Beanibazarview24.com






পড়ালেখায় অসামান্য কৃতিত্বের জন্য পুরস্কার গ্রহণে মঞ্চে ওঠেন রাজিয়া মুরাদি। পুরস্কার গ্রহণের সময় আনন্দের পাশাপাশি দুঃখও অনুভব করেছিলেন তিনি।
২৭ বছর বয়সী আফগান ছাত্রী মুরাদি দুই বছর ধরে ভারতে পড়াশোনা করছেন। তিনি সম্প্রতি খবরের শিরোনাম হয়েছেন।
ভারতের বীর নর্মদ দক্ষিণ গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভিএনএসজিইউ) লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফলের জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন মুরাদি।
গত সোমবার মুরাদির হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন গুজরাটের গভর্নর আচার্য দেবব্রত। তবে এই অনুষ্ঠানে মুরাদির পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
পদক পাওয়ার সময়ের অনুভূতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুরাদি বলেন, ‘এটি ছিল একটি অম্লমধুর মুহূর্ত। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম, এ কারণে যে আমার কঠোর পরিশ্রমের ফল মিলেছে। আবার আমি আমার পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতির বিষয়টিও খুব করে অনুভব করছিলাম।’
মুরাদি আরও বলেন, ‘আমি আফগানিস্তানের সব মেয়ে ও নারীদের কথাও ভাবছিলাম, যাঁরা তাঁদের পড়াশোনাসহ চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা আবার তালেবানের হাতে যায়। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখল করে তারা আফগান নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব করে। তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের পড়ালেখা নিষিদ্ধ করে। মুরাদি অবশ্য তালেবান ক্ষমতায় আসার আগেই পড়ালেখা করতে ভারতে এসেছিলেন।
পড়ালেখার জন্য ভারতকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে মুরাদি বলেন, এখানে উচ্চশিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ আছে। আবার তাঁর দেশের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক মিলও আছে বেশ।
ভারত সরকারের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসের একটি বৃত্তি পেয়েছিলেন মুরাদি। এই বৃত্তি নিয়েই তিনি ভিএনএসজিইউতে লোকপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করতে আসেন।
মুরাদি বলেন, ভিএনএসজিইউতে অনেক আফগান শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছিলেন। তাঁরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ইতিবাচক মূল্যায়ন দিয়েছিলেন। এ কারণেই তিনি ভিএনএসজিইউ বেছে নিয়েছিলেন।
লোকপ্রশাসন বিষয় বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে মুরাদি বলেন, জনপ্রশাসন ও সরকারি নীতিনির্ধারণের ব্যাপারে তাঁর ব্যাপক আগ্রহ আছে। এ কারণে এই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
আফগানিস্তানে থাকাকালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন মুরাদি। তিনি মানবিক সহায়তার পাশাপাশি আফগান নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। মুরাদি বলেন, দেশে ফিরে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারাটা তাঁর জন্য সম্মানের বিষয় হবে।
ভিএনএসজিইউতে স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ জিজিপিএ পান মুরাদি। তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা তাঁর জন্য সহজ ছিল না। কারণ, দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত ছিলেন।
মুরাদি বলেন, দুই বছর ধরে তিনি দেশে যেতে পারেননি। এমনকি স্নাতকোত্তর শেষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। কারণ, দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। আর এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে তাঁর জন্য কোনো ভবিষ্যৎও নেই।
মুরাদির আশা, তিনি কখনো না কখনো আফগানিস্তানে ফিরে যেতে পারবেন। দেশে ফিরে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবেন। আফগান সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারবেন।
মুরাদি এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসনে পিএইচডি করছেন। তিনি বলেন, পরিবার ও সম্প্রদায় সব সময় তাঁকে সমর্থন করেছে। তিনি তাঁর সব অর্জনের জন্য তাদের কাছে ঋণী।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.