Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

জীবন কাটল লন্ডনে, এখন ঢাকার বৃদ্ধাশ্রমে (ভিডিও)







ষাটোর্ধ্ব সালেমা আমজাদ। তাঁর জন্ম যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। শৈশব, কৈশোর থেকে শুরু করে পড়ালেখা বেড়ে উঠা সবটাই ওই শহরে। পরে বিয়ে, চার সন্তানের জননী হওয়া; সেও ওই লন্ডনে। জীবনের দীর্ঘ সময় স্বামী আর চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দময় জীবন কাটিয়েছেন সালেমা।

কিন্তু জীবন চিরকাল একই রকম থাকেনি সালেমার জন্য। সন্তানরা ক্রমে বড় হয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একপর্যায়ে খুব ভালো ভালো কাজের সুযোগ পান। চাকরিবাকরি, সংসার, সন্তানসহ নিজেদের মতো গুছিয়ে ফেলেন যার যার জীবন। শুধু তাদের কারো পরিবারেই জায়গা হয়নি বয়স্ক মা সালেমার। ছেলেমেয়ে সবার কাছেই তিনি থেকে গেছেন উপেক্ষিত।



একপর্যায়ে ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে লন্ডনের উন্নত জীবন ছেড়ে শূন্যহাতে চলে আসেন বাংলাদেশে বাবার জন্মভিটা খুলনায়। সেখানেও খুঁজে পাননি কোনো স্বজন। শেষমেশ ফরিদপুরের এক সাংবাদিকের সহায়তায় ঠাঁই হয় রাজধানীর কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে। আড়াই বছর ধরে সেখানেই কাটছে তাঁর দিন।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে গিয়ে এ রকম অর্ধশতাধিক বৃদ্ধ মা-বাবার খোঁজ মেলে। তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র ও সমাজের নানান গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেখা মিলল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরও। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার এক স্ত্রীকে দেখা গেল বিছানায় শুয়ে কাঁদছেন আর চোখের পানি মুছছেন। জীবনের সবকিছু উজাড় করে তারা একদিন নিজেদের সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আর আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে উপেক্ষিত তাদের আশ্রয় হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে।



কল্যাণপুরের খান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে বৃদ্ধাশ্রমটির গেট গলে ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, টেবিলে বসে আনমনে কাজ করছেন মাঝ বয়সী এক লোক। তিনি মিল্টন সমাদ্দার, এ বৃদ্ধাশ্রমের চেয়ারম্যান। নিজের উদ্যোগেই গড়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটি। তাঁর সঙ্গে কথা শুরু করার কিছুক্ষণ পরই সেখানে হাজির হন সালেমা আমজাদ।

মিল্টন সমাদ্দারের কাছে সালেমার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘তিনি আমার মা। এ বৃদ্ধাশ্রমেরই বাসিন্দা। ওনার মতো আমার আরো ৫৬ জন মা-বাবা এখানে রয়েছেন। কিছু জানতে চাইলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেই জেনে নিন।’



এখানে কেমন আছেন জানতে চাইলে সালেমা বলেন, ‘বেশ ভালোই আছি। ছেলের কাছে থাকলে মা কখনো খারাপ থাকে না। আমিও খারাপ নেই।’ বৃদ্ধাশ্রমের উদ্যোক্তা মিল্টনকে এভাবেই ছেলে বলে সম্বোধন করেন সালেমা। নিজের পরিবার, সংসার আজ তাঁর কাছে সুদূর অতীত। এ প্রতিষ্ঠানটিই এখন হয়ে উঠেছে তাঁর একমাত্র আপন।



বিগত জীবনের কথা জানতে চাইলে বয়স্ক এ মা বলেন, ‘উন্নত দেশে উন্নত পরিবেশেই কেটেছে আমার জীবনের বেশির ভাগ সময়। লন্ডন শহরে আমার জন্ম। সেখানেই পড়ালেখা করেছি। বিয়ে হয়েছে সে শহরেই। আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে। তাঁদেরও বিয়ে হয়েছে, প্রত্যেকের ঘরে সন্তান-সন্ততি আছে। কিন্তু তাঁদের কারো ঘরে আমার জায়গা হয়নি। তাঁরা যার যার মতো করে চলে গেছে। এক পর্যায়ে আমি সরকারের আশ্রয়ে চলে যাই। সে সহায়তা নিয়েই আমি চলতাম। পরবর্তীতে চলে আসি বাবার দেশে।’ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি সালেমা।



সন্তানদের কথা মনে পড়ে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি জানি তাঁদের কথা মনে হলেও আমার কোনো লাভ নেই, এ জন্য মনে করতে চাই না।’ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিল্টন সমাদ্দারকেই এখন নিজের সন্তান বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমার পাঁচ সন্তান ছিল। আমি আমার চার ছেলে মেয়ের কাছে স্থান না পেয়ে বড় ছেলের কাছে চলে এসেছি। আমাকে এখান থেকে কেউ নিতে পারবে না। আর আমিও আমার বড় ছেলেকে ছেড়ে কোথাও যাব না। এখানেই থাকতে চাই। এখানে থেকেই আমি মরতে চাই।’




‘যত দিন বাঁচব এখানেই থাকব, এটাই আমার ঠিকানা। সন্তানদের কাছে আমি আর ফিরে যেতে চাই না। তাঁরা আমার খবর নেবে, এটা আমি আর আশাও করি না। যখন তাঁদের সামনে ছিলাম, তখনই তাঁরা আমার খোঁজখবর নেয়নি। সরকারি সহায়তা নিয়েই আমাকে লন্ডনে চলতে হয়েছে। আমি চলে আসায় তারা হয়তো বেঁচে গেছে।’

নিজের তর্জনি উঁচু করে সালেমা বলেন, ‘এই যে দেখুন আমার আঙুলটার দিকে। যেহেতু এটি আমার শরীরের সঙ্গে আছে তাই আমি দাবি করতে পারি এটি আমার। এ ছাড়া আর কিছুকেই আমি আমার বলে দাবি করতে পারি না।’




এ বৃদ্ধশ্রমে সালেমা আমজাদের আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘২০১৬ সালের শেষ দিকে ফরিদপুর থেকে আমার এক পরিচিত সাংবাদিক ফোন করে তাঁর খোঁজ দেন, এবং অনুরোধ করেন এখানে তাঁকে আশ্রয় দিতে। আমি রাজি হলে তাঁকে পাঠিয়ে দেন। তখন থেকেই তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। এখানে ওঠার পর থেকেই তিনি আর অন্য কোথাও যাবেন না বলে আমাকে জানিয়ে দেন।’

‘তাঁকে না জানিয়েই আমি তাঁর নিকটাত্মীয়দের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। ফেসবুকে তাঁর ছবি দিয়ে ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়স্বজনদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি। এখন আর এ নিয়ে ভাবছি না। একজন মা তাঁর ছেলেকে যতটা আদর-স্নেহ করেন, তিনি আমাকে তার চেয়ে একটুও কম করেন না। এটাই আমার সার্থকতা’, বলেন মিল্টন সমাদ্দার।
ভিডিওটি দেথতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন..

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.