Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সৃজিতের সঙ্গে অবাক করা অভিজ্ঞতা জানালেন বাঁধন


কান উৎসবের লালগালিচা মাতিয়ে দেশে ফিরেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তার অপরূপ সৌন্দর্য উদ্ভাসিত করেছে উৎসব। কাঁধখোলা ছাইরঙা গাউনে তাকে দেখতে মনোমুগ্ধকর ও জমকালো লাগছিল। সবমিলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেন বাংলাদেশি সৌন্দর্যের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই বাঁধনের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। এপার-ওপার; দুই বাংলায় তাকে নিয়ে মাতামাতি। এরই রেশ টেনে ভক্তদের কথা ভেবে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে কলকাতার সংবাদ প্রতিদিন।

সংবাদমাধ্যটি বাঁধন সম্পর্কে বলেছে, সদ্য কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ফিরেছেন ঢাকায়। তার ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রশংসার ঝড় তুলেছিল ফ্রান্সের শহরে। আজকাল সেই স্বপ্নেই ডুবে রয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র রহস্যময়ী অভিনেত্রী আজমেরি

প্রশ্ন: কান সফর কেমন ছিল?
বাঁধন: অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমার দেশের প্রথম একটা সিনেমা, যা কান চলচ্চিত্র উৎসবে গেছে। সেই ছবির লিড কাস্ট হিসেবে আমি কানে যেতে পেরেছি। পুরো ব্যাপারটাই স্বপ্নের মতো। যখনই ছবিগুলো দেখছি, বিশ্বাসই হচ্ছে না! আমি ওখানে ছিলাম! একজন শিল্পী হিসেবে ওখানে যে সম্মান পেয়েছি, সেটা সারাজীবন মনে রাখার মতো। প্রিমিয়ারে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটা দেখার পর সবাই দাঁড়িয়ে প্রশংসা করছিলেন। সেটা সত্যিই না ভোলার মতো একটা ঘটনা।
বাঁধন
বাঁধন


প্রশ্ন: কার কার সঙ্গে দেখা হল সেখানে?
বাঁধন: শ্যারন স্টোন, বিল মারি। প্রচুর বিখ্যাত সব মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। এদের তো আমরা সিনেমার পর্দায় দেখেই অভ্যস্ত। তারাই চোখের সামনে। এখানে একটা ঘটনার কথা বলতে চাই। বিল মারিকে দেখে আমার খুব ইচ্ছে করছিল, তার সঙ্গে আলাপ করার। তারপর হঠাৎ বিল নিজে থেকে এসেই আমাদের সঙ্গে আলাপ করেন। এত বড় একজন স্টার, অথচ এত মাটির মানুষ। বিল আমাকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। একসঙ্গে আমরা ছবিও তুলেছি। আমি কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারকদের সঙ্গেও দেখা করে কথা বলেছি। ‘রেহানা’ নিয়ে কথা হয়েছে। বিচারকরা বার বার বলছিলেন, আমার কাজ খুব ভালো লেগেছে তাদের। এটা অনেক বড় পাওয়া।

প্রশ্ন: কানের রেড কার্পেটে তো আপনার জামদানি শাড়ি সুপারহিট। ওখানে যাওয়ার আগে থেকে পোশাক নিয়ে কোনো প্ল্যান ছিল?
বাঁধন: কোনো কিছু প্ল্যান ছিল না। কানে যাওয়াটাই এক প্রকার হুট করে। করোনা আবহে বিদেশ যাত্রার ব্যাপারে প্রচুর বিধিনিষেধ ছিল। আমরা যেদিন ভিসা পেলাম, তার পরের দিন সকালেই ফ্লাইট ছিল। তাই প্ল্যান করার সময়ই ছিল না। জামদানি পরব কি-না, তা নিয়েও বিশেষ কোন প্ল্যান ছিল না। যেহেতু এ ছবি রেহানাকে নিয়েই। বলা যায়, এই ছবির ফেস আমি। তাই অতিরিক্ত চাপ তো কাঁধের ওপর ছিলই। তার ওপর বাংলাদেশের প্রথম কোনো ছবি কানে। আবার প্রথম কোনো অভিনেত্রী কানের রেড কার্পেটে। সবার তো নজর থাকবেই, আমি কী পরব? কী পরব না? জামদানি ছাড়া আমার আর কিছুই মাথায় আসেনি। এটা তো আমার দেশের ফেব্রিক। ‘আড়ং’ ব্র্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওরা দ্রুত আমাকে তৈরি করে দিয়েছিল পোশাক। বিশেষ করে ব্লাউজ। তবে আমি মসলিনও পরেছি। সেটাও আমার দেশের ফেব্রিক। আমি সচেতনভাবেই দেশকে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। বিশেষ করে নারী ডিজাইনারদের কাজকে।

