Beanibazarview24.com
সম্প্রতি ভারতে মুসলিম নারীদের অবমাননার এক নতুন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। দেশটিতে বেশিকিছু মুসলিম তরুণী ও নারীর সম্মতি না নিয়েই তাদের ছবি ব্যবহার করে অনলাইনে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্যিক একটি বিমান সংস্থার একজন পাইলটও। এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তাদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। তবে অভিযোগ করার পর ওই অ্যাপ ও তাদের ওয়েবসাইট সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘটনার শিকার নারীরা ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
পাইলট মিস হেনা খান বিবিসিকে জানিয়েছেন, একজন বন্ধু তাকে বিষয়টি অবহিত করেন টুইটে। ‘শুলি ডিলস‘ নামের একটি অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এসব করা হয়। এসব অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে নারীদের ছবি ব্যবহার করে তাদের জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা হয় এবং তা প্রকাশ করা হয়। এসব নারীকে বর্ণনা করা হয় ‘ডিলস অব দ্য ডে‘ হিসেবে।
শুলি ডিলস অ্যাপের প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যবহার করা হয়েছে একজন অজ্ঞাত নারীর ছবি। পরের দুটি পৃষ্ঠায় মিস হেনা খান দেখতে পেয়েছেন তার বন্ধুদের ছবি। এরপরের পেইজেই তিনি নিজের ছবি দেখতে পান। হেনা খান বলেন, ওই অ্যাপে আমি ৮৩টি নাম দেখতে পেয়েছি। সেখানে এর চেয়েও বেশি থাকতে পারে। তারা টুইটার থেকে আমার ছবি ও ইউজার নাম ব্যবহার করেছে। এই অ্যাপটি পরিচালনা করা হয় ২০ দিন ধরে। এমনকি এ বিষয়ে আমরা জানিও না। এখন এসব দেখে আমার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে পুরো শরীরে।
এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ‘শুলি‘ কিনতে প্রস্তাব দেয়া হয়। ‘শুলি‘ শব্দটি মুসলিম নারীদের অবমাননা করতে অশ্লীলভাবে ব্যবহার করে ডানপন্থি হিন্দুরা। তবে ওই অ্যাপে বাস্তবে কোনো অকশন বা নিলাম হয়নি। এর উদ্দেশ্য শুধু অবমাননা এবং অপদস্ত করা। মিস হেনা খান বলেন, তাকে টার্গেট করা হয়েছে শুধু তার ধর্মের কারণে। তার ভাষায়, আমি একজন মুসলিম নারী। এটা তারা জানতে পেরেছে। তারা আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চায়।
গিটহাব- নামের ওয়েবপ্লাটফর্মটি এই অ্যাপের ওপেন সোর্স। অভিযোগ করার পরই তারা দ্রুততার সঙ্গে এটা বন্ধ করে দিয়েছে। কোম্পানি এক বিবৃতিতে বলেছে, এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করে আমরা ইউজারদের একাউন্ট সাসপেন্ড করে দিয়েছি। কারণ, এমন কর্মকাণ্ড আমাদের নীতির লঙ্ঘন। কিন্তু এরই মধ্যে যে ঘটনা ঘটে গেছে তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নারীরা।
যাদের ছবি বা ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে ওই অ্যাপে, তারা সবাই প্রতিবাদী মুসলিম নারী। এর মধ্যে আছেন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, আর্টিস্ট ও গবেষক। তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তাদের একাউন্ট মুছে দিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, আরও হয়রানি করার আতঙ্কে তারা আতঙ্কিত।
অন্য একজন নারী বলেছেন, আপনি যত শক্তিশালীই হোন না কেন। এসব ক্ষেত্রে তাতে কিছুই যায় আসে না। যদি আপনার ছবি ব্যবহার করা হয় এবং ব্যক্তিগত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়, তাতে আপনি ভীত হবেনই। কারণ, এতে আপনি বিরক্ত হবেন।
অন্যদিকে যেসব নারীর ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে ওই অ্যাপে প্রকাশ করা হয়েছে, এতে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর দাবি জানিয়েছেন এবং তারা লড়াই করে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। ডজনখানেক নারী হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন ওই অপরাধী চক্রকে ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এবং তাদেরকে সমর্থন করার জন্য। এর মধ্যে আছেন মিস হেনা খানও। তারা এ বিষয়ে পুলিশে অভিযোগও দিয়েছেন।
এই হয়রানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন সুপরিচিত নাগরিক, অধিকারকর্মী ও নেতারা। পুলিশ এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। তবে ওই অ্যাপের নেপথ্যে কে বা কারা আছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা।
যারা এই অ্যাপ তৈরি করেছে, তারা নিজেদের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছে। কিন্তু বিরোধী কংগ্রেস দলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সমন্বয়ক হাসিবা আমিন এর জন্য বেশ কিছু একাউন্টকে দায়ী করেছেন। এসব একাউন্ট থেকে নিয়মিত মুসলিমদের, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হয়। একই সঙ্গে ওইসব একাউন্ট থেকে ডানপন্থি রাজনীতিতে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এ ব্যাপারে গিটহাব কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ। এই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র চিন্ময় বিসওয়াল জানান, ইতোমধ্যে যৌন হেনস্থার মামলা হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট এই মামলায় দায়ের করেছে। মামলার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.