বলিউডের ‘ফারাজ’ বাংলাদেশে না দেখানোর দাবি অবিন্তার মায়ের

২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে হওয়া মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে বলিউডে নির্মিত হয়েছে “ফারাজ” নামের সিনেমা। সিনেমাটি আগামী মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

“ফারাজ” সিনেমাটি মুক্তির বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন ওই ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, এটি অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের নয় বরং অবিন্তার পরিবারের পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অবিন্তা কবিরের মা এবং অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক রুবা আহমেদ বলিউড পরিচালক হানসাল মেহতার থ্রিলার ঘরানার সিনেমা “ফারাজ” নির্মাণ এবং মুক্তির বিষয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রুবা আহমেদ বলেন, “২০১৯ সালে যখন আমরা প্রথম জানতে পারি যে মহেশ ভাট এই ঘটনার ওপর একটি সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। এরপর আমরা তাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। তিনি উত্তরে জানান, তিনি আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করেন এবং তিনি ছবিটি নিয়ে এগোবেন না। কিন্তু হঠাৎ করেই ফারাজের পোস্টার প্রকাশিত হলো।”

সিনেমাটির পোস্টার প্রকাশের পরপরই রুবা আহমেদ এবং তারিশির (সন্ত্রাসী হামলার আরেক শিকার) পরিবার একসঙ্গে দিল্লি হাইকোর্টে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

রুবা আহমেদ বলেন, “২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। কেন তারা শুধু ভারতে ঘটে যাওয়া ঘটনার ওপর ভিত্তি করে সিনেমা তৈরি করছে না?”

সংবাদ সম্মেলনে রুবা আহমেদ বাংলাদেশে চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। পাশাপাশি সিনেমাটি দেশের সুনাম নষ্ট করতে পারে বলেও দাবি করেন তিনি।

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক রুবা আহমেদ বলেন, “আমি হানসেল মেহতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বাংলাদেশিদের সম্পর্কে না জেনে কিংবা যে ঘটনা তার দেশে ঘটেনি সেটি নিয়ে তিনি কীভাবে মুভি বানাচ্ছেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, এটা বলে আমি তাকে অসম্মান করছি।”

একই ঘটনায় আরও অনেকে প্রাণ হারালেও একজনকে নিয়ে সিনেমারও নাম দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রুবা আহমেদ।

সিনেমাটি বানানোর সময়ে নির্মাতারা অধিকাংশ ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কখনও যোগাযোগ করেননি বা তাদের সম্মতি চাননি বলেও অভিযোগ করেন রুবা আহমেদ।

তিনি বলেন, “সিনেমাটিতে আয়েশার চরিত্রে অবিন্তা, তারি চরিত্রে তারিশি এবং রাবেয়ার চরিত্রে আমাকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাতারা কখনোই আমাদের সম্মতি চাননি। তারা জানান, ছবিটির কোনো কিছু বাস্তব চরিত্রের সঙ্গে মিল নেই। তবে সিনেমাটি সরাসরি কিছু ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চরিত্রকে পরিবর্তিত নাম দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।”

হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মিত “শনিবার বিকেল” সিনেমাটি ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে। ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে রুবা আহমেদ জানান, চলচ্চিত্রটি আইনসভার নজরদারিতে থাকায় এ বিষয়ে তার কিছু বলার নেই।

সংবাদ সম্মেলনে রুবা আহমেদ দাবি করেন, “ফারাজ” সিনেমাটির বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি বন্ধ করতে আহ্বান জানান

রুবা আহমেদ বলেন, “আপনারা কী বুঝতে পারছেন যে এই ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কতটা বেদনাদায়ক হবে? আমি অবশ্যই সিনেমাটির মুক্তি ঠেকাতে পারব না, তবে ছবিটি অন্তত বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া উচিত না। আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। মেয়ের জীবন কীভাবে চলে গেছে সেটা বড় পর্দায় দেখাচ্ছে, অন্যরা উপভোগ করছে এবং অন্য মানুষ সেখান থেকে ব্যবসা করে পয়সা নিচ্ছে, এগুলো মা হিসেবে আমি কীভাবে চাইব। এতে শুধু আমার মেয়ের নয়, দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। আমি চাই না, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এই সিনেমা আসুক।”

গত ১৬ জানুয়ারি “ফারাজ” সিনেমাটির ট্রেইলার সামনে এসেছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি ভারতজুড়ে বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।