Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

হেঁটে হজ আদায়, ১০৭ বছর বয়সেও থেমে নেই দ্বীনের কাজ







১০৭ বছর বয়সেও ইসলামের সেবা করে যাচ্ছেন দিনাজপুরের হাজি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি ৩০টি দেশ সফর করে হেটে হজ করতে গিয়েছিলেন। যেটুকু জীবন আর বাঁচবেন সেটুকু ইসলামের জন্য কাটিয়ে দেওয়ার পূর্ণ ইচ্ছা এই বয়োবৃদ্ধ হাজির।

দিনাজপুর শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত রামসাগর জাতীয় উদ্যান। আর এই উদ্যানে ঢুকে পশ্চিমের রাস্তা ধরে বামে ঘুরে কিছু দূর যেতেই চোখে পড়বে রামসাগরের পাষাণ বাঁধা ঘাট আর পশ্চিম দিকে দেখা যাবে একটি মসজিদ। সেখানেই এই পাষাণ বাধা ঘাটের সামনের রাস্তার ধারে চোখে পড়বে অশীতিপর এক বৃদ্ধ। যিনি রামসাগরে আগত সব পর্যটককে আহ্বান জানান রামসাগর দীঘিপাড়া হাফেজিয়া ক্বারিয়ানা মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করার জন্য।



এই মানুষটিই বাংলাদেশ থেকে ৩০ দেশের উপর দিয়ে হেঁটে সৌদি আরব গিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন। তিনি হলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার রামসাগর দিঘীপাড়া গ্রামের মৃত ইজার পণ্ডিত ও মমিরন নেছার ছেলে জাতীয় উদ্যানের বায়তুল আকসা জামে মসজিদের সাবেক ইমাম হাজি মো. মহিউদ্দিন।

পায়ে হেঁটে হজ করতে যেতে তার সময় লেগেছিলো আঠারো মাস। এ আঠারো মাসে তিনি পাড়ি দিয়েছেন কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ। এ সময় তিনি সফর করেছেন ৩০টি দেশ। আর যে দেশগুলো তিনি সফর করেছেন সেগুলোর নাম এখনও মুখস্থ বলতে পারেন।



১৯১৩ সালে জন্ম নেওয়া এই অদম্য মানুষটির বয়স এখন ১০৭। হাজি মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন রামসাগর জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত বায়তুল আকসা মসজিদের দীর্ঘদিন ইমাম ছিলেন। বয়সের ভারে ইমামের পদ থেকে অবসর নিলেও ছাড়েননি ইসলামের সেবা করা। তাই তিনি মসজিদের সামনের রাস্তার ধারে ১টি চেয়ার ও ১টি টেবিল নিয়ে বসে পড়েছেন। সারাদিন রামসাগরে আগত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে মসজিদের উন্নয়নের জন্য সাহায্যও চান।

আবার অনেক দর্শনার্থী তার হেটে হজ করার কথা শুনে তার সাথে দেখাও করতে আসেন। তার মুখে শুনেন কিভাবে আর কোন দেশের উপর দিয়ে হেটে হজ করতে গেলেন। আর দর্শনার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি কোন দ্বিধাবোধ করেন না। সব সময় তাদেরকে সব কিছু খুলে বলেন। সারাদিন যদি ২০ জন দর্শনার্থী আসে হেটে হজ করার বিষয় প্রশ্ন করলেও তিনি ২০ জনকেই সব উত্তর বলে দেন। হন না কোনো রকম বিরক্ত।



রামসাগরের পাষাণ বাধা ঘাটের সামনের রাস্তার ধারে তাঁর বসার স্থানে হাজি মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। পায়ে হেঁটে হজ পালন প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৬৮ সালে হজ করার উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে দিনাজপুর থেকে রওনা দেন৷ দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে প্রথমে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে যান। সেখানে গিয়ে পায়ে হেঁটে হজ পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে, তৎকালীন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা আলী আকবর হেঁটে যেতে ইচ্ছুক অন্য ১১ জন হজযাত্রীর সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। শুরু হয় ১২ জনের হজযাত্রা।



