Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বিয়ের দাবিতে এক প্রেমিকের বাড়িতে দুই প্রেমিকা হাজির







অন্যরকম একটি সম্পর্কের গল্প। ‘একফুল দো মালি’র সেই সিনেম্যাটিক কাহিনীর মতোই। মালিকে পেতে দুই ফুলই এখন মরিয়া। মালির নাম মিজানুর রহমান বাবু। দুই ফুলের একজন আলেয়া আরেকজন রাবেয়া। এরমধ্যে আলেয়া অন্তঃস্বত্ত্বা।

শুক্রবার সকালে দুইজনই ঢাকা থেকে তারাগঞ্জের হারিয়ালকুঠি ইউনিয়নের সৈয়দপুর মুন্সিপাড়া গ্রামে বাবুর বাড়িতে এসে উঠেছেন বিয়ের দাবিতে। কিন্তু বাবুর পরিবার তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। অবশ্য পরে গভীর রাতে এলাকাবাসীর দাবির মুখে বাবুর মা মেয়ে দুটিকে বাড়িতে নিয়ে তুলতে বাধ্য হন। মেয়ে দুটি ঘটনাটি স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং থানার ওসিকে জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি।



সরেজমিনে জানা গেছে, এই গল্পের নায়ক প্রেমিক মিজানুর রহমান বাবু রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর মুন্সিপাড়া এলাকার জহুরুল ইসলামের বড় ছেলে। তিনি ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। পাশাপাশি গার্মেন্টস শ্রমিকদের একটি মেসের ম্যানেজারের কাজও করেন। নিজের দুই ছোটভাইকে নিয়ে থাকেন ঢাকার আমতলীতে।



এরমধ্যে মিজানুর রহমান বাবু এ দুই তরুণীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাদের একজন স্বামী পরিত্যক্তা আলেয়া বেগম (২৬)। আলেয়া জামালপুর জেলার মাদরগঞ্জ উপজেলার চন্নগড় আজহার আলীর মেয়ে। তিনি বর্তমানে দুই মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা।

অপরজনের নাম রাবেয়া বেগম। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের আবেদুর রহমানের মেয়ে। সাভারের বাইপাইলের আমতলায় থাকেন। চাকরি করতেন ইপিজেডে।



দুই জনের সাথেই দীর্ঘ তিন বছর ধরে সম্পর্ক বাবুর। আলেয়ার সাথে আমতলীর মেসে শারীরিক সম্পর্কের সময় এলাকাবাসীর কাছে আটক হয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পান। তবে মেস থেকে বেরিয়ে আলেয়াকে ফেলে গ্রামে পালিয়ে আসেন বাবু।

এদিকে বাবুকে খুঁজতে গিয়ে মেসের ওই ঘটনা জানতে পারেন রাবেয়া। এরপর আলেয়াকে খুঁজে বের করেন রাবেয়া। তারপর দুজনই শুক্রবার সকালে বাবুর বাড়িতে এসে ওঠেন।



শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাবুর বাড়ির সামনে আনিছ মেম্বারের দোকানে প্রেমিকা রাবেয়া বেগম জানান, স্বামীর সাথে তালাক হয়ে যাওয়ায় আমি আমার সন্তানকে নিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করি। আমতলীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। চাকরির সময় আমার সাথে পরিচয় হয় বাবুর। সে আমাকে সম্পর্কের প্রস্তাব দিলে আমি আমার আগের স্বামী ও সন্তানের কথা বলি। সে সব কিছু মেনে নিয়ে আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। দীর্ঘ ৩ বছর সে আমার সাথে স্বামী-স্ত্রীর মতো মেলামেশা করেছে।



বিয়ের কথা বললে সে বলে বাড়িতে পাকাঘর করার পর বিয়ে করবো। আমি তাকে বিশ্বাস করি। এরমধ্যে আমি আমার জমানো দুই লাখ টাকা তাকে ব্যবসার জন্য দিই। বেতনের টাকা থেকেও প্রতিমাসে তাকে ৩ থেকে সাড়ে তিনহাজার করে টাকা তিনবছর ধরে দিয়ে আসছি। কিন্তু সে আমার সাথে প্রতারণা করে আরও একটি মেয়ের সাথে একই সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এটা আমি ভাবতেও পারছি না। বাধ্য হয়ে আমি তার বাড়িতে চলে এসেছি। আমাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত এখান থেকে যাবো না।

অপর প্রেমিকা আলেয়া বেগম (২৪) জানান, গার্মেন্টেসে চাকরির সুবাদে বাবুর সাথে পরিচয় ও সম্পর্ক হয়। সে আমাকে তার মেসের মধ্যে রুম ভাড়া দেয়। সেখানেই আমরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকি। তার ছোট দুই ভাইও আমাকে ভাবী বলে ডাকে। আমি বিয়ের কথা বললে সে জানায় গ্রামে দুই তলা বাড়ি বানাচ্ছে। বাড়ি কমপ্লিট হলে আমাকে বিয়ে করবে।

