Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

মানবপাচারের ফাঁদে: ঠেলায়, খুশীতে নাকি অন্য কিছু







২৯ মার্চ সন্ধায় ভানুয়াতুর রাজধানী পোর্ট ভিলায় হাটছি সাগরের পার ধরে। প্রশান্ত মহাসাগরের এক অচিন দ্বীপে বাংলায় কেউ কথা বলতে শুনবো চিন্তাও করতে পারি নাই।

মনে হলো মোবাইলে কেউ একজন বাংলায় কিছু বলছে। কাছে গিয়ে দেখি এক বঙ্গ সন্তান অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে সম্ভবত দেশে কারও সাথে। উৎসুক হলাম ইনি এখানে কিভাবে এলেন। চাকুরি নিয়ে নাকি বেড়াতে?



কথা বলে যা জানলাম ও পরে যা দেখলাম তা আমার জানার মাত্রাকে অতিক্রম করে গেলো। প্রথমেই সে বললো ‘আমরা হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ে পড়ে এখানে এসে এক অনিশ্চিত জীবনে পড়েছি। ১১০ জন বাংলাদেশী গত ১৭ মাস ধরে পোর্ট ভিলাতে প্রায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছি। ’

তারাঁ আষ্ট্রেলিয়া যাওয়ার আশায় দালালকে জন প্রতি ১৭ লাখ(কেউ কেউ নাকি ৩০ লাখ)দিয়ে ভারত,সিঙ্গাপুর ও ফিজি হয়ে ভানুয়াতু পৌছেছে ৩ ব্যাচে।



মানবপাচারকারী এক বাংলাদেশী ,যার পাসপোর্ট নাকি জিম্বাবোয়ের, সে এই ১১০জনকে একটি ক্যাম্পে প্রায় বন্দি অবস্থায় দিনের পর দিন নির্যাতন করতে থাকে। আরও কিছু লোক আনার জন্য চেষ্টা চলছিলো। পাচারকারী লোকটি এদেরকে দিয়ে ফোন করাতো তাদেরই আত্মীয় স্বজনকে এবং বলতে বাধ্য করতো ‘আমরা ভালো আছি ,চলে আয় ‘। এক পর্যায়ে দুজন পালিয়ে গিয়ে পুলিশকে তাদের বন্দিদশার কথা জানায়।



সাথে সাথে ভানুয়াতু পুলিশ লোকটাকে আটক করে এবং এদেরকে মুক্ত করে। এরা বর্তমানে দুইটি ক্যাম্পে মোটামুটি দিন পার করছে। কোর্টে মামলা চলছে। পুলিশ তিন বেলা খাবার দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে রান্না করা খাবর দিত। কিন্তু স্থানীয় খাবার এদের পক্ষে খাওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। গত কিছুদিন থেকে চাল তেল মুরগী ইত্যাদি দিচ্ছে। ওরা নিজেরা রান্না করে খাচ্ছে।
আরও কয়েক জন বাংলাদেশী যোগ দিলো। জানালো আরও অনেক লোমহর্ষক তথ্য। বললাম যেহেতু এখানে তোমাদের কোন ভবিষ্যত নাই ,দেশে ফিরে গেলে কেমন হয়।



কেউই এ অবস্থায় দেশে ফিরতে রাজী না। এত টাকা খরচ করে এসেছে। শেষ চেষ্টা করে দেখতে চায় অষ্ট্রেলিয়া ঢুকা যায় কিনা। ওদের ধারনা তাদেরকে রিফিউজি হিসাবে আষ্ট্রেলিয়া একদিন হয়তো গ্রহন করবে।

আমি বললাম আমার জানামতে কোন দেশে দুর্ভিক্ষ হলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বা রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতা বা গনহত্যা হলে সেই দেশ থেকে রিফিউজি গ্রহন করা হয়। যেহেতু এর কোনটাই এই মুহুর্তে বাংলাদেশে নাই তাই তাঁদের রিফিউজি হয়ে অষ্ট্রেলিয়া ঢুকা সহজ হবে না।

ওদের নিয়ে কফি খেতে বসলাম সমুদ্রের পারের এক কফি সপে। ওরাও কিছুটা সন্দিহান আমি কি কারনে এই রাজ্যে।
বুঝাতে চেষ্টা করলাম স্রেফ দেশ দেখতে এসেছি। তাদের চোখ বিস্ময়!

অনুরোধ করলো তাদের আবাস স্থল দেখে যেতে। পায়ে হাটায় ২০ মিনিটের পথ। রাতের অন্ধকার। কিছুটা পাহাড়ী মনে হলো। পৌছে দেখি এশার নামাজের আয়োজন চলছে।



ওদের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করলাম। এরপর মোনাজাত। মোনাাজাতের বিষয়বস্তু দেশ। নিজেদের দুর্দশা লাঘবের বিষয় খুব একটা আসলো না। ওদের মাঝে একজন কোরআনে হাফেজও আছেন।

এরপর রাতের খাবারের আয়োজন। অল্প অনুরোধে বসে পড়লাম ওদের সাথে। ইচ্ছাও ছিলো ওদের খাবারটা একটু চেখে দেখার। গরম সাদা চালের ভাত। সঙ্গে আলু ভর্তা আর ডাল। সব শেষে আসলো টুনা মাছের ভর্তা। কথা বলে বুঝা গেল এদের প্রায় সকলেই মধ্যবিত্ত্ব বা নিম্ন মধ্যবিত্ত্ব ঘরের ছেলে। মোটামোটি লেখাপড়া জানা।

কেউ বলেনি তারা বেকার ছিলো বা রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়ে দেশ ছেড়েছ। শুধু অবাস্তব কিছু সম্ভাবনার মোহে এদের এই অনিশ্চিত যাত্রা।

অনেক গল্প আর আশার কথা শুনিয়ে শেষ মেশ ফিরে এলাম আমার ২ দিনের পোর্ট ভিলার আবাস স্থল হোটেল মেলানেশিয়ায়। বাংলাদেশী ভাইদের কয়েকজন এগিয়ে দিয়ে গেলেন হোটেল পর্যন্ত। যদিও পোর্ট ভিলা রাতেও খুব নিরাপদ,নেড়ি কুকুর মাঝে মাঝে উৎপাত করে।

বাংলাদেশর কিছু তরুন দেশ ছেড়ে উন্নত দেশে বসতি করার আশায় জীবন বাজি রেখে শুধু অজানা উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে না ,সেই সাথে এত বড় অংকের টাকা দালালের হাতে তুলে দেয় যা দিয়ে সে ভালভাবেই দেশে অন্তত ছোট ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে যেতে পারে।

ভূমধ্য সাগরে নৌকা ডুবে ২৬ বাংলাদেশী প্রান হারালেন। সিরিয়ার নাগরিকরা প্রানে বাঁচার জন্য দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি না শুধু অর্থনৈতিক কারনে এদেশের তরুনরা দেশ ছেড়ে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালাচ্ছে।

এরা তো বড় অংকের টাকা খরচ করেই এই পথে যাচ্ছে। এর চেয়ে কম পুজি নিয়েইতো অনেকে এদেশে কিছু করে খাচ্ছে।
আসলে এদেরকে গাইড করার মত সামাজিক প্রতিষ্ঠান জেলা জেলায় গড়ে তোলা দরকার।

লেখক: চেয়ারম্যান, চক্ষু বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেয়া)














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.