চট্টগ্রাম দিয়ে ভারত হয়ে পাকিস্তানের করাচি মক্কি মসজিদে গিয়ে অবস্থান করে সৌদি আরবের ভিসার জন্য আবেদন করেন। আট দিন পর সৌদির ভিসা পান। পাসপোর্ট ও ভিসা করতে খরচ হয় ১ হাজার ২০০ টাকা।

তিনি আরও জানান, ভিসা পেয়ে পাকিস্তানের নোকঠি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইরানের তেহরান হয়ে ইরাকের বাগদাদ ও কারবালা দিয়ে মিসর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব পৌঁছান। পথে ফেরাউনের মরদেহ দেখার ইচ্ছাও পূরণ হয় ১২ জন হজযাত্রীর।



সৌদি আরবে গিয়ে হজ পালন শেষে আল্লাহর রাস্তার ধুলো পায়ে লাগিয়ে হেঁটে হেঁটেই ফিরে আসেন নিজ পরিবারের কাছে। এ সময় তিনি ৩০টি দেশ পাড়ি দেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান থেকে ঘুরে আসার অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। তবে নিজেকে ধন্য মনে করি।

কেমন কষ্ট হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি কোনো কষ্ট করেছেন বলে মনে করেন না। উল্টো তিনি বলেন, কষ্ট করেছেন আমার সহধর্মিনী আবেদা বেগম। অভাব অনটনের মধ্যে আমার ইচ্ছার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আমাকে উৎসাহিত করেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বেশ ভালো আছেন বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, চার মেয়ে ও দুই ছেলে সবার বিয়ে হয়েছে। অভাব বলে কিছু নেই।

হাজি মো. মহিউদ্দিন বয়সের কারণে মসজিদের ইমামতি ছেড়ে দিয়েছেন। মেয়েদের সহযোগিতায় বেশ চলে যায় তার সংসার। সময় কাটে রামসাগর দীঘিপাড়া হাফেজিয়া ক্বারিয়ানা মাদরাসা ও এতিমখানার জন্য মানুষের কাছে সহায়তা চেয়ে।

তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, পাসপোর্ট ও ভিসা করতে খরচ হয় ১ হাজার ২০০ টাকা আর ১ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা দেন। কিন্তু পথে ১২ জন হজযাত্রীর দল যেখানেই খেতে গেছেন, কেউ টাকা নেননি। ফিরে আসার সময়ও ছিল একই অবস্থা। এ কারণে কোনো টাকা খরচ হয়নি। পুরো টাকাই তার ফেরত এসেছিল।

বয়সের কারণে মুড়িয়ে যাওয়া হাজি মো. মহিউদ্দিনের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি কিছুটা কমে গেছে। লাঠি ছাড়া ঠিকমত হাঁটতে পারেন না আর। কিন্তু সে সময়ের কোনো স্মৃতিই তিনি ভুলে যাননি। কেউ জিজ্ঞাসা করতেই মুখ থেকে ঝরতে থাকে কথার ফুলঝুরি। সকলের কাছে বলতে চান সেসব দিনের কথা। সর্বপরি তিনি সবাইকে একবার হলেও আল্লাহর ঘর তওয়া করার আহ্বান জানান। যে টুকু জীবন তিনি আর বাঁচবেন সে টুকু জীবন ইসলামের সেবা করে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।

জেলার বিরামপুর উপজেলা থেকে আগত দর্শনার্থী আকরাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি শুনেছেন হাজি মোঃ মহিউদ্দিন হেটে ৩০টি দেশ পারি দিয়ে হজ করেছেন। তার এই কথা লোক মুখে শুনে এই হাজির সঙ্গে দেখা করতে তিনি এখানে এসেছেন। তিনি হাজি সাহেবের কাছে ইতিহাস শুনে অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, তার এই বয়সেও ইসলামের পথে কাজ করার অপরূপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।














You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.