আমি তার ওপর বিশ্বাস করে তাকে স্বামী পরিচয় দিয়ে আমার গ্রামের বাড়িতে গত ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে নিয়ে যাই। সেখানে জামাই হিসেবে আমার পরিবার তাকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে। আমি ঈদের বোনাসসহ বেতনের ২৭ হাজার টাকা পাই। পুরো টাকাটাই আমি ওকে দেই। এছাড়াও একবছর ধরে আমি ১৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পাচ্ছিলাম। আমার খরচ বাদে বাকি প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ওর হাতে তুলে দিয়েছি।

ঈদের ছুটির পর আমরা আবারও ঢাকায় বাসায় যাই। এসময় স্থানীয়রা আমাদের আটক করে। বিয়ের কাবিন নামা দেখাতে না পারায় স্থানীয়রা আমাদের আটকে রাখে। পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে অন্য বাসায় গিয়ে উঠি। কিন্তু রাতে বাবু আমাকে রেখে ওই বাসা থেকে পালিয়ে যায়। আমি এখন দুই মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা।

এরই মধ্যে রাবেয়া নামের এক আপু এসে আমাকে বলে আমাকেও সে বিয়ে করবে বলে ৩ বছর ধরে একই বাসায় থেকেছে। এরপর আমি ওই আপুকে নিয়ে তার বাড়িতে চলে এসেছি। আমাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত আমি যাবো না। আমার সন্তানের স্বীকৃতির জন্য বিয়ে করতেই হবে। যদি বিয়ে না করে তাহলে আমি এখানে আত্মহত্যা করবো।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে দুই প্রেমিকা বাবুর বাড়িতে উঠলে তার পিতা-মাতা তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে নিজেরা পালিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ওই দুই প্রেমিক বাড়ির পশ্চিম পাশে আনিছুর মেম্বারের দোকানের সামনে অবস্থান নেয়।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাবেয়ার পিতা তার নিজ এলাকার মেম্বার ফিরোজ কবির ও রংপুর বারের আইনজীবি শাহ সুফি আবু সাইদ ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে তারা কোনোভাবেই বাবুর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে প্রথমে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান।

আবু সাইদ জানান, আমরা ইউপি চেয়ারম্যান বাবুলের সাথে দেখা করে প্রতিকার চাইলে তিনি বলেন এটা বিচারের এখতিয়ার তার নেই। থানায় যেতে হবে। সেখানে কোনো বিচার না পেয়ে আমরা থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের সাথে দেখা করি। ওসি বলেন, আপনারা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেন। না হলে আমাদের জানাবেন। কারণ বিষয়টি ধর্ষণ সংক্রান্ত।

আইনজীবী আবু সাইদ আরো জানান, থানা থেকে ফিরে আমরা এলাকার লোকজনের সাথে বসেছি। বাবুর পরিবার থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ৩টায় বাবুর মা এসে মেয়ে দুটিকে ছেলের সাথে বিয়ে দেয়ার কথা বলে বাড়িতে তুলেছেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। মেয়ে দুটি এখন ওই বাড়িতেই আছে। তবে ছেলে ও ছেলের বাবা পলাতক।

দুজনের একসাথে বিয়ে সম্ভব কিভাবে- এ প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, দুই মেয়েই যদি একে অপরের কাবিননামায় স্বাক্ষী হিসেবে সই করে তাহলে সেটা সম্ভব।

স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বার ও এলাকার মুরব্বী আনিছার রহমান আনিছ বলেন, একই সাথে দুটি মেয়ে সম্পর্কের দাবি নিয়ে এসেছে। এরমধ্যে একজন অন্তঃস্বত্ত্বা। কিভাবে সমাধান করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। সমাধান না হলে মেয়ে দুটি আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান বাবুল জানান, আমার কাছে বিষয়টি এসেছিল। আমি বলেছি এটা ধর্ষণের ঘটনা। আমার বিচারের এখতিয়ার নেই। আমি পুলিশে যেতে বলেছি।

এদিকে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, রাবেয়া নামের মেয়েটির কাছ থেকে নেয়া নগদ দুই লাখসহ বিভিন্ন সময়ে নেয়া টাকা ফেরত দিয়ে তাকে বিদায় দিয়ে অন্তঃস্বত্ত্বা আলেয়ার সাথে বাবুর বিয়ে দিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এ ব্যপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) মারুফ জানান, বিষয়টি জানার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.