Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

আড়াই লাখ মানুষের রক্ত মেখে প্রতিদিন কিভাবে ইফতার করেন সৌদির শাসকরা!







ইয়েমেন যেন এক মৃত্যু উপত্যকার নাম। যে মুহুর্তে আপনি সারাদিন কষ্ট করে রোজা রেখে, ইফতারে বসছেন ঠিক সেই মুহুর্তে ইয়েমেন একজন শিশু মৃত্যুবরণ করছে। স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটাকে হত্যা বলা যথাযথ হবে। দেশটায় প্রতি ১২ মিনিটে গড়ে একজন করে শিশু মারা যাচ্ছে, ভাবা যায়! এই লেখাটাই যখন আপনি পড়বেন তখনই হয়ত জীবিত একটি শিশু লাশে পরিণত হচ্ছে, কি অবলীলায় ক্ষুদ্র পতঙ্গের মতো এই মানুষের মরণ হচ্ছে!



ইয়েমেনের এই নীরব মৃত্যুর মিছিল গতকয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলমান। বর্বর এক গণহত্যায় ইয়েমেনের জমিন মানুষের কবরে রুপান্তর হচ্ছে। প্রতিমুহুর্তে যারা জীবিত তাদের দায়িত্ব যেন হয়ে উঠেছে মৃতদের জন্য কবর খোঁড়া। রাজনীতির এক দাবার গুটি হিসেবে ইয়েমেনের সাধারণ মুসলমানদের এই মরণের যাত্রায় শামিল হতে হচ্ছে। আর এই গুটির পেছনে সবচেয়ে বেশি কলকাঠি নাড়ছে সৌদি আরব।



সংকটের শুরু যেভাবে
ইয়েমেনে সংকটের শুরু হয় আরববসন্তের পর, ২০১১ সালে। তখন ইয়েমেনের শাসক ছিলেন সৌদিপন্থী আলী আবদুল্লাহ। আরবসন্তের ধাক্কায় তার পতন হলে তার ডেপুটি মনসুর হাদি ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু, তিনি ইরানপন্থি শিয়া হুতিদের রাজনীতির বাইরে রাখার চেষ্টা করেন। ২০১৪ সালে মনসুর হাদিকে বের করে রাজধানী সানার দখল নেয় হুতিরা। বিদ্রোহের দামামা বেজে উঠে। জঙ্গী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ইয়েমেনে। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।



এইদিকে সৌদি আবার হাদিকে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্যে ইয়েমেনে অভিযান চালায়। তাদের সাথে আরো আটটি সুন্নি রাষ্ট্র সমর্থন দেয়। পেছন থেকে সাহায্য করছে আমেরিকা। সবাই সবার আধিপত্যের প্রদর্শনী দেখানোর চেষ্টা চালায় ইয়েমেনে। আর তার প্রভাবে সেই মানুষগুলোই মরে যারা জানে না, কেন পৃথিবীতে এত যুদ্ধ। কেন জীবন এমন অনিশ্চিত হয়ে গেল!

ইরান ও সৌদির আধিপত্য দেখানোর পেছনের কারণ
ইয়েমেনকে ইরান প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তারা ইয়েমেনে নিজেদের কোরামের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে এডেন সাগরে নিয়ন্ত্রণ নিতে সুবিধা হবে। তাতে সৌদি আরবের ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলতে পারবে ইরান। ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে চীন, রাশিয়া। চীনের উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক হলেও রাশিয়া আবার মনে প্রাণে চায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা খর্ব করতে।



এইদিকে সৌদিকে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল। মূলত সৌদি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্সি দিচ্ছে ইয়েমেনে। যুক্তরাষ্ট্র চায় না ইয়েমেনকে ব্যবহার করে ইরান, রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পাক। পাশাপাশি ইসরায়েলের নিরাপত্তাও এখানে চিন্তার বিষয় তাদের জন্য। এই ক্ষমতা, আধিপত্য, দখলের লড়াইয়ে তারা যা করছে তাতে করে ইয়েমেন এখন আর মানুষের বাসযোগ্য ভূমি নেই। এটা হয়ে গেল যুদ্ধক্ষেত্র।

২০১৭ সাল, সৌদির অবরোধ ও দুর্ভিক্ষ
এই বছরও ইরান সমর্থিত শিয়া হুতিরা রাজধানী সানার দখল ধরে রেখেছে। সেখান থেকে তারা সৌদিতে মিসাইল ছুঁড়ে। নভেম্বরে সৌদির রিয়াদে হুতিদের একটি মিসাইল পড়ার পর, সৌদি আরব ইয়েমেন অবরোধ করে। ফলে শুরু হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। ইয়েমেনের সাধারণ জনগণ আর তিন বেলা খেতে পারে না। শিশুগুলো শুকিয়ে কঙ্কালসার হয়ে পড়তে শুরু করে। জাতিসংঘের মতে, ইয়েমেনের পরিস্থিতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়।



সৌদির ভূমিকা কি?
সৌদি আরব ইয়েমেনের সরকারি বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে যাদের প্রতিপক্ষ হুতি বিদ্রোহীরা। সৌদির পক্ষ থেকে এই দামামা থামানোর কোনো লক্ষণ নেই। বরং, তাদের কঠোর ভূমিকায়,অবরোধের কারণে ইয়েমেনে খাবার সহযোগিতা পৌঁছাতে পারছে না। তারা যুদ্ধ করেও মানুষ মারছেন, দুর্ভিক্ষ তৈরি করেও মানুষ মারছেন। সৌদি আরব মুসলমানদের কাছে বেশ পবিত্র দেশ হিসেবে স্বীকৃত। এই দেশটিই যখন মানুষ মারছে, আমেরিকার সাথে জোট বেঁধে নিরীহ মানুষের আবাসভূমি ধ্বংস করছে, অবরোধ দিয়ে দুর্ভিক্ষ দিয়ে মানুষ মারছে তখন গোটা বিশ্ব নিরব। নিরব মুসলমানরাও।

আধিপত্যের খেলার ফলাফল
গত তিনবছরে ২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার শিশু নিহত হয়েছে। নিহত যারা হচ্ছেন তারা বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক, যাদের হয়ত এখন জীবনকে উপভোগ করার কথা। পরিবারকে সময় দেয়ার কথা।

ইয়েমেন সৌদি যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ
যে শিশুদের এখন খেলার মাঠে, পড়ার টেবিলে থাকার কথা তারা মরছে কীট পতঙ্গের মতো। এখনো প্রতি বারো মিনিটে একজন শিশু গড়ে মারা যাচ্ছে ইয়েমেনে। আড়াই লাখের মতো মানুষের রক্ত ঝড়িয়ে, তাদের মেরে কি করে সৌদির শাসকরা প্রতিদিন ইফতার করছেন আসলে?














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.