Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ইউরোপের পথে পা.চা.র.কা.রী.দের ‘মৃ.ত্যু-গে.ম’


ভূমধ্যসাগর হয়ে অ.বৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের আগে অভিবাসীদের অপেক্ষা করতে হয় লিবিয়ার ত্রিপোলির উপকূলীয় এলাকার একটি ঘরে। তিন দিন সেই ঘরে চলে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার প্রশিক্ষণ। আর এখানেই শুরু হয় পা.চা.র.কা.রীদের ‘গে.ম’। মানব পা.চা.র.কারীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার মারাত্মক ঝুঁ.কিপূ.র্ণ যাত্রার এমন নাম দিয়েছে। ইতালি পৌঁছতে পারা না-পারায় নির্ধারণ হয় এই ‘মৃ.ত্যু-গেম.’-এর জয়-পরাজয়।

সম্প্রতি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে প্রা.ণ হা.রা.ন ৩৭ বাংলাদেশি নাগরিক। এরপর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার এই ‘মৃ.ত্যু-গে.ম’-এর বিষয়টি নতুন করে সবার সামনে আসে।

গত ২১ মে তিউনিশিয়া থেকে দেশে ফেরেন ১৫ বাংলাদেশি। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তারা। কিন্তু তিউনিশিয়ার উপকূলের কাছে তাদের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। দুই দিন সমুদ্রে ভেসে থাকার পর স্থানীয় জেলেরা দেখে কোস্টগার্ডকে খবর দেয়। রেডক্রিসেন্টের সহায়তায় কোস্টগার্ডের হেলিকপ্টার তাদের উ.দ্ধা.র করে।

দেশের ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের মধ্যে ১১ জনেরই বাড়ি সিলেট বিভাগে। এছাড়া কিশোরগঞ্জের ২ জন, মাদারিপুরের একজন। সিলেটের বিশ্বনাথপুরের পারভেজ তাদের দালাল। পারভেজের বাবা রফিকুল ইসলাম একই এলাকায় মানব পাচারের ব্যবসা করে। পারভেজ বর্তমানে লিবিয়ায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে লিবিয়ার স্থানীয় কিছু নাগরিকও এই ‘গে.ম’-এ জড়িত বলে জানা গেছে।

‘গেমের অংশ নৌযান চালনা, দিকনির্ণয় যন্ত্র পরিচালনা’
গোয়েন্দা সংস্থাসহ দেশে ফিরে আসা ১৫ জনের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউরোপ প্রবেশের আগের প্রস্তুতি শুরু হয় লিবিয়ার ত্রিপলিতে। যাত্রার দুই দিন আগে এই প্রস্তুতির মাধ্যমেই শুরু হয় ‘গে.ম’। এই গেমের মধ্যে আছে নৌযান চালনা, দিকনির্ণয় যন্ত্র পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ। এছাড়া ইতালির লেম্পুসা দ্বীপে প্রবেশের আগে কীভাবে সংকেত দিতে হবে এবং কার সঙ্গে কী কথা বলতে হবে, তাও শেখানো হয়। কারণ, এসব নৌকায় পাচারকারীদের কোনও প্রতিনিধি কিংবা এজেন্ট থাকে না।

কমপক্ষে ১৫০ জন প্রশিক্ষণ শেষ করলে যাত্রার তারিখ ঠিক করা হয়। এতে দুই-তিন দিন সময় পার হয়ে যায়। একসঙ্গে দুই-তিনটি নৌকা করে লিবিয়া থেকে ইতালির পথে রওনা হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। লিবিয়া বন্দর থেকে আরও দুই ঘণ্টা হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। হাঁটতে হাঁটতে কোমর পানিতে যাওয়ার পর নৌকা দাঁড় করানো থাকে। নির্ধারিত দিনে ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় ইতালির উদ্দেশে যাত্রা।
ভুক্তভোগীরা জানান, নৌকাগুলো সাধারণত মাছ ধরার ট্রলার হয়ে থাকে। তিউনিশিয়ার উপকূল ছাড়ার পর সেই নৌকা করে আর ইউরোপের সমুদ্রসীমায় ঢোকা যায় না। এজন্য ব্যবহার করতে হয় রাবারের তৈরি উদ্ধারকারী নৌকা। ২০-২৫ জনের ধারণক্ষমতার এই নৌকায় ৪০-৪৫ জন করে উঠতে হয়। খাবার হিসেবে সঙ্গে থাকে শুধু কেক, বিস্কুট আর পানি।

‘দা.লা.ল.কে দিতে হয় ১০ লাখ টাকা’
তিউনেশিয়া থেকে ফেরত আসা সিলেটের সোহেল আহমেদ  বলেন, “ইতালি যেতে সফল হওয়াই ‘গে.ম’। আমাদের যে নৌকায় ছেড়ে দেয় সাগরে ওইটাই মূলত ‘গে.ম’। ইতালি যাওয়ার জন্য দালাল পারভেজের কাছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ৬ মাস অতিক্রম করে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দা.লা.লরা এমনভাবে বলে যে ইতালি পৌঁছানো কোনও ব্যাপার না। ওদের কথা শুনে না গিয়ে পারা যায় না। গিয়ে যে এরকম পরিস্থিতিতে পড়বো তা তো বুঝি নাই। জীবন হাতে নিয়ে ফিরে আসছি।”

ভূমধ্যসাগরের ঘটনার পর ছেলে রাশেদ মিয়ার চিন্তায়

সুস্থ হয়ে পড়েন তার মা। ছেলে ফিরে আসছে জেনে এখন কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। তবে এরকম বিপদে পড়বে জানলে তিনি কখনও ছেলেকে পাঠাতেন না বলে জানান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বাসাবাড়িতে কাজ করে, দেনা করে, জায়গাজমি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ছেলেরে পাঠাইছিলাম। দালাল যেভাবে বলছে আমি মনে করলাম যাওয়া খুব সহজ। আমার ছেলে এভাবে মৃ.ত্যু.র মুখে পড়বে জানলে পাঠাইতাম না। প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো খরচ হইছে। ইতালি পাঠানোর আগে দা.লাল পারভেজরে টাকা দিতে বলছিল। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আড়াই লাখ টাকা জমা দিয়ে আসছিল রাশেদের বাবা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল পারভেজের বোনের।’

একাধিক মামলা দায়ের
এদিকে দালাল রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ১০-১১ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গত ১৬ মে বিশ্বনাথ থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা (নং- ৮) দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলো দালাল রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্তমানে লিবিয়ায় বসবাসকারী পারভেজ আহমদ (২৮), মেয়ে অনন্যা প্রিয়া ওরফে পিংকি, গোলাপগঞ্জ উপজেলার পুনাইরচর গ্রামের আব্দুল খলিলের ছেলে ও সিলেট রাজা ম্যানশনের ইয়াহইয়া ওভারসিজের কর্মকর্তা এনামুলক হক তালুকদার (৪৫) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সড়াইল থানার ছোট দেওয়ানপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ভূইয়ার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ভূইয়া (৩৪)।

ইউরোপের এই পাচারচক্র নিয়ে কাজ করেছে সিআইডি। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কাজ করছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’

এদিকে গত ১৭ মের নৌকাডুবিতে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় জড়িত চক্রের ৩ সদস্যকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তারা হলো মো. আক্কাস মাতুব্বর (৩৯), এনামুল হক তালুকদার (৪৬) এবং মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূইয়াকে (৩৪)।

র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, বিভিন্ন সিন্ডিকেট এই অবৈধ গমনাগমনের কাজে যুক্ত। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাগরপথে মাঝে-মধ্যেই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। তিনি জানান, গত ৯ মে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরের তিউনেশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে প্রায় ৮৫-৯০ জন নিহত ও নিখোঁজ হয়। তার মধ্যে অধিকাংশই ছিল বাংলাদেশি। এছাড়া মিসরসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকও রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পথে গমনাগমন ও প্রাণহানির ঘটনায় আন্তর্জাতিক ও দেশি মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশে ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যরা শরিয়তপুরের নড়িয়া ও সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় ২টি মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করেছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই অপরাধে সম্পৃক্ত আছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি বিদেশি চক্রের যোগসাজশে অবৈধভাবে ইউরোপে মানুষ পাঠায়।
গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি

র‌্যাব জানায়, ত্রিপলির এজেন্টরা দেশীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে ভিকটিমদের আত্মীয়স্বজন কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকে। পরে একটি সিন্ডিকেটের কাছে অর্থের বিনিময়ে ভিকটিমদের ইউরোপে পাচারের উদ্দেশে হস্তান্তর করা হয়। ওই সিন্ডিকেট তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখে। এরপর ওই সিন্ডিকেট সমুদ্রপথে নৌযান চালনা এবং দিকনির্ণয় যন্ত্র পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর নির্দিষ্ট দিনে ইউরোপের উদ্দেশে সাগরপথে রওনা দেয়। এই ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথে যাওয়ার সময় প্রায়ই ভূমধ্যসাগরে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.