Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ফেলে দেওয়া কলাগাছে স্বাবলম্বী জুয়েল


পাটের সোনালী আঁশের কদর রয়েছে দেশ-বিদেশে। পাটশিল্প দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এবার দেশেই তৈরি হচ্ছে আরেক সোনালী আঁশ। তবে এটা পাটের নয়, কলাগাছের। চাষের পর ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকে সোনালী এই আঁশ তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন খুলনার জুয়েল বালা।

জুয়েল খুলনার ছেলে হলেও কলাগাছের আধিক্যের কারণে যশোরের ঝিকরগাছায় গড়ে তুলেছেন কারখানা। আর এই কারখানার নাম দিয়েছেন প্রত্যাশা ব্যানানা ফাইবার। ইউটিউব দেখে দিনমজুর থেকে কলাগাছের আঁশযুক্ত সুতা তৈরি করে এখন তিনি কারখানার মালিক। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন অন্যদের কর্মসংস্থান।

সরেজমিনে দেখা যায়, যশোরের ঝিকরগাছা শিমুলিয়ার জাফরনগর এলাকার একটি চাতাল ভাড়া নিয়ে জুয়েল বালা গড়ে তুলেছেন কলাগাছের আঁশযুক্ত সুতা তৈরির কারখানা। চাতালের একপাশে সারিবদ্ধভাবে বিছানো রয়েছে কলাগাছ। প্রতিটি কলাগাছের দুই দিকের অংশ কেটে ফেলে খোলস (ছাল) ছাড়ানো হচ্ছে। পাশেই রাখা হয়েছে কলাগাছের সুতা তৈরির মেশিন। কলাগাছের ছাল সেই মেশিনে দেওয়া মাত্র বের হয়ে আসছে আঁশযুক্ত সুতা।

এই সুতা ধুয়ে শুকানো হচ্ছে রোদে। শুকানোর পর এই সুতার রং হচ্ছে সোনালী। দেখতে অনেকটা পাটের সোনালী আঁশের মতোই। এই সুতা নীলফামারীতে বিক্রি করা হচ্ছে। কলাগাছের আঁশযুক্ত সুতা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা জুয়েল বালার।

প্রত্যাশা ব্যানানা ফাইবারের ম্যানেজার ইকবাল সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাষীরা কলা চাষ করার পর গাছ কেটে ফেলে দেন। এরপর আমাদের লোকজন সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসে। আমরা এগুলো ক্রয় করি না। গাছগুলো আনার পর সেগুলো চিরে আলাদা করি। নারী শ্রমিকরা খোল ছাড়িয়ে দেয়। আমরা সেগুলো মেশিনে দেই। মেশিন থেকে সুতা তৈরি করি। এরপর হাউসের পানিতে ধুয়ে শুকাতে দেই। সেখানে শুকিয়ে গোডাউনে রাখা হয়। একসঙ্গে ২-৫ টন হলে আমরা বাহিরে পাঠাই।

শ্রমিক অ্যালেক্স তালুকদার বলেন, আমার বাড়ি গোপালগঞ্জে। আমি মাঠে কাজ করি। মাঠে চাষিরা কলা গাছ ফেলে দেন, সেগুলো তুলে আমরা নিয়ে আসি। এনে খোল ছাড়িয়ে আঁশ তৈরি করি।

শ্রমিক আমির হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মাছ ধরতাম। পরে যশোরে এসে চাষির কাজ করতাম। তারপর এখানে কলা গাছের আঁশ তৈরির বিষয়ে জানতে পেরে কাজ শুরু করি। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। আমি কলাগাছের খোল ছাড়ানোর কাজ করি। আর ধুয়ে নেড়ে দেই। কাজটা খুব ভালো লাগে। কলাগাছ থেকে সুতা হবে কখনো চিন্তা করিনি। এখানে এসে দেখলাম।

নারী শ্রমিক কোহিনূর বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে আমরা কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানাতাম, খেলা করতাম, ফেলে দিতাম। এখন এটা দিয়ে সুতা বানানো হয়। এই সুতা বানিয়ে আমাদের সংসার চলে। এখানে যত নারী শ্রমিক আছে সকলেরই এই কাজ করে সংসার চলে।

প্রত্যাশা ব্যানানা ফাইবারের মালিক জুয়েল বালা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দুই মেয়ে। আমি দিনমজুরির কাজ করতাম। এই কাজ অনেক সময় পাওয়া যেত না। দেশে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন কাজ খুঁজে পেতাম না। অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়েছে। এতে আমার মনে খুব আঘাত লাগে। আমি চিন্তা করি যে আমি এমন কিছু করব, যাতে কিছু লোকের বেকার সমস্যা দূর হয়। সেই উদ্দেশ্যে আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যানানা ফাইবার তৈরির ভিডিওগুলো দেখি। দেখার পর কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করি, তারা আমাকে উৎসাহিত করে। আমি যশোর জেলায় যাই। সেখানে কলাগাছ খুঁজে স্থান কারখানার স্থান ঠিক করি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে আমি ব্যানানা ফাইবার কারখানা শুরু করি। আজ দেড় বছর এখানে আমি ব্যানানা ফাইবার তৈরির কাজ করছি। কারখানায় ১৬ জন কর্মচারী আছে। বেশিরভাগ বয়স্ক নারী-পুরুষ। তারা বিভিন্ন সমস্যায় থাকেন। এ জন্য তাদেরকে বেছে নিয়েছি, যাতে তারা বাকি জীবনটা কাজ করে সুন্দরভাবে থাকতে পারেন।

তিনি বলেন, আমি প্রথমে সামান্য পুঁজি ৬০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করি। একটি মেশিন দিয়ে শুরু করি। এখন আমার চারটি মেশিন রয়েছে। আগে আমি কলাগাছ পরিবহন ভাড়া করে আনতাম। এখন নিজস্ব পরিবহনে কলাগাছ আনি। বর্তমানে প্রতিমাসে এক টন কলাগাছের আঁশ তৈরি হয়। এক টন সুতা বিক্রি করে দেড়লাখ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে কারখানা ভাড়া, কর্মচারীর বেতনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে আমার আয় হয় ৩০ হাজার টাকা।

বর্তমানে সম্পদ আছে ৫ লাখ টাকার। কলাগাছের সুতা তৈরি করে আমি এখন স্বাবলম্বী। আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন তারাও স্বাবলম্বী। আমি পরিত্যাক্ত কলাগাছ ব্যবহার করে শিল্পতে রূপ দিতে চাই। আমার এই ছোট কারখানা আগামীতে আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখান অনেকের কর্মসংস্থান হবে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখার একটা চেষ্টা থাকবে।

জুয়েল আরও বলেন, নীলফামারীতে এই আঁশ দেই। সেখানে আঁশটি যাওয়ার পরে কার্পেট, পাপস, চাদর আরও অনেক কিছু তৈরি হয়। এগুলো বিদেশে খুব চাহিদা।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.