Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

প্রত্যেক প্রবাসী এক একটা মোমবাতি, নিজে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে পরিবারকে আলোকিত করে







একটা মোমবাতি – মোমবাতির ভেতর সুতা থাকে। সুতায় আগুন দিলে সেই আগুন অন্ধকার দূর করে সবাইকে আলোকিত করে আর মোম গলে যায়। ঠিক তেমনি একজন প্রবাসী একটি মোমবাতির মতো। নিজে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে তার পরিবারকে আলোকিত করে, দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। অথচ সেই প্রবাসীরা দেশে আসলে নানা ভোগান্তির শিকার হন। তাদের কষ্ট কেউ দেখে না, বুঝতে চেষ্টাও করে না।



পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও উন্নত জীবনের আশায় প্রতিদিন হাজার হাজার যুবক পাড়ি জমাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। অনেকেই আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমায় সমুদ্র পথে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি প্রবাসীর বসবাস। এই প্রবাসীরা রাত-দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে যায় শুধুমাত্র পরিবারের সুখের আশায়।

কাজের ব্যস্ততার কারণে খেয়ালই থাকে না কোন ফাঁকে যে নিজের জীবনের সুন্দর মুহূর্ত রঙ্গিন দিনগুলো চলে গেছে। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা, কাজের ক্ষেত্রে নতুন নতুন নিয়ম চালু করেছে বিদেশের স্থানীয় প্রশাসন।



এই রকম প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও নিজের কষ্টটুকু বুঝতে দেয় না পরিবারকে। দুই ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে যেমন সবাই মজা আনন্দ করে প্রবাসে ঈদের দিনেও কাজে যেতে হয়। কর্মস্থলে সহপাঠীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নেয় নিজেদের মতো করে। বেশিরভাগ প্রবাসী ঈদের নিজের জন্য কিছু কেনে না পুরাতন জামায় ঈদ করে পরিবারের কথা ভাবে কত দ্রুত টাকা পাঠাবে সবাই ঈদের নতুন কাপড় কিনবে।



পরিবারের খুশীই হলো প্রবাসীর ঈদের আনন্দ। আবার বেশিরভাগ দেশেই নিজ দেশের বাংলাদেশিদের কারণে বেতন, আকামাসহ নানা ধরনের ঝামেলার মধ্য দিন কাটে প্রবাসীদের দিন। মাস শেষে যখনই বেতন হাতে পায় সেই বেতনের টাকা কখন দেশে পরিবারে কাছে পাঠাবে সেই চিন্তায় অস্থির থাকে প্রবাসীরা।

আবার অনেক সময় দেখা যায় কাজ করেও মাস শেষে ঠিকমতো বেতন পায় না। বেতন দিতে দেরি হলে দেশ থেকে ফোন আসে মাসতো শেষ টাকা কোথায়? পাড়ার দোকানে ও পাওনাদাররা আসছে। আরও শোনায় নানা ধরনের কথা, পরিবারের বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নানাবিধ চিন্তায় বাসা বাঁধে হৃদরোগের মতো নীরব ঘাতক।



প্রতিদিন শোনা যাচ্ছে ওমুক নামের এক প্রবাসী ভাই স্ট্রোক করে মারা গেছে। কেউ ছাদ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে। এই ধরনের সংবাদ প্রতিদিনই চোখে পড়ে ফেসবুক খুললে। যাদের আত্মীয়-স্বজন থাকে মৃত প্রবাসীর মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠাতে সম্পন্ন করতে শুরু করে আইনি কার্যক্রম। একটার পর একটা চায় বিভিন্ন জনের সহযোগিতা নানাজন নানাভাবে সহযোগিতা করে কফিন বন্দি করে দেশে পাঠায়।

কোনো প্রবাসী বিদেশে মারা গেলে বাংলাদেশ সরকার লাশ দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে তিন লাখ টাকা প্রদান করে। কিন্তু কেউ একজন বিদেশে মারা গেলে একটি লাশ কিভাবে দেশে আসে সেই খোঁজ কেউ রাখে না। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন গুঞ্জন করে লাশের সঙ্গে কত টাকা আসছে?

শুধুমাত্র মা-বাবা ছাড়া প্রায় সবার মনে এই কৌতুল জাগে কত টাকা এসেছে কফিনের সঙ্গে। লাশ আসার আগে পাওনাদারেরা এসে বসে থাকে বেশিরভাগ শ্রমিক হিসেবে কম বেতনে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। এমনও প্রবাসীর মরদেহ হিমঘরে বক্সে পড়ে আছে যার খোঁজ-খবর নেয়ার কেউ নেই।

দেখা যায় এদের মধ্যে বেশিরভাগ নকল পাসপোর্ট, বা অবৈধ পথে আসা প্রবাসীরা। অনেক সময় বাংলাদেশের নাগরিক ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, অন্যদেশে পাসপোর্ট নিয়ে প্রবেশ করেন। তথ্য গড়মিল থাকার কারণে খোঁজ না পেলে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন দিয়ে দেয়া হয়।

দূতাবাসের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে কুয়েতে ২১৭ ও ২০১৮ সালে ২৫৩ জন প্রবাসী মারা গেলে তার মধ্যে বেশিরভাগ স্ট্রোক করে মারা গেছে। এ ছাড়াও এই সাধারণ প্রবাসীরা যখন ধার-দেনা শোধ ও পরিবারের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে একটু বেশি টাকা আয়ে আশায় নিজের শরীরের প্রতিও খেয়াল রাখে না। একটা সময় দেখা যায় সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে হাসপাতালের বেডে, টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা চলে না।

ফেসবুক বা কোনো সংবাদ মাধ্যমে যখন প্রচার হয় তখন অনেক সময় প্রবাসী মিলে সহযোগিতা করে দেশে পাঠানো ব্যবস্থা করে। পরিবারে সুখের জন্য আসা প্রবাসীরা যখন অসুস্থ হয়ে দেশে যায় কিছুদিন পর টাকার অভাবে সেই প্রবাসী ও তার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করে। আগে যেই পরিবার দশজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে এখন চোখ শরমে আত্মীয়-স্বজন কারো কাছে বলতে পারে না নীরব কান্না আর নীরব দুঃখে জীবন যায় তাদের।

তাই বিদেশে প্রত্যেক প্রবাসীদের উচিত আগে নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখা। যদিও এখানে বেশিরভাগেরই পরিবার থাকে না। মনের প্রশান্তির জন্য কাজের ফাঁকে ছুটির দিনগুলোতে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলিত হলে মনে মধ্যে দুঃখ-কষ্ট কম থাকে মানসিক চাপ ও অশান্তি কমে যায়।

প্রতিটি প্রবাসী তার পরিবারের শান্তি ও সুন্দরের জন্য পরিশ্রম করে আয় করে সেই আয়ের কিছু টাকা নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা বীমা করে রাখা যাতে হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা সময় কাজে লাগাতে পারে। কারণ, বিপদে পড়লে অনেক কাছের মানুষকে আর পাশে পাওয়া যায় না। এরই নাম প্রবাস জীবন।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.