Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ধীরে ধীরে কি আমরা বিশ্বের ঠগবাজ জাতিতে পরিণত হচ্ছি?







উন্নত, অনুন্নত বিভিন্ন দেশ ঘুরার ভাগ্য হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি বিশ্বের কোথাও এমন অবস্থা দেখিনি। কিছুদিন আগে এক ভয়াবহ প্রতিবেদন দেখলাম। বিদেশ থেকে আমদানি করা শিশুখাদ্যের যেগুলো মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেগুলো আবার নতুন করে লেবেলিং করে বাজারে ছাড়ছে!

যারা মায়ের দুধ পায় না, এমনিতেই সেসব বাচ্চা প্রাকৃতিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত থাকে। কত বেশি নিকৃষ্ট হলে মানুষ নিষ্পাপ বাচ্চাদের জন্য এরকম দুই নম্বরী কাজ করতে পারে!



গত সপ্তাহেই আরেকটা খবরে পড়লাম। মেয়াদ শেষ হওয়া পুষ্টি তেল আবার নতুন করে লেবেল পাল্টে মেয়াদ দিয়ে বাজারে ছাড়ছে। কিছুদিন আগে পাবনায় তীর কোম্পানির পাঁচ বছর আগের মেয়াদ শেষ হওয়া তেলে নতুন লেবেল লাগিয়ে বাজারে ছাড়ে।

রমজান মাস হল সংযমের মাস। অথচ এই মাসেই মানুষ দুর্নিতি করে বেশি। ব্যবসায়ীরা ভেজাল দিয়ে, সিন্ডিকেট করে পণ্যে দাম বাড়িয়ে, ঈদ বকশিসের নামে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, অফিস কর্মচারীরা ঘুষ আদায় করে।



রমজানের শুরুতে চট্টগ্রামে নকল ট্যাং কোম্পানি জব্দ করা হয়। রঙ ও ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশিয়ে এই নকল ট্যাং খেলে নানা রকম পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ তো হবেই, এর সাথে ক্যান্সারও হবে।

সারাদিন না খেয়ে রোজা করার ফলে ইফতারে দরকার বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য। অথচ দিনের পর দিন ফেলে রাখা ভাজা তেলেই সব ইফতার বানিয়ে বিক্রি করছে।

গতকাল ঢাকার গুলশানের এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়ে ছত্রাকে ঢাকা পুরাতন বাসি পঁচা মুরগী, মাছ, হাঁসের মাংশ, যা রাখা হয়েছিল খদ্দেরদের খাওয়ানোর জন্য।



অভিজাত রেস্তোরাঁতেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বাকি রেস্তোরাঁ গুলোর অবস্থা সহজে অনুমেয়।

ইউরোপ আমেরিকায় বড়দিন উৎসবে, আরব বিশ্বে রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে ছাড় দেয়, পন্যের দাম কমায়, আর আমাদের দেশে রমজান আসলেই প্রতিযোগিতা বাড়ে দাম বাড়ানোর। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পন্যের দাম দেড় থেকে দুই গুণ বাড়ে, শপিং মল, মার্কেটের দোকানদাররাও পোশাক পরিচ্ছদ তিন চারগুণ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে।

বিদেশী কসমেটিকস এর নকলে বাজার সয়লাব। এমন কোন কসমেটিকস নেই যার নকল পাওয়া যায় না। এমনকি বাচ্চাদের কসমেটিকসও! এগুলো ত্বকের ক্ষতি করছে তো করছেই, এর সাথে নানা রকম চর্ম রোগ এমনকি স্কিন ক্যান্সার পর্যন্ত হচ্ছে।



দিন পাঁচেক আগে বিএসটিআই ৩১৩টি ভোগপণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে, যেখানে বিভিন্ন নামীদামি প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্যই নিম্নমানের ও ভেজাল। এর মধ্যে তেল, মসলা, মসলার গুড়ো, লবণ ইত্যাদি রয়েছে।

মিল কারখানায় তো মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়ার সাথে রঙ, কাঠের গুড়া মিশানো নিত্যদিনের ঘটনা।

ফল মানুষ খায় পুষ্টি পাওয়ার জন্য। অথচ নানা রকম ক্যামিকেল দিয়ে সংরক্ষণ করার কারণে পুষ্টি পাওয়ার বদলে উল্টো স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে।

দান, খয়রাত করতে যাবেন, খোজ নিয়ে জানা যাবে ভিক্ষুকের দোতলা বাড়ি আছে, কয়েক বিঘা জমি আছে। অনেকে ভুয়া বিকলাঙ্গ, অসুস্থ সেজে ভিক্ষায় লিপ্ত। শিশুদের চুরি করে নিয়ে এসে পাতিলের মধ্যে আটকে রেখে বিকলাঙ্গ করে ভিক্ষায় নামানো হচ্ছে। আবার ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়ে রাস্তায় শুয়ে রেখে টাকা আদায়ে ব্যস্ত।

অসুস্থ হলে যে ওষুধ খাবেন, সেখানেও রয়েছে ভেজাল ওষুধ সেবনের ভয়। অনেক নামীদামি কোম্পানির ওষুধ নকল করে, আবার মেয়াদ শেষ হওয়া ওষুধ সংগ্রহ করে লেবেল পাল্টে নতুন করে বাজারে ছাড়ে এক ধরণের অসৎ ব্যবসায়ী।



মোবাইল ক্লোন করে, ভুয়া বিকাশ এজেন্ট সেজে, জ্বিনের বাদশা সেজে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ইলেকট্রনিক পন্য কিনবেন? সেখানেও সব নকল পন্য দিয়ে ভরা। এই জন্য চীনাদের দোষ দেয় অনেকে। আসলে তাদের দোষ নেই। তারা ব্যবসার ক্ষেত্রে সৎ। এদেশের ব্যবসায়ীরা যেরকম দাম ও মানের অর্ডার দেয়, তারা সেভাবেই বানিয়ে দেয়।

পীর ব্যবসা তো এদেশের এক নম্বর রমরমা ব্যবসা। বিনা পুজিতে মানুষের বিশ্বাস ও পাপের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে খানকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করছে৷ সেগুলোর কোন হিসাবও যেমন নেই, আয়করও দেওয়া হয় না। অনেক ভন্ড পীর আবার শুধু টাকা হাতিয়ে নিয়েও ক্ষ্যান্ত দেয় না, সুযোগ বুঝে নারী ভক্তদের ধর্ষণ পর্যন্ত করে।

জাতি হিসেবে ধীরে ধীরে অসুস্থ ও ঠগবাজ জাতিতে পরিণত হচ্ছি।

সবাই যে যেভাবে পারে এক অন্যকে ঠকাতে ব্যস্ত।

জানি না এর শেষ কোথায়! এর মধ্যেও যে সুস্থভাবে বেঁচে আছি এটাই আল্লাহর সবচেয়ে নেয়ামত।

লেখকঃ ডা. তারাকি হাসান মেহেদী
এমবিবিএস,বিসিএস(স্বাস্থ্য ক্যাডার)














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.