Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সৌদি আরবে বাংলাদেশের নাজমা‘কে কফিল বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে







স্বামী সিরাজুল ইসলামের সাথে ছাড়াছাড়ির পর দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে নাজমা বেগম (৩২) পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। শুরুর দিকে কফিলের (গৃহকর্তা) বাড়িতে ভালোই দিন কাটছিল তার। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বেতন না দিয়ে উল্টো গৃহকর্তার নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকায় কৌশলে তিনি স্থানীয় থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন পুলিশের কাছে নাজমা বলেছিলেন, তিনি আর ওই ‘নির্যাতনকারী’ গৃহকর্তার বাড়িতে কাজ করবেন না। তখন গৃহকর্তা তাকে বেতন বাড়ানো এবং বকেয়া বেতন পরিশোধ করার মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে তার বাড়িতে নিয়ে যান।



এ ঘটনার পর বেশ কিছুদিন নাজমার সাথে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। সম্প্রতি ঢাকায় নাজমার বড় বোন ঢাকার চকবাজারের বাসিন্দা সালমা বেগমের কাছে খবর আসে- নাজমা সৌদি আরবে আত্মহত্যা করেছেন। তার লাশ রিয়াদের একটি হাসপাতালের মরচুয়ারিতে পড়ে আছে। এর পর থেকে স্বজনরা প্রবাসীকল্যাণ ভবন, সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকার বনানীর দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এভাবে কেটে যায় প্রায় ৩ মাস। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত নাজমার লাশ দেশে পাঠাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। পরিবারের দাবি, নাজমাকে সৌদি আরবের কফিল (গৃহকর্তা) নির্যাতন করে মেরে এখন আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।



নাজমার বড় বোন সালমা বেগমের দাবি, নাজমা তো দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বিদেশে গেছে টাকা উপার্জন করতে। সে কেন আত্মহত্যা করতে যাবে? তিনি তার বোনের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন ও গৃহকর্তার উপযুক্ত বিচার এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

গত বৃহস্পতিবার রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় কাউন্সেলর (শ্রম) শফিকুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমি এইমাত্র নাজমা বেগমের কফিলের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছি। দূতাবাস থেকে কফিলের ঠিকানার দূরত্ব ১২ শ’ কিলোমিটার। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, গৃহকর্মী নাজমা আত্মহত্যা করেছে।’ পুুলিশের মাধ্যমে পাঠানো নাজমার ডেথ সার্টিফিকেটেও আত্মহত্যার কথা উল্লেখ আছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার লাশ দেশে পাঠাতে দূতাবাস থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) দিয়েছি।

কিন্তু কফিল বললেন, এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ আরো তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লাশ দেশে পাঠানোর অনুমতি দেবে না পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে নাজমাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাজমার লাশ রিয়াদ দূতাবাস থেকে ১২০০ কিলোমিটার দূরের রাপা নামক একটি হাসপাতালের মর্গে আছে। পুলিশের ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাজমা গত ৪ মার্চ আত্মহত্যা করেছেন। এখন জানলাম তাকে নির্যাতন করার কথা। বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলব।



গত বৃহস্পতিবার নাজমার বড় বোন সালমা বেগম নয়া দিগন্তকে বলেন, দেড় বছর আগে আমার বোনকে কামরাঙ্গীরচর এলাকার দালাল তছির মিয়া পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট দিয়ে ২০ হাজার টাকা বেতনে বনানীর দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল অফিস থেকে সৌদি আরব পাঠায়। যাওয়ার পর নাজমা বলেছিল, যে বাড়িতে কাজ করছে সেখানে তার দিন ভালোই কাটছে। কিন্তু কয়েক মাস যাওয়ার পর কফিল তার বেতন দেয়া বন্ধ করে দেয়। কেন তা জানি না। এ নিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে গৃহকর্তার সাথে নাজমার মারামারি হয়েছিল। এরপর নাজমা খালি হাতেই ওই বাসা থেকে বের হয়ে থানায় আশ্রয় নেয়। তিন দিন থানায় ছিল।



