Beanibazarview24.com
সিলেটের ঐতিহ্য আসাম-আদলের বাড়ি আর ক্বিন ব্রিজের পাশের আলী আমজাদের ঘড়ির মিশেলে তৈরি করা হয়েছে জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। আট একর জমিতে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন এই বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়।
২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এমজিএসপি প্রকল্পের আওতায় সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত বছরের শেষের দিকে কাজ শেষ হয়।
এদিকে, দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনালটি উদ্বোধনের জন্য ধীরে ধীরে প্রস্তুত করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ শেষে টার্মিনালটির সুযোগ-সুবিধা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। যাতে পরিবহন সংশ্লিষ্ট এবং যাত্রীরা যথাযথ সেবা পান।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু পরিবহন বাস টার্মিনালে প্রবেশ করে। যাত্রী নামিয়ে ও পার্কিংয়ের স্থানে রাখা হয় বাসগুলো।
এটিকে দেশসেরা বাস টার্মিনাল উল্লেখ করে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই বাস টার