Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে উচ্চ আদালতে লড়ছেন তারা







মেহেদী হাসান ডালিম : দেশে প্রসূতিদের অপ্রয়োজনীয় সিজারের হার নিয়ে সেভ দ্যা চিলড্রেনের প্রতিবেদনে যখন তোলপাড় চলছে, বিষয়টি নিয়ে যখন চিন্তায় পড়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সচেতন ব্যক্তিরা। ঠিক সেই মুহুর্তে অপ্রয়োজনীয় সিজার কার্যক্রম বন্ধ করতে আইনী লড়াইয়ে নেমেছেন একদল প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যমী নারী আইনজীবী।



উচ্চ আদালতে এই আইনী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলা করে আলোচনায় আসা চৌকস আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। তার টিমে রয়েছেন, অ্যাডভোকেট গুলশান জুবাইদা, ব্যারিস্টার মুনিজা কবির, ব্যারিস্টার ফারিয়া আহমেদ, অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার ও অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন টুম্পার মত উদীয়মান মেধাবী আইনজীবীরা।



আইনী লড়াই চালিয়ে প্রয়োজন ছাড়া সিজার কার্যক্রম রোধ করতে আইনী কাঠামো দাঁড় করাতে চান। নারী ও শিশুদের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে চান তারা।

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও তার টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ইতিমধ্যেই হাইকোর্ট অপ্রয়োজনীয় সিজার কার্যক্রম বন্ধ করতে যুগান্তকারী আদেশ দিয়েছেন। আদালত প্রয়োজন ছাড়া প্রসূতির সিজার কার্যক্রম রোধে রোধে নীতিমালা তৈরি করতে এক মাসের মধ্যে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও স্টেক হোল্ডারদের এই কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে। এ কমিটি ৬ মাসের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করে আদালতে দাখিল করবেন।



এই মামলা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম রাইজিংবিডিকে বলেন, অবশ্যই এটা একটা ঐতিহাসিক মামলা। অপ্রয়োজনীয় সি সেকশনে (সিজার) শুধু নারী ও শিশুদের ইফেক্ট করছে। এক্ষেত্রে আদালতের আদেশ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক। আদালতের এ আদেশে নারী ও শিশু এবং ফিউচার জেনারেশন যে উপকৃত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তিনি আরো বলেন, এই অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান রোধ করতে আমরা একটি আইনী কাঠামো দাঁড় করাতে চাই। আমরা মনে করি আদালতের যুগান্তকারী আদেশ আইনী কাঠামো গঠনের প্রথম পদক্ষেপ। অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান রোধে আইনী কাঠামো দাঁড় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আইনী লড়াই চালিয়ে যাবো।



রিট ফাইলকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট গুলশান জুবাইদা রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশে আশাংকাজনক ভাবে সিজারের মাত্রা এত বেড়ে গেছে, আসলে যেকোন গর্ভবতী নারীর জন্য এটা একটা হুমকি স্বরুপ। মেডিকেল প্রয়োজন ছাড়া সিজার বন্ধে আমাদের প্রচেষ্টার প্রাথমিক ফল পেয়েছি। হাইকোর্ট যুগান্তকারী আদেশ দিয়েছেন। এই মামলার কারণে একটা প্রোপার গাইড লাইন পাবো।

এই মামলা রিসার্চ ও ড্রাফটিংয়ে শুরু থেকে আছেন ব্যারিস্টার মুনিজা কবির। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, এই রিট পিটিশন ড্রাফট করতে গিয়েই ভাল লেগেছিল। ব্যারিস্টার রাশনা ইমামের নেতৃত্বে প্রায় ৮ মাসের মত এ বিষয়ের উপর রিসার্চে সময় দিয়েছি। বলতে পারি আমাদের পরিশ্রম-গবেষণা সফল হয়েছে। হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন খুবই আনন্দ লাগছে। এই বিষয়ে শেষ পর্যন্ত আইনী লড়াইয়ে নিজেকে সম্পূক্ত রাখতে চাই।



ব্যারিস্টার ফারিয়া আহমেদ বলেন, এই রিটটি করা অবশ্যই একটি ভাল উদ্যোগ। অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধে কিছু করতে পেরে খুবই লাগছে। বিশেষ করে নারীদের জন্য কিছু করতে পেরেছি এটা সত্যিই আনন্দের।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুন বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ।

বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, এতে বাবা-মায়েদের সন্তান জন্মদানে ব্যাপক পরিমাণে খরচের ভার বহন করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনযুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট এ রিট দায়ের করেন।




ওই প্রতিবেদনে সিজারিয়ানে ঝুঁকি সম্পর্কে বলা হয়েছে- সিজারিয়ানে মা ও শিশু উভয়কেই এমন অস্ত্রোপচার ঝুঁকিতে ফেলে। শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় দীর্ঘ সময় লাগে। এছাড়া সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে।

সেভ দ্যা চিলড্রেনের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে খরচ করেছেন প্রায় চার কোটি টাকার বেশি। জনপ্রতি গড়ে তা ছিল ৫১ হাজার টাকার বেশি। সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানের হার বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মারাত্মক হারে বেশি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যত শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু তারপরও এমন সিজারিয়ান হচ্ছে।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ৪ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন প্রবণতার জন্য সংস্থাটি আংশিকভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবাখাতের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে। কিছু অসাধু চিকিৎসক এর জন্য দায়ী, যাদের কাছে সিজারিয়ান একটি লাভজনক ব্যবসা বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
– রাইজিংবিডি

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.