সালমা বলেন, নাজমা থানায় যাওয়ার আগেই বনানীর দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল অফিসের স্টাফ নুর নবীকে পুরো ঘটনা বলেছিল। তখন নুরনবী তাকে বলেছিল, আপনি যেহেতু বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন, তাই রাস্তায় হাঁটাহাঁটি না করে পুলিশের আশ্রয় নেন। আপনাকে আনতে দূতাবাস থেকে লোক যাবে। কিন্তু পরে আর কোনো লোক যায়নি। পরে গৃহকর্তা তাকে নেয়ার জন্য দু’তিনবার থানায় যান। নাজমা বারবার বলেছে, আমি ওখানে যাবো না। তখন গৃহকর্তা তাকে বলছে তুই আয়, তোর বেতন যেটা আটকাইছে সেটা দিবো, বেতন বাড়াইয়্যাও দিবো। নাজমার বেতন ছিল ২০ হাজার টাকা। একথায় নাজমা কফিলকে বলেছিল, আপনি থানায় বন্ড সই দেন, আমার যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে আপনি এবং থানার লোক দায়ী থাকবেন। এভাবেই সে আমাকে বলেছে।

তিনি আরো বলেন, ওই বাসায় যাওয়ার পর ১০-১৫ দিন নাজমা আমার সাথে কথা কইছে। এর মধ্যে একদিন সে বলে, আপা আমি কিন্তু তোমার সাথে এক দেড় মাস কথা বলুম না। না, কোনো সমস্যা না। তুমি চিন্তা কইরো না। সময় হলে আমিই তোমারে ফোন দিমু। এরপর ফোন দিলে অন্য অ্যারাবিয়ান মহিলার কণ্ঠ শুনতে পাই শুধু। এটা হলো এ বছরের জানুয়ারি মাসের কথা। এরপর থেকেই ভয় লাগতে থাকে। পরে মালিকের ছবিসহ একটা ইমু নম্বর ছিল। ওই নম্বরে ফোন দেই। তখন কফিল এক বাঙালিকে দিয়ে আমারে কথা বলাইছে। ওই বাঙালি আমাকে বলে, ওর মাথায় রড পড়েছে। এখন কোথায় জানতে চাইলে বলে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে আবার বলল, নাজমা মনে হয় হাসপাতালে মারাই গেছে। এ নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।



সালমা বলেন, পরে আমি আরবি ভাষার এক লোক দিয়ে ঢাকা থেকে কফিলের সাথে কথা বলাই। তখন কফিল তাকে বলেছে, গ্যাস সিলিন্ডার (আরবি ভাষায় বেনজিন মানে পেট্রল) বিস্ফোরণে নাজমা মারা গেছে। এ খবর শুনে গেলাম বনানী অফিসে। অফিস থেকে আমাদেরকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেয়। সেখানে মৃত্যুর কারণ রয়েছে লেখা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। তবে ওই কাগজে ডাক্তারের কোনো সই ছিল না। পরে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমরা আবেদন করি। দেড় মাস পর সেখান থেকে জানানো হয়, নাজমা বেগম মারা গেছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে সালমা বেগম বলেন, দূতাবাসের ডেথ সার্টিফিকেটে ৪ মার্চ নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে লেখা আছে। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সির দেয়া মৃত্যু সনদে স্ট্রোকে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। সময় দেয়া আছে ২৭ মার্চ, ২টা ৪০ মিনিট। এখানেই তো আমাদের সন্দেহ। আমরা মনে করছি নাজমাকে নির্যাতন করে মেরে কখনো আত্মহত্যা, আবার কখনো বলছে মাথায় রড পড়ে, আবার বলছে স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। পাশাপাশি কফিলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নাজমার বাবার নাম রায়হান মুন্সি। গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার দৌলতপুর উপজেলা। ঢাকায় থাকতেন কামরাঙ্গীরচরে। দালাল তছির মিয়াও কামরাঙ্গীরচর হুজুরপাড়ায় থাকেন। এ প্রসঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সি দ্য গাজীপুর ইন্টারন্যাশনালের অফিস স্টাফ নুর নবীর সাথে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.