Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ধর্ষণের শিকার বিদেশ ফেরত এক নারীর করুণ কাহিনী







দুই সন্তানের জননী আয়শা (২৮) (ছদ্মনাম)। স্বামী নেশাগ্রস্ত। বাবা থেকেও নেই। আয়শার বয়স যখন তিন মাস তখন তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতেন। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে ঢাকায় চলে আসেন আয়শার মা মাফিয়া। মানুষের বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ নেন। গত ২৮ বছর ধরে তিনি এই কাজই করে চলেছেন।



এর মধ্যে আয়শাকে বিয়ে দেন বাস হেলপার তৈয়ব আলীর সঙ্গে। প্রথম দিকে সংসার ভালো চললেও কিছুদিন পর নেশায় জড়িয়ে পড়ে ওই হেলপার। আয়শার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। দুই সন্তানকে নিয়ে আয়শা ফিরে আসেন তার মায়ের কাছে।

জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে একসময় পাড়ি জমান বিদেশ। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি তার। বিদেশের মাটিতে নানা নির্মমতার শিকার হন তিনি। সেই নির্মমতার মাত্রা ছিল খুবই ভয়াবহ। যার পরিণতিতে এখন তিনি শয্যাশায়ী। দীর্ঘদিন ধরে পঙ্গু। চলাফেরা করতে পারেন না। নষ্ট হয়ে গেছে একটি কিডনি। এ অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে তিনি এখন মৃত্যু পথযাত্রী। তার জন্য কাজেও যেতে পারছেন না মা মাফিয়া। ফলে নিদারুণ কষ্টে কাটছে আয়শার দুই সন্তানসহ ৪ সদস্যের এ পরিবারের।



পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার মিঠাখালী গ্রামের আয়শার মা জানান, ২৮ বছর আগে আয়শার(ছদ্দনাম) বয়স যখন তিন মাস তখন তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে। জীবিকার তাগিদে তখন দুধের শিশুকে নিয়ে তিনি ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকার দয়াগঞ্জে চলে আসেন। সেখানে একটি খুপড়িঘর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ নেন।



প্রায় ১৪ বছর আগে মেয়েকে বিয়ে দেন এলাকার তৈয়ব আলী নামে এক বাস হেলপারের সঙ্গে। সেখানে তার দুই সন্তান জন্ম নেয়ার পর তৈয়ব আলী নেশায় জড়িয়ে পড়েন। প্রায়ই মেয়ের ওপর নির্যাতন করতো সে। এক সময় দুই সন্তান নিয়ে তার এখানে চলে আসে। আয়শা সে সময় ঠোঙ্গা তৈরির কাজ করতো। মা-মেয়ের আয়-রোজগারে কোনোরকম কেটে যাচ্ছিল তাদের সংসার।



এ অবস্থায় আয়শার ওপর নজর পড়ে একই এলাকায় বসবাসকারী শরিয়তপুরের নেকাব্বর নামে এক ব্যক্তির। সে আয়শাকে বলে ‘তোমার মতো একজন সুন্দরী মেয়ে এ কাজ করলে মানায় না। তুমি বরং বিদেশ চলে যাও। সেখানে ভালো কাজ পাবা। তোমার বেতন হবে ২০-২৫ হাজার টাকা।’

প্রথমে রাজি না হলেও পরে নানা প্রলোভনে পড়ে এবং দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আয়শার মা তিলে তিলে জমানো ৪০ হাজার টাকা নেকাব্বরের মাধ্যমে তুলে দেয় আল রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল নামে ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে কর্মরত সিরাজের হাতে। ওই এজেন্সি তাকে কাতার পাঠায়। সেখানে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন।



আয়শার মা মাফিয়া জানান, তার মেয়ে ওই সময় জানিয়েছিল, সেখানে ভালো আছে। কাজের খুব বেশি চাপ নেই। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে সিরাজ ফোন করে তাকে লেবাননে মোটা অঙ্কের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দেশে চলে আসতে বলে। সিরাজ তাকে পরামর্শ দেয় ওই বাসা থেকে পালিয়ে আসতে। যেন পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। সে মোতাবেক পালিয়ে আসলে পুলিশ তাকে ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়।

কাতারে কাজ করা বাবদ সে কোনো বেতন না নিয়েই দেশে ফিরে আসে। দেশে আসার পর সিরাজ লেবানন পাঠাবো বলে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বহু কষ্টে ধারদেনা করে ভালো আয়-রোজগারের আশায় তারা সিরাজকে ওই টাকা দেয়।




আয়শাকে বলা হয়, সেখানে তাকে টেইলারিংয়ের কাজ দেয়া হবে। কিন্তু আল রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি তাকে লেবানন না পাঠিয়ে ২০১৫ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এক দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে তাকে কোন বেতন দেয়া হতো না। প্রতিদিন ৪-৫ জন পুরুষ তার ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালাতো। রাজি না হলে শরীরে বিদ্যুতের শক দিতো এবং হাতের সামনে যা পেতো তাই দিয়ে মারধর করতো।

এতে করে আয়শা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। সিরিয়ায় তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে ওই অবস্থায়ই তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় দালালচক্র। মাফিয়া বলেন, প্রায় চার মাস মেয়ের কোনো খোঁজ-খবর ছিল না।




গত জানুয়ারি মাসে একজন ফোন করে বলে, আয়শা হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসেছে। তখন গিয়ে দেখি মেয়ের পেট ফোলা। সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। দেখে চেনার উপায় ছিল না। সেখান থেকে নিয়ে সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ টাকা খরচ হয়। একমাস পর আর টাকা যোগাড় করতে না পেরে বাড়িতে নিয়ে যায়। আয়শার মা বলেন, তার একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটি কিডনিতে ইনফেশন হয়েছে। তাছাড়া সে এখন পঙ্গু। চলাফেরা করতে পারে না। দয়াগঞ্জে একজন ডাক্তারকে দেখানো হয়। সেখানে গেলেই ৬০০ টাকা ভিজিট দিতে হয়। ইতিমধ্যে চিকিৎসা বাবদ সুদে ধারদেনা ৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এখন আর কোনো উপায় নেই।




তাই বাসায়ই পড়ে আছে। তার জন্য মাফিয়া বেগম নিজেও কাজে যেতে পারেন না। একদিকে মেয়ের চিকিৎসা অন্যদিকে সংসারের দৈনন্দিন খরচ। এই নিয়ে দিশেহারা তিনি। আয়শার দুই ছেলের মধ্যে বড়টার বয়স ১২ বছর আর ছোটটার বয়স ১০ বছর।

আয়শার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার আমার কথা বলতে খুব কষ্ট হয়। বিছানা থেকে উঠতে পারি না। এদিকে আয়শাকে সিরিয়ায় পাচারকারীদের বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার ওপর নির্যাতনকারী এজেন্সির শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ এবং সাহায্যের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আবেদনে সরকারি খরচে চিকিৎসা করানোর জন্যও অনুরোধ করা হয়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.