Beanibazarview24.com
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে দেশের রিজার্ভ দিন দিন শক্তিশালী হলেও বাৎসরিক বাজেটে প্রবাসী কর্মীদের জন্য কোনো বরাদ্দ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের দাবী, প্রবাসী কল্যাণে বাজেট বরাদ্দের সিংহভাগই খরচ হয় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতায়। সক্ষমতার অভাবে নেয়া যায় না বড় কোনো প্রকল্প। ফলে অব্যবহৃত টাকা ফেরত যায় সরকারি কোষাগারে। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে কর্মরত আছেন ১ কোটি ১০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। যারা গত বছর দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের প্রায় অর্ধেক। তারপরও বাজেটে থাকে না প্রবাসী কল্যাণে যথেষ্ট বরাদ্দ।
অবশেষে এবারের বাজেটে প্রবাসীদের জন্য সুখবর আসছে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বা লাভ দেওয়া হবে। প্রবাসীরা বছরে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাবেন, তার ওপর ৩ শতাংশ হারে এ সুবিধা দেওয়া হবে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা থাকছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে এ খবর প্রকাশ করেছে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিক।
বর্তমানে রফতানিযোগ্য বিভিন্ন পণ্যে একাধিক হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর বাইরে প্রথমবারের মতো সেবা খাত হিসেবে প্রবাসী আয়ে একই সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যারা বৈধ পথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাবেন, শুধু তারাই প্রণোদনা পাবেন। মূলত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে প্রবাসীদের এ সুবিধা দেওয়া হবে।
সরকার আশা করছে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি অর্থাৎ প্রবাসীদের জন্য এ সুবিধা কার্যকর হলে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুধু প্রণোদনা দিলে হবে না। নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছেন প্রবাসীরা। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। তাহলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। অন্যদিকে, জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি কমাতে হবে। তা না হলে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বন্ধ হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট রেমিট্যান্স পাঠান প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলার অর্থাৎ ১৫ বিলিয়ন ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় এক লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। ধারণা করা হয়, সমপরিমাণ রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অবৈধ পন্থায় বাংলাদেশে এসেছে। বিভিন্ন দেশে কতজন বাংলাদেশি কাজ করছেন, তার সঠিক রেকর্ড সরকারের কাছে নেই। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সংখ্যা এক কোটির ওপরে। জানা যায়, এদের বড় একটি অংশ অবৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনা দিতে এ খাতে তিন হাজার কোটি টাকা আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে বাজেটে। বাজেট ঘোষণার পর এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হবে। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় এটি তৈরি করবে। ওই নীতিমালার আলোকে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দেওয়া হবে। বর্তমানে রফতানিকে উৎসাহিত করতে পোশাক, কৃষিজাত পণ্য, বস্ত্র পাট ও চামড়াজাতসহ সতেরটি খাতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ এবং সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। এখন নতুন করে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দেওয়া হবে ৩ শতাংশ হারে।
জানা যায়, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তেমন সুযোগ সুবিধা পান না। বর্তমানে প্রবাসী আয় করমুক্ত। এর বাইরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। কম সুদে ব্যাংক ঋণ, রেমিট্যান্স ফি কমানোসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এদের সুযোগ-সুবিধা দীর্ঘ সময় ধরে আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন সংশ্নিষ্টরা। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.