প্রশ্ন: কানে এমন কোনো মুহূর্ত? যা সারাজীবন সঙ্গে রাখবেন..
বাঁধন: ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখে কানের দর্শকরা প্রশংসা করেন, আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। চোখের সামনে পুরো জীবনটা উঠে এসেছিল। আমার পরিশ্রমের দাম ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন। ছবি দেখে একজন বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এ পাওনা সারাজীবনের।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের মানুষ কী বলছে?
বাঁধন: দেখুন, যখন দেশের কোনো বিষয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশাল সম্মান লাভ করে, তখন ওই বিষয় একটা টিমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বাংলাদেশের মানুষ তো বাহবা দিয়েছেই। তবে আমার দেশের পাশাপাশি ভারত থেকেও খুব প্রশংসা পেয়েছি। আসলে, ছবিটা দেশ, কাল, সীমানা ছাড়িয়ে বাংলা ভাষার ছবির সাফল্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাঁধন
বাঁধন


প্রশ্ন: রেহানার অফার কীভাবে পেয়েছিলেন?
বাঁধন: অফারটা অদ্ভুত সময়ে আমার কাছে আসে। তখন আমি ব্যক্তিগত এক বড় সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মেয়েকে নিয়ে আদালতে যাই। আমি একাই নিজের সন্তানকে বড় করতে চেয়েছিলাম। মা হিসেবে সন্তানের প্রতি আইনের অধিকার চেয়েছিলাম। কিন্তু ইসলামিক আইনে এটা একেবারেই নেই। তবে সিভিল আইনে সন্তানের ওয়েলবিয়িংয়ের জন্য শেষমেশ আমাকে গার্ডিয়ানশিপটা দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকেই আমার দর্শন, জীবন বাঁচার নিয়মগুলো বদলে যায়। বিশেষ করে আমার কাজ করার স্টাইলেও পরিবর্তন আসে। আসলে, এ দেশে সেভাবে নারীকেন্দ্রিক গল্প নিয়ে কাজ হয় না।

তার ওপর এদেশে বয়স ৩০ হয়ে গেলে আর কিচ্ছু করার থাকে না। আমার ততদিনে ৩৪ হয়ে গেছে। এখন তো আমার ৩৭। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি নতুন করে, অন্যরকম কাজ করতে চাই। সেটা অনেককে হতবাক করেছিল। আমি কাজটা তখন টাকার জন্যই করছিলাম। আর যাদের কাছে ভালো কাজ চেয়েছিলাম, তারা কেউই সিরিয়াসলি নেননি। তবে রেহানা মরিয়ম নূর-এর সময় আমি অডিশন দিই। এ ছবির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ এবং গোটা টিমের মধ্যে একটা সততা দেখতে পেয়েছিলাম, যেটা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।

প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র জন্য ইতোমধ্যেই কলকাতায় আপনাকে নিয়ে কথা হচ্ছে…
বাঁধন: এর পেছনে মজার একটা গল্প আছে। সৃজিতের সঙ্গে আমার আগে কোনোদিন পরিচয়ই হয়নি। কখনও যোগাযোগই হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাকে যোগাযোগ করেন। প্রথমে তো আমি ভেবেছিলাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নাম করে কেউ ফেক প্রোফাইল থেকে এমনটা করছেন। হঠাৎ করে কেনই বা সৃজিতের মতো একজন পরিচালক আমাকে চিনবেন, কেনই বা আমাকে তার ওয়েব সিরিজে নেবেন? ব্যাপারটা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়। চটজলদি পিডিএফ ডাউনলোড করে বইটা পড়ে ফেলি। সৃজিতের মতো পরিচালক এ চরিত্রে আমাকে ভেবেছেন, আমি খুব অবাক হয়েছিলাম।

আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন সৃজিত, এ চরিত্রটাকে ঠিক করে বোঝানোর ক্ষেত্রে। আসলে আমার কাছে ভালো অভিনেতা বলে কিছু নেই, ভালো পরিচালকে আমি বিশ্বাস করি। একজন ভালো পরিচালক, অভিনেতার কাছ থেকে সেরাটা বের করে নেন। আমি তাই পুরোটাই বিশ্বাস করেছি সৃজিতের ওপর। সৃজিত অনলাইনে আমার সঙ্গে ছবি নিয়ে আলোচনা করতেন। ওখানেও যখন গিয়েছিলাম, তখন সারাদিন হাতে চিত্রনাট্য থাকত আমার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সৃজিত আমার সঙ্গে রিহার্সাল করেছেন। আসলে আমি নিজেকে ভালো অভিনেত্রী বলব না। বরং পরিশ্রমী অভিনেত্রী বলব।

বাঁধন
বাঁধন

প্রশ্ন: তাহলে এ ছবির জন্য হ্যাঁ করার কারণ, শুধুই সৃজিত?
বাঁধন: অবশ্যই সৃজিত একটা প্রধান কারণ। দ্বিতীয়টা হল, গল্প। মুস্কান জুবেরির চরিত্রটা করার লোভ কোনো অভিনেত্রী সামলাতে পারবেন কি-না, জানি না। তার ওপর আমাদের এখানে নারী প্রধান গল্প নিয়ে একদম ছবি হয় না। হলেও সেটা নয় তো খুব আদর্শবাদী নারী চরিত্র বা ডাইনি নেগেটিভ চরিত্র। এর মাঝে যে একটা গ্রে পার্ট থাকে, সেটা নিয়ে কোনো কাজই হয় না। লেখক মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন এ রকম একটা গল্প লিখেছেন, এ রকম একটা চরিত্রে জন্ম দিয়েছেন, সেটার জন্য আমি তাকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই।

প্রশ্ন: ট্রেলার দেখে যা বোঝা যাচ্ছে, সৃজিতের সিরিজে আপনিই রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু। চরিত্রটা নিয়ে যদি একটু বলেন।

বাঁধন: হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এ সিরিজের গল্প একেবারেই আমাকে কেন্দ্র করে। তাই বাড়তি একটা চাপ তো ছিলই। প্রচুর রিহার্সাল করেছি। এছাড়াও আমার মনে হয়, মুস্কান চরিত্রটাকে আমি অনেক বেশি বুঝতে পেরেছি। আমি আসলে মুস্কানকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। এ কারণেই হয়ত মুস্কান চরিত্র আমার কাছে সহজ হয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন: ভারতের বাংলা বা হিন্দি ছবিতে কাজ করতে চান? কার কার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে?
বাঁধন: শুধু বাংলা বা হিন্দি ছবি নয়। আমি চাই ভালো, সৎ, পরিশ্রমী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে। ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।

প্রশ্ন: নতুন কোনো প্রজেক্ট…
বাঁধন: একটা অডিশনের কথা হয়েছে। তবে তা খুব প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে এখানে আমি একটা কথা বলতে চাই, আমার যখন ৩৪ বছর বয়স ছিল, তখন থেকেই আমি নিজের মতো করে বাঁচব বলে ঠিক করেছিলাম। এখন তো আমার বয়স ৩৭। এ বয়সে, এক নারী কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের মতো করে বেঁচে আছে, সেটা যদি অন্যকে অনুপ্রাণিত করে, তাই একটু অন্যরকম কাজ করতে চাই। সেই কাজের মধ্যে দিয়েই লড়াইটা জিততে চাই। এখন আমার সাফল্য লোকে দেখছে। এর নেপথ্যে যে, একটা না পাওয়ার সংগ্রাম আছে, সেটা যেন সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। আপাতত, এটাই আমার দর্শন।
-পূর্বপশ্চিমবিডি

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.