Beanibazarview24.com






বোনের প্রতি ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কুরআনে হাফেজ আব্দুর রাহিম (২৪)। তিনি নিজের জীবনের কথা না ভেবে তার একটি কিডনি দিয়ে বড় বোনের জীবন বাঁচিয়েছেন। এ ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে প্রশংসায় ভাসছেন ওই যুবক।




ভাগ্যবতী বোনের নাম ফাহমিদা বুশরা ঝুমু (২৬)। তারা মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গাংকুল গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজনুর রহমানের সন্তান।
সম্প্রতি ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসকরা রাহিমের দেওয়া কিডনি ঝুমুর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। বর্তমানে ভাই-বোন দুইজনেই সুস্থ রয়েছেন।
এদিকে ফাহমিদার চিকিৎসার ব্যয়ভার সংগ্রহের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন এলাকার লোকজন। তারা কয়েক মাসে ফাহমিদার চিকিৎসার তহবিল গঠন করে প্রায় ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ফাহমিদার চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে।
স্থানীয় ও ফাহমিদার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে ফাহমিদা বুশরা ঝুমুর সঙ্গে উপজেলার বর্ণি গ্রামের দুবাই প্রবাসী জাহেদ আহমদের বিয়ে হয়। এক মাস পর ফাহমিদার স্বামী পাড়ি দেন বিদেশে। এর মধ্যে হঠাৎ ফাহমিদার কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। ফাহমিদাও চলে আসেন বাবার বাড়ি।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার ফাহিমদাকে জানান, তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর থেকে স্বামী জাহেদ ফাহমিদার কোনো খোঁজখবর নেননি। ডায়ালাইসিস করেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় যেন অন্ধকার নামে ফাহিমদা ও তার পরিবারে। কারণ পরিবারের পক্ষে ফাহমিদার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা মোটেও সম্ভব ছিল না। আর কে দেবে ফাহমিদাকে একটি কিডনি?
এ অবস্থায় পাশে দাঁড়ান ফাহিমদার ছোট ভাই কুরআনে হাফেজ আব্দুর রাহিম। তিনি নিজের একটি কিডনি বোনকে দান করার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফাহমিদার কিডনির সঙ্গে রাহিমের কিডনি মিলে যায়। কিন্তু কিডনি পাওয়া গেলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রতিস্থাপনের ব্যয়ভার। কারণ চিকিৎসার খরচের জন্য এত টাকা ফাহমিদার পরিবার কোথায় পাবে?
ফাহমিদার পরিবার বিষয়টি আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজনকে জানান। এলাকার লোকজন ফাহমিদার পাশে দাঁড়ান। তারা ফাহমিদার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে ‘ফাহিমদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিল’ গঠন করেন। এরপর অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মানুষ হাত বাড়ান। প্রায় চার মাসে তহবিলে ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়। সেই টাকা দিয়ে চলতি মাসের ৩ মার্চ ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে রাহিমের দেওয়া কিডনি ঝুমুর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকরা।
বোনকে কিডনি দেওয়ার বিষয়ে হাফিজ আব্দুর রাহিম বলেন, আমার বোন আমাকে খুব স্নেহ-আদর করেন। তাই তাকে বাঁচাতে আমার কিডনি দিয়েছি। আমার দেওয়া কিডনি তার দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন আমরা আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। হাসপাতালে আরও কিছুদিন থাকা লাগবে।
ফাহিমদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিলের আহ্বায়ক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহেদুল ইসলাম সুমন এবং ক্রীড়া ভাষ্যকার ফয়ছল রানা জানান, ফাহমিদা বুশরা ঝুমুর চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে দেশ-বিদেশের সবার সহযোগিতায় ১৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই টাকা থেকে ফাহমিদার চিকিৎসার পেছনে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
তারা বলেন, ফাহমিদাকে বাঁচাতে তার ভাই হাফেজ আব্দুর রাহিম নিজের একটি কিডনি দিয়ে ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.