Beanibazarview24.com
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘট চলাকালে উপজেলার চান্দগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স আটকে সাতদিন বয়সি কন্যাশিশু মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (০৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
১০ জানুয়ারির মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম।
চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় মৃত্যু নবজাতকের’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইডঅ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট এর পক্ষে রিট দায়ের করা হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মৌলভীবাজার বড়লেখা উপজেলার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবিতে ২৮ অক্টোবর সকাল ছয়টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এ কর্মবিরতি চলাকালে সাধারণ চালক, শিক্ষার্থীদের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেন শ্রমিকরা।
আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকরা দাবি আদায়ের নামে মুমূর্ষু এক নবজাতককে বহনকারী গাড়ি আটকে দেওয়ায় সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পথেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে সাতদিন আগে পৃথিবীর আলো দেখা শিশুটি। ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এ ঘটনা ঘটে।
শিশুর পরিবার থেকে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৮ অক্টোবর সকালের দিকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। শিশুর অভিভাবকরা অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ১০টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার পুরাতন বড়লেখা বাজার, দাসেরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্সটি পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সটি চান্দগ্রাম নামক স্থানে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি আটকে চালককে মারধর করেন। প্রায় দেড়ঘণ্টা এখানে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকা থাকে। অ্যাম্বুলেন্স আটকা অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। দুপুর দেড়টার দিকে গাড়ি ছাড়া পেলে শিশুটিকে পাশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার সংবাদ সর্বপ্রথম সিলেটভিউ২৪ডটকম-এ প্রকাশিত হয়। এরপর সারাদেশে শুরু হয় তোলপাড়। ঝড় ওঠে নিন্দার। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পরিবহন শ্রমিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে ৩১ অক্টোবর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। তাছাড়া শ্রমিকদের বিশৃঙ্খল এইসব কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও জানতে চান আদালত। ঘটনার দুদিন পর ৩০ অক্টোবর রাতে ওই শিশুর বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা সঙ্গে কথা বলে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আইনগত সহায়তার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ।
পরদিন ৩১ অক্টোবর ওই শিশুর চাচা আকবর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ে ১৬০ থেকে ১৭০ জনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর-১৮।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.