Beanibazarview24.com
কোলকাত্তী- সিঙ্গাপুরী – লন্ডনী – আর আজ আমাদের এই লন্ডন জীবন
একেবারে কচি বয়সে যখন চিল্লক ( ধাঁধা) বলতাম একে অন্যের সহিত তখন একটা ধাঁধা প্রায়ই বলতাম ,
বলত দেখিঃ- এক গেছা লতা গেছে কলিকাত- এর উত্তর কি?
উত্তরঃ হয়ত আপনাদের সবার জানা– মানে রাস্তা।
এমন ভাবে কলিকাতা শহর জীবনে আসলেও তার চেয়ে আরও গভীর ভাবে আস্টে পিষ্টে জড়িত ছিল আমাদের সিলেটের সমাজ জীবনে।
মোটামুটি দুইশ বছরের যাতাকলে যখন ভারত বর্ষের মুসলিম রাজনবর্গ ও তাদের পরিবার সর্ব দিক থেকে কোনটাঁসা হয়ে নিজেই নিজেদের পরিচয় ভুলতে বসেছেন তখন যা সামান্য সম্বল বাকি ছিল তাও ফুরিয়ে মৃত্যু দুয়ারে। কেউ অনেক আগে মরছেন, কেউ কোনরকম বেঁচে আছেন। শান-শৌকত সব হয়েছে বিলীন, অনেকেই ভুলে গেছেন তাদের পূর্ব পরিচয়, নব্য জেগে উঠা ধনিক ও বণিক শ্রেণী হলেন অর্থ ও বিত্তের মালিক, আর কিছু বৃটিশ সরকারের পা ছাঁটা মুসলিম বুনিয়াদিরা ঠিকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেন তাদের কিছু সম্মান। উনারা হয়ে পড়লেন সংখ্যায় নগন্য তাই বাধ্য হয়ে নব্য ধনিক শ্রেণীর সাথে মিলে সৃস্টি করলেন এক নব্য নাসিকতা।
তাই এই নব্য নাসিকতা সম্পন্ন আমার দূর সম্পর্কের এক লন্ডনি গাভনার মামাকে বলেছিলাম, বৃটিশ রা সমাজের নিম্ন ও চাটুকার শ্রেণী দিয়ে গড়েছে নতুন সমাজ কাঠামো, আপনার হলেন তাহারা। আর যারা মুল বুনিয়াদি তাদেরকে বৃটিশরা ধ্বংস করতে পেরেছিল বলেই এমন নাসিকতা হয়েছে আজ আপনাদের।
যত দেরিতে মুসলিম রাজ রাজরাদের জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকার তার চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে সৃষ্টি হল আজকার আধুনিক সম্ভ্রান্ত সমাজ যাদের অধিকাংশই ছিল সমাজের নিম্ন শ্রেণীর চাটুকার ও অসৎ লোক। এই ভ্রান্ত মেকামি সমাজে হারিয়ে গেলেন আসল কৌলিন পরিবার, ভাসমান কচুরি পানার মত ভেসে গেলেন বেশির ভাগ মুসলিম রাজন্য বর্গও বুনিয়াদি পরিবার।
যেই বৃটিশ রাজ ওদেরকে নামিয়েছিল অধঃপতনে তারাই বেশির ভাগ হলেন সেই বৃটিশের তরীতে মাঝি মাল্লা। পরিচয় ভুলে গেলেন কি ছিল কেমন ছিল তাদের ঠিকানা। যেমন ভুলেছিলেন টিপু সুলতানের এক বংশধর। উনাকে দিল্লীর এক কুড়ে ঘরে পাওয়া গেল, উনি কাগজ কুড়িয়ে জীবন যাপন করছেন। উনাকে সাংবাদিকরা উনার পরিচয় সম্বন্ধে বলছে। উনি শুধু ফেল ফেলিয়ে ওদের হাতের দিকে চেয়ে আছেন কোন সাহায্য পান কিনা ? উনার কাছে ঐ সব টিপু সুলতান বা রাজ রাজন্যের কোন কিছু আসে যায় না। যেমন সেদিন বলছিল আমার সহপাঠী টিপু যে, ওদের এলাকার রাজান্য বর্গের এক মহিলা শেষ বয়সে ওদের বাড়ী থেকে চাল খুজে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সব গেলে ও ঐ সব মান হীন সম্ভ্রান্ত অনেকেই তো আর পারেন না নিজের দেশে বা এলাকায় কায়িক শ্রম করতে তাই ভাসালেন জীবন ভেলা সমুদ্রের অকুল বুকে। ওরা হলেন কলকাত্তি , ওরা হলেন জাহাজী — ওরাই সিলেটি। আজ যারা আমরা লন্ডনী।
আমার বন্ধু রুমির ( আমেরিকা প্রবাসী, সিলেটি) মনে সিলেটিরা কেন এত জাহাজী হল এটা ঘোরপাক খাচ্ছে। সে এই প্রশ্নের উত্তর খুজছে গত চার দশকের উপর থেকে।
আমিও ইতিহাস ও পরিসংখান দিয়ে একটা লেখা দাঁড় করাবার চেষ্টায় ব্রত আছি, সেই যে কলিকাত্তা বলা শিখেছিলাম সেই থেকে। বন্ধু রুমির তাড়নায় কিছু বই পত্র যোগার করা শুরু করেছি ও পড়তেছি, কিন্ত খটকার মধ্যে পড়ে গেছি সিলেট আসলেই সমুদ্র তীরবর্তী ছিল কিনা ?
সেই আকুতি হৃদয়ে ছিল বলে যখন সিলেটি কলকাত্তি বা জাহাজি বা পুরাতন লন্ডনী পেতাম তাদের গল্প শুনতাম। সেই সংশ্লিষ্ট কোন খবর পেলে সংগ্রহে রাখতাম। তেমন একটা সংগ্রহে দুই পূর্ব সুরীর কাহিনী আজ আপানদের সামেনে তুলে ধরার প্রয়াস করলাম। ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখকঃ: মোহাম্মদ ছালিকুর রহমান – এডভোকেট
যুক্তরাজ্য প্রবাসী
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.