Beanibazarview24.com
গত ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়াতে ঘটে যায় এক নির্মম পাশবিক ঘটনা। চার দিন মন্দিরে আটকে রেখে মাদক খাইয়ে আচ্ছন্ন করে গণধর্ষণ করে মাথা থেঁতলে খুন করা হয় আট বছরের এক মুসলিম শিশুকে। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে শুরু হয় প্রবল আলোড়ন। মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক সাধ্বী রাম, তিন পুলিশ কর্মী-সহ মত আট জন অভিযুক্ত হয়।
আশ্চর্যজনক ভাবে অভিযুক্তদের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখায় ‘হিন্দু একতা মঞ্চ’ নামে এক সংগঠন। মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক অভিযুক্তদের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখায়। ঠিক সেই সময়ে নিজের বিপদের তোয়াক্কা না করে শিশুটির হয়ে মামলা লড়ার গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন আইনজীবি দীপিকা সিংহ রাজাওয়াত।
অনেকেরই জানা নেই কাঠুয়া কাণ্ডে তিনিই প্রথম ‘রিট পিটিশন’ দায়ের করেন। এই কারণেই তার বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদও বাতিল হয়ে যায়। গণ্ডগোলের সুত্রপাত ঠিক তার পরেই। দেশজুড়ে বাড়তে থাকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চাপানউতোর। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের বিরোধিতা, ক্রমাগত ধর্ষণের হুমকি, তার নয় বছরের মেয়েকে প্রাণে মারার হুমকি, দেশদ্রোহী উপাধি, কিছুই দমাতে পারেনি তাকে।
নিজে কাশ্মীরী পণ্ডিত সম্প্রদায়ের হয়েও মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানো এই মানুষটির নৈতিক জয় হয় গত ৩ জুন, ২০১৯। শাস্তি পায় কাঠুয়া কাণ্ডে অভিযুক্তরা। তার এই অসামান্য সাহসিকতার জন্য ১১জুন ২০১৮ ‘ইন্ডিয়ান মার্চেন্ট চেম্বার’-এর মহিলা শাখা তাকে ‘উম্যান অফ দ্য ইয়ার’ শিরোপায় ভূষিত করে।
১৯৮০ সালে জম্মু-কাশ্মীর-এর কারিহানা গ্রামে জন্ম এই বিশিষ্ট আইনজীবীর। যোধপুরের ‘ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি’ থেকে আইনে স্নাতক হয়ে বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। ব্যক্তিগত জীবনেও খুবই সুখী তিনি। রয়েছে নয় বছরের ছোট্ট মেয়ে অষ্টমী। কাঠুয়া ধর্ষণ কাণ্ডের পর বাচ্চাটিকে নিয়েও নানান ধরনের হুমকির সম্মুখীন হন দীপিকা।
মানবাধিকার এবং শিশুকল্যাণের জন্য কাজ করা এনজিও ‘ভয়েস অফ রাইট’-এর ও চেয়ারপার্সন তিনি। নির্ভয়া, আলিগড়, কাঠুয়া থেকে বাংলার কামদুনি, একের পর এক নৃশংসতা যখন ঘটে চলে তখন দীপিকারাই জ্বালিয়ে রাখেন আশার দীপশিখা।
সূত্র: নিউজ ১৮।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.