Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

খাদ্যে ভেজাল: প্রাণ-এসিআইসহ ১৮ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা







খাদ্যে ভেজাল দেওয়ায় প্রাণ, এসিআই, সিটি ওয়েল মিল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলসহ ১৮টি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু খাদ্যপণ্যে ভেজাল থাকার বিষয়টি মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থা বিএসটিআই এর পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে।

বুধবার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খাদ্য আদালতে মামলা করা হয়। ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির।



বুধবার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে খাদ্য আদালতে মামলাটি করেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইনের ২৬ ধারায় নিম্নমানের পণ্য উৎপাদনের অভিযোগ আনা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

তবে যে ধারায় মামলা করা হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি এসব বড় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন তিন লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। সেই সঙ্গে এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। উভয় দণ্ড হওয়ারও সুযোগ রয়েছে।



অভিযোগ জমা পড়ার পর আদালত কী বলেছে- জানতে চাইলে কামরুল হাসান বলেন, ‘আগামী ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ তারিখ অনেক তারিখ আছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের জবাব দেবেন।’

খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ এত বড় কোম্পানির ছয় লাখ টাকা জরিমানা কোনো ব্যাপার না। আমরা একে বলব নরম, কোমল, মোলায়েম, আরামপ্রদ শাস্তি। এত বড় কোম্পানির পক্ষে এটা কোনো শাস্তি হলো? আসলে আমাদের কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের পক্ষে, ভোক্তাদের পক্ষে না। এটা নানা সময় তারা প্রমাণ করে। এই ধারায় মামলা এটা নতুন উদাহরণ আর কিছু নয়।’



আমলারা কীভাবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে জ্যেষ্ঠ এই অধ্যাপক বলেন, ১৯৫৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে খাদ্যে ভেজালের জরিমানা ছিল ১০০ থেকে ২০০ টাকা। তখনকার সময়ে এই জরিমানাটা বেশ বড় অংকের ছিল। তবে ২০০৫ সালে এটা যখন সংশোধন হয়েছে, আমরা বলেছিলাম শাস্তি বাড়ানো দরকার। সরকার অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ জরিমানা করেছে আড়াই হাজার টাকা। এটা রীতিমতো রসিকতা ছিল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমলাদের আঁতাত লুকনো থাকলো না। এরপর এরপর নিরাপদ খাদ্য আইন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন হলো। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমলাদের এক শ্রেণির সখ্যটা কাল হয়েছে। তারা এত কম শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে যে, সর্বোচ্চটা পেলেও ব্যবসায়ীদের কষ্ট না হয়।’



অধ্যাপক ফারুক বলেন, ‘কারণে এমন জরিমানা হতে হবে যে, সারা জীবন মনে রাখবে। নইলে তারা ভয় পাবে না। পশ্চিমা দুনিয়ায় তাই হয়। নিদেনপক্ষে মালয়েশিয়ার দিকে তাকালেও তো হয়।

মোট ৫২টি পণ্যে ভেজাল থাকার প্রতিবেদন পেয়ে গত ১২ মে এসব পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

যেসব পণ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে তীর, পুষ্টি ও রূপচাঁদা সরিষার তেল। ওষুধের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় নামা এসিআই এর লবণ ও ধনিয়ার গুঁড়ায় মিলেছে ভেজাল। ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী বাজার দখল করা প্রাণ কোম্পানির হলুদের গুঁড়া, কারি মশলা ও লাচ্ছা সেমাইও গুণগত মানে উত্তীর্ণ নয়।



ভেজালের তালিকায় আরো আছে ড্যানিস ফুড কোম্পানির কারি মশলা, ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের লাচ্ছা সেমাই, মোল্লা সল্ট লবণ, বাঘাবাড়ি স্পেশাল ঘি, সান চিপসের নাম। ডানকানের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের পানিও পানের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয়।

রোজার আগে খোলাবাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই। পরে তাদের ল্যাব পরীক্ষায় ৫২টি পণ্য অকৃতকার্য হয়। অর্থাৎ এগুলোতে ভেজাল ছিল। নানা সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে চোখে দেখে নমুনা পরীক্ষা না করেই বড় অংকের জরিমানা বা কারাদণ্ডের মতো আদেশ এসেছে। তবে পরীক্ষাগারে অকাট্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও এবার বিএসটিআই অনেকটাই চোখ বুঁজে থাকে।

পরে এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে উচ্চ আদালত। তবে এখনো সেভাবে গা করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

তবে আদালতের এই আদেশের পর বিএসটিআই নিম্নমানের পণ্য হিসেবে চিহ্নিত ৫২টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে নয়টি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এ ছাড়া ৪৫টি পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন স্থগিত করেছে।

অন্যদিকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গত শনিবারের মধ্যে ভেজাল পণ্যগুলো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। নইলে মামলা করা হবে বলে জানানো হয়। তবে মঙ্গলবারও রাজধানীর নিকুঞ্জে একটি সুপার শপে এসিআই এর লবণ বিক্রি হচ্ছিল। বিক্রেতার ভাষ্য, এগুলো কোম্পানি নিয়ে যায়নি। পয়সা দিয়ে তারা এগুলো ফেলে দিতে পারেন না।

নির্দেশ অমান্যের ফলে সেই ৫২টি পণ্য উৎপাদন ও বিপণণকারী ১৮ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় বলে জানিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। যদিও এই মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) হাইকোর্টে আমাদের রিপোর্টগুলো জমা দেওয়া হবে। এর আগে আমি বিস্তারিত আর কিছু বলতে পারব না।’

আদালতের নির্দেশ যা ছিল

৫২টি খাদ্য পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এসব খাদ্য পণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বাজার থেকে এসব পণ্য সরিয়ে ধ্বংস করা এবং মানের পরীক্ষায় কৃতকার্য না হওয়া পর্যন্ত তার উৎপাদন বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ১০ দিনের ভেতর এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি নামে একটি বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান রিট করলে এসব নির্দেশনা জারি করে আদালত।

রিটকারী আইনজীবী শিহাব উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলাটি হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে মামলা করেই শেষ করলে হবে না। এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হতে হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে হবে। সবাইকে নিয়মিত বাজার তদারকিতে থাকতে হবে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.