Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচারণাকারীদের জবাব দিলেন সুমাইয়া







আমি যতবার পেয়েছি মাত্র এক পেনি করে, আমাকে বলা হলো ‘যত গণ্ডগোলের গোড়া হচ্ছে ধর্ম। নয়তো এত দিনে একজন ধনী মহিলা হয়ে যেতে পারতাম। যদি (বিটল গ্রুপের সঙ্গীতশিল্পী) জন লেননের মতো আমাদেরও থাকত ধর্মহীন পৃথিবী, তাহলে কোনো যুদ্ধবিগ্রহ, দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত থাকত না। তখন প্রত্যেকে ভালোবাসতো তার প্রতিবেশীকে। যদি কেবল ধর্মগুরু, মোল্লা মৌলভি, পুরুত-পাদ্রির। ঠিক হয়ে যেত, এক নিমিষেই দুনিয়ার সব সমস্যার হয়ে যেত সুরাহা।’



সন্দেহ নেই, আমাদের চার পাশে যত সঙ্কট ও সঙ্ঘাত, তার অনেকগুলোর পেছনে ধর্মেরও একটা ভূমিকা রয়েছে। তবে প্রায় সময়ে দেখা যায়, এগুলোর কারণ সামাজিক ও রাজনৈতিক হলেও নাম নেয়া হচ্ছে ধর্মের এবং ধর্মীয় মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে কথা বলার জন্য।

এর দৃষ্টান্ত উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং মধ্যপ্রাচ্য। যেসব সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর মাঝে দা-কুমড়ো সম্পর্ক, তাদের মাঝে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে। যেমন ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট খ্রিষ্টান, ইহুদি ও মুসলমান। দেখা গেছে, তারা ধর্মবিশ্বাসের কারণে বিপদে পড়েনি। তাদের দুঃখ-দুর্দশার মূল কারণটা রাজনৈতিক; যদিও তারা ধর্মের আবরণের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখে এবং ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে।



ইহলৌকিক নানা কারণে যে উত্তাপ-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, দেখা যায় ধর্মরূপী আয়নাতে। ধর্ম মানুষের মধ্যে বিভাজন আনে এটা বলা হলে বাস্তব সমস্যা বিশ্লেষণে মোটেও সহায়ক হবে না। আসলে এ কথা বলে সঙ্কটের ব্যাপারে ভাসাভাসা দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা হয়, কিন্তু সঙ্কটের গভীরে যাওয়া হয় না মূল কারণ উদঘাটনের জন্য।

ইরাকের কথাই ধরুন না। সেখানে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্প্রদায়গত রক্তপাত ঘটে চলেছে। সুন্নি আর শিয়ারা পরস্পরকে খুন করছে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে বহু লোক। ইরাকের সুন্নি অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়া উচিত হবে না যদি আপনার নামটা ঘটনাক্রমে ‘হাসান’ হয়ে থাকে। আর যদি হঠাৎ পথ হারিয়ে সদর সিটিতে চলে যান এবং কেউ আপনাকে ‘ওমর’ নামে ডাকে, তা হলে রাস্তার কোনায় গলা কাটা অবস্থায় আপনার জীবনাবসানের আশঙ্কাই বেশি।

কিন্তু এ পর্যন্ত বলেই থেমে গেলে চলবে না। আমাদের কিছু কঠিন প্রশ্ন করতে হবে, যেগুলো আমরা সাধারণত করি না। যেমন ইরাকের সুন্নি ও শিয়ারা এখন একে অন্যকে হত্যা করছে। কয়েক বছর আগেও এটা তারা করত না। কারণটা কী? আগে তারা সহাবস্থান করতে পারত, এখন তা অসম্ভব বলে কেন মনে করছে? ইরাকের প্রতিটি গোত্র ও পরিবারে সুন্নি ও শিয়া দুটোই রয়েছে। তারা পরস্পর মেলামেশা করতেন; তাদের মধ্যে হতো বিয়েশাদি। তারা শুধু পাশাপাশিই নয়, একই ছাদের নিচে বাস করতেন। একই বিছানায় পর্যন্ত শুতেন। এমনকি সাদ্দামের স্বৈরাচারী আমলেও এটা ছিল বাস্তবতা। সে সময় পর্যন্ত শত শত বছর ধরে ইরাক ছিল বিশ্বের সর্বাধিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানে বাস করত নানা ধর্ম, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের মানুষেরা। একই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে থাকত মুসলমান, খ্রিষ্টান, সার্বিয়ান, ইয়াজিদি, সুন্নি, শিয়া, কুর্দ, তুর্কম্যান।

এটা আগের ইরাক; আজকের ইরাক নয়। ইঙ্গ-মার্কিন দখলদারি আর ব্রেমারের অস্থায়ী কর্তৃপক্ষের কারণে ইরাকের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর জায়গা দখল করে নিয়েছে ধর্মীয়-নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীভিত্তিক বিভাজন। অখণ্ড জাতীয় পরিচিতি ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে গেছে; অভিন্ন পরিচয় নেই আর অবশিষ্ট। শুধু সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠীগত পরিচিতিই আছে বাকি। নৈরাজ্যের মাঝে প্রতিটি গ্রুপ সবকিছু দখল করে নিতে চাইল; অন্যদের করতে চাইল সবকিছু থেকে বঞ্চিত। নতুন ইরাকে নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশকে সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে গঠন করে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়া হয়েছে। এতে একটি গোষ্ঠীকে এমন সব সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হলো যা তারা পরে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করার জন্য ব্যবহার করবে।এমন এক পরিস্থিতির জন্য মুসলমানেরা শিয়া বা সুন্নি হওয়া দায়ী নয়। দায়টা বর্তায় বুশ-ব্লেয়ার-ব্রেমারের ওপর।

ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম কিংবা ইসলাম কোনোটাই মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের জন্য দায়ী নয়। ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিরা তাদের অবস্থানকে যুক্তিযুক্ত হিসেবে দেখাতে ধর্মীয় প্রতীক ও প্রসঙ্গ আনছে। বিরোধপূর্ণ স্থানটি উভয়ের কাছে পবিত্র। তবে সত্য হলো, প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হলেও মসজিদ, গির্জা বা অন্য কোনো উপাসনালয় এ সঙ্কটের কারণ নয়। প্রথম কথা হলো, ফিলিস্তিন সঙ্কটের সূচনা ভূমিকে কেন্দ্র করে। বঞ্চনা, বসতি, দখলদারি এবং মুক্তির দৃঢ়প্রত্যয় প্রভৃতি বিষয় এই ইস্যুর মূল কথা। ফিলিস্তিন সঙ্কটের ক্ষেত্রে সম্পর্কটা ইহুদি বনাম মুসলিম/খ্রিষ্টান যতটা, তার চেয়ে বেশি দখলদার ও বঞ্চিতের সম্পর্ক। কুরআন কিংবা ওল্ড টেস্টামেন্ট নয়, ‘বালফোর ঘোষণা’ এবং এ অঞ্চলে বৃহৎ শক্তিগুলোর অনুসৃত অপকৌশল এই দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক নাটকের জন্মদাতা ও গতিপথ নির্দেশক।

সমাজ ও রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত আন্দোলন ও ঘটনাবলির ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় নিরিখে। এটা যে সঙ্কটের প্রতি অগভীর দৃষ্টিভঙ্গি, সে ব্যাপারে আরো বহু নজির তুলে ধরা যায়। ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপের Reformation থেকে একবিংশ শতকের ইসলামিক মৌলবাদ পর্যন্ত এ কথা প্রযোজ্য। ধর্ম মানুষের সব গুণের যেমন কারণ নয়, তেমনি সব মন্দের মূলও নয়। উত্তম পরিস্থিতি ও শর্তাবলি উত্তম কিছুর জন্ম দেয়। ধর্মের বেলায়ও তা বলা যায়। তাই বাস্তবতার মন্দ দিকগুলো রূপ বদলিয়ে ‘মন্দ ধর্ম’ তৈরি করে। নৈরাজ্যকবলিত, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সঙ্কটে পরিপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য আজ লালন ও পুষ্ট করছে আলকায়েদা ও আইসিসের মতো চরম সহিংস মতাদর্শ।

মানুষ ও সমাজ নিছক সাদা কাগজ নয়। তারা শক্তিশালী সাংস্কৃতিক, প্রতীকী ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার বহন করে থাকে। এর মধ্য দিয়েই পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বাস্তবতাকে অর্থপূর্ণ করার কাজ চলে। শান্তি ও যুদ্ধ দুই সময়েই মূল্যবোধের দ্বারস্থ হতে হয় অনিবার্যভাবে। সঙ্ঘাত ও গোলযোগের সময় এর প্রয়োজন অধিক। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও জাতীয় পরিচিতির জাগরণ, সক্রিয়তা ও তীব্রতা ঘটে থাকে।

মার্কস বলেছেন, ‘ধর্ম হচ্ছে এমন এক বিভ্রান্তি যা বাস্তবে অতিরিক্ত বিদ্যমান।’ তার উক্তিটি ঠিক নয়। ধর্ম হলো, ব্যক্তি ও সমষ্টির স্মৃতিসম্ভার ও চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধর্মের মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতাকে অর্থবহ এবং কর্মকাণ্ডকে যুক্তিযুক্ত করা হয়। শান্তি ও স্থিতির সময়ে ধর্ম সবার অগোচরে নীরবে ভূমিকা পালন করে যায়। অন্য দিকে সঙ্কট ও অস্থিতিশীলতার মাঝে ধর্ম হয়ে ওঠে সরব ও দৃশ্যমান, এমনকি কখনো বা বিস্ফোরিত হয়। বৈশিষ্ট্যগতভাবে শতভাগ শান্তিপূর্ণ বা আগ্রাসী নয় কোনো ধর্ম। যেমন- খ্রিষ্টধর্ম সাত্বিকতা ও পারলৌকিকতায় প্রেরণা দিয়েছিল। আবার ষোড়শ শতাব্দীতে দ্বন্দ্ব-বিভেদ এবং ক্রুসেডের মতো ধর্মযুদ্ধের আগুনও জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
বাস্তবতাকে নিছক ধারণা দিয়ে এবং গৎবাঁধা দৃষ্টিতে না দেখাই উচিত। মানুষ তার মাথা দিয়ে নয়, পা দিয়ে হাঁটে।

লেখিকা: তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ
ভাষান্তর: মোহাম্মদ আবু জাফর

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.