Beanibazarview24.com






ইয়াসমিনের বয়স তখন ৯ বছর। বাবা-মা আর চার ভাই-বোন নিয়ে তাদের সংসার। কৃষক বাবার সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। সংসারে লেগেই থাকত টানাপোড়েন। সংসারের টানাপোড়েনের কারণে দুঃসম্পর্কের এক ফুফুর বাসায় ইয়াসমিনকে কাজে পাঠানো হয়। কয়েক দিন থাকার পর কোনো একটি বিষয় নিয়ে ফুফু তাকে মারধর করে। এতে ফুফুর ওপর রাগ করে তার বাসা থেকে বের হয়ে যায় ইয়াসমিন। ঘণ্টা দুয়েক হাঁটার পর হারিয়ে ফেলে বাড়ির রাস্তা।




জানা গেছে, ইয়াসমিনের সব কিছু হারানোর দীর্ঘ তালিকার শুরু হয় তখনই। এরপর একের পর এক হাত বদল হতে থাকে ইয়াসমিন। কোথাও থিতু হতে পারেনি সে। এক পর্যায়ে নেত্রকোণার কমলাকান্দার এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে তার সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে হয়। স্বামীকে ঘিরেই নতুন করে স্বপ্ন বুনেন ইয়াসমিন। ঘর আলো করে আসে এক ছেলে ও মেয়ে। কিন্তু পরিবার হারানো ইয়াসমিনের জীবনে ফের নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বছর খানেক আগে একমাত্র অবলম্বন স্বামী ক্যানসারের কাছে হার মেনে চলে যান না ফেরার দেশে। দুই সন্তানকে নিয়ে ইয়াসমিন পড়েন অথৈ সাগরে। বন্ধ হয়ে যায় সন্তানদের লেখাপড়া। একটি চাকরি নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছেন তিনি।




জীবনের এমন কঠিন সময় পার করা ইয়াসমিন ২১ বছর পর খোঁজ পেয়েছেন নিজের পরিবারের। আরজে কিবরিয়ার উপস্থাপনায় স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের বদৌলতে নিজ ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন ইয়াসমিন।




ইয়াসমিন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের জুগিয়াখালি গ্রামের আব্দুল হেকিম ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির মেয়ে। ৯ বছর আগে মা এবং ৪ বছর আগে মা.রা গেছেন তার বাবা। রোববার (২২ মে) রাতে আরজে কিবরিয়ার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে প্রচার হওয়া ১৮৯ নং পর্বের আপডেট ভিডির মাধ্যমে জানা যায় এসব তথ্য।
এর আগে গত ১০ মে প্রচারিত হয় ইয়াসমিনের বেসিক ভিডিও। যার তিন ঘণ্টার মাথায় প্রাথমিকভাবে তার পরিবারের সন্ধান নিশ্চিত করে আপন ঠিকানা টিম। এরপর ১৬ মে ধারণ করা হয় ইয়াসমিনের আপডেট পর্ব।
প্রচার হওয়া প্রায় এক ঘণ্টার আপডেট ভিডিও দেখে জানা যায়, আনুমানিক ২০০০ সালের দিকে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে এক প্রতিবেশী ফুফুর বাড়ি (ময়মনসিংহ নগরীর বাঘমা.রা এলাকা) আসে ইয়াসমিন। সেখানে থেকে বাসার বিভিন্ন কাজ করত সে। এক দিন ফুফুর সঙ্গে রাগ করে বাসা থেকে চলে যায়। সে ভেবেছিল, সারাদিন বাইরে থেকে আবারও ফুফুর বাসায় ফিরবে। কিন্তু পথ ভুলে গিয়ে আর ফেরা হয়নি তার। তারপর কয়েকটি বাসায় কাজ করতে করতেই বড় হয়েছে সে। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে ২১টি বছর।
আপন ঠিকানা স্টুডিওতে এসে পরিবার ফিরে পেয়েও অনেকটায় বাকরুদ্ধ ছিলেন ইয়াসমিন। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে আটকাতে পারেননি চোখের পানি। এ দৃশ্য আপ্লুত করেছে লাখ লাখ দর্শককে।
ইয়াসমিনের বড় ভাই রমজান মিয়া বলেন, আমরা চার ভাই-বোনের মধ্যে ইয়াসমিন তৃতীয়। সে হারিয়ে যাওয়ার পর নানাভাবে তাকে আমরা খুঁজেছি, থানায় জিডিও করেছি। কিন্তু তাকে আমরা পাইনি। তার জন্য আমাদের মা কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে মা.রা গেছেন। বাবাও দেখে যেতে পারলেন না আজকের এই দিনটা। বাবা-মা আজ বেঁচে থাকলে কতই না খুশি হতেন।
এই ভিডিওতে দর্শকদের নতুন একটি বার্তাও পৌঁছে দেন আরজে কিবরিয়া। তিনি জানান, ২০১তম পর্ব থেকে ইউটিউবে আপন ঠিকানার সব ভিডিও আপলোড করা হবে আপন ঠিকানার নিজস্ব চ্যানেলে। সেই চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সবাইকে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.