেখানে দিনের কিছুটা সময় কারফিউ চলছে। কিন্তু ওই রাজ্যেরই অন্য কয়েকটি জায়গায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির এক অন্য ছবি উঠে এসেছে। অন্তত দুজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী স্বেচ্ছায় রোজা ভেঙ্গে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন দুই হিন্দু ধর্মাবলম্বী রোগীর।



আসামের বিশ্বনাথ চরিয়ালির বাসিন্দা অনিল বোরা তার ৮২ বছর বয়সী মা, রেবতী বোরাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন গত সপ্তাহে। কিছু পরীক্ষার পরে জানা যায় তাকে জরুরী ভিত্তিতে রক্ত দিতে হবে। মিসেস বোরার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ।

সেই রক্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।ফেসবুকের মাধ্যমে একটি স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠনের সঙ্গে অনিল বোরার যোগাযোগ হয় শোনিতপুরের বাসিন্দা মুন্না আনসারির সঙ্গে।



গত রোববার মি. আনসারি রোজা ভেঙে রক্ত দিয়েছেন রেবতী বোরাকে।”আমাকে যখন প্রথম রক্ত দিতে হবে বলা হল, আমি সঙ্গে সঙ্গেই রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি আমাকে ফোন করেছিল, আমি নিজেও তার সদস্য।”

“ওরা আমাকে বলে ভেবে দেখ, রোজা ভাঙ্গতে হবে কিন্তু। আমি বলেছিলাম রোজা ভাঙতে হলে হবে। তবে যদি রাতে রক্ত দিলে কাজ হয়, তাহলে রোজার শেষেই হাসপাতালে যাব, আর না হলে রোজা ভেঙে দেব!” বলছিলেন শোনিতপুরের বাসিন্দা, ছোট এক দোকানদার মি. আনসারি।



প্রথমে মি. আনসারিকে জানানো হয় যে রাতে রক্ত দিলেও চলবে। কিন্তু পরে জানানো হয় যে তক্ষুণি রক্ত দিতে হবে। তখন রোজা ভেঙ্গেই হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসেন মি. আনসারি।

অনিল বোরা বলছেন, “রোজা ভেঙে তিনি যেভাবে আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন, তার জন্য ওর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।”

গোলাঘাট জেলার বাসিন্দা ইয়াসিন আলী রোজার শেষে বাবার সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ওজন মাপতে। সেখানে গিয়ে হঠাৎই এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়, যিনি আড়াই বছরের শিশুকন্যার জন্য রক্ত খুঁজছিলেন।সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত দিতে রাজী হয়ে যান মি. আলী।

টেলিফোনে তিনি বলছিলেন, “যদিও আমাকে রোজা ভাঙতে হয় নি সেদিন রক্ত দেওয়ার জন্য। তবে প্রয়োজন হলে ভাঙ্গতেও দ্বিধা করতাম না।”



“কোরানেই তো আছে একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সবথেকে বড় কাজ। তার জন্য রোজা যদি ভাঙ্গতে হয়, তাতেই বা কী যায় আসে?”
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ‘টিম হিউম্যানিটি’ অনেক বছর ধরেই রোগীদের জন্য রক্তদাতাদের ব্যবস্থা করে।

সংগঠনটির প্রধান দিব্যজ্যোতি কলিতার বাবার জন্য রক্ত যোগাড় করতে পারা যায় নি। তার মৃত্যু হয়েছিল। তখন থেকেই রক্তদাতা যোগাড় করেন তিনি। ক’বছর হল এরজন্য ফেসবুক ব্যবহার করছেন তারা।

রোজা রেখে রক্ত দেওয়ার প্রসঙ্গে মি. কলিতা বলেন, “রোজা বা উপোষ করলে শরীর এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। তারপরে যদি রক্ত নেওয়া হয়, শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।”

“সেজন্যই রক্ত নেওয়ার আগে ব্লাড ব্যাঙ্কে বিশেষভাবে জেনে নেওয়া হয় যে রক্তদাতা কতক্ষণ আগে খাবার খেয়েছেন। আবার রক্ত দেওয়ার পরেও ফলের রস, ফল এধরণের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়।”



মি. কলিতা ব্যাখ্যা করে বলেন, “এমনিতেই রক্ত দেওয়ার পরে অনেকের মাথা ঘুরতে পারে, তার জন্য সাবধান থাকতে বলা হয়। আর যদি কোনও খাবার না খেয়ে রক্ত দেন কেউ, তাহলে অসুস্থ হয়ে পড়া অনিবার্য।”

গুয়াহাটির একটি হাসপাতালের কর্মী পান্নাউল্লা আহমেদকেও ব্লাড ব্যাঙ্কের ডাক্তার জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে খাবার খেয়েছেন কী না তিনি।
“আমি মিথ্যে কথা বলেছিলাম, যে আমার পেট ভরা আছে। কিন্তু আমার তো রোজা চলছে, কী করে খাব! তাই খালিপেটেই ছিলাম। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম যে মিথ্যে বলাটা ঠিক হয় নি।”

পান্নাউল্লা আহমেদ বলেন, “তাই রক্ত দেওয়ার পরে একটা হোটেলে ঢুকে ভাল মতো খাওয়া দাওয়া করে নি। এভাবেই সেদিন আমি রোজা ভাঙ্গি। পরের দিন থেকে আবারও রোজা রাখছি।”

গুয়াহাটির একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী তিনি।তার এক বন্ধু জানতে পারে যে এক রোগীর রক্ত লাগবে। মি. আহমেদের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। আর রোগীর ও পজিটিভ। অনেক খুঁজেও রক্তদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতাল থেকেই বলা হয় যে বি পজিটিভ রক্ত দিয়ে তার বদলে রোগীকে তারা সঠিক গ্রুপের রক্ত দিয়ে দিতে পারে।

কিন্তু মি. আনসারির সেই বন্ধু তাপস ভগবতী বলেছিলেন, “তুমি কী করে রক্ত দেবে! রোজা ভাঙ্গতে হবে তো তাহলে!” “আমি চাইছিলাম রক্ত দিতে, তার জন্য যদি রোজা ভাঙ্গতে হয় তো হবে! একজন মানুষের প্রাণ তো বাচাতে পারব! তবুও আমি বাড়ির অনুমতি নিয়ে নিই। তারা মত দেয়।”

“কিন্তু আমি ভেবেছিলাম ডাক্তারকে মিথ্যে কথাই বলে দেব যে পেট ভর্তি আছে। যদি মাথা না ঘোরায়, তাহলে আর রোজা ভাঙ্গব না। তাতে রক্ত দেওয়াও হবে, আবার রোজাটাও ভাঙ্গতে হবে না।”

মি. আনসারি জানান, “কিন্তু ভেবে দেখলাম যে মিথ্যে বলা উচিত নয়, তাই রক্ত দেওয়ার পরে খেয়ে নিয়েছিলাম।”

এদের ঘটনা ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই তিনজনই বলছেন যে তারা একজন মানুষের প্রাণ বাচাতে যা করা উচিত বলে মনে হয়েছে, সেটাই করেছেন। এত প্রচার করার কিছু হয় নি এ নিয়ে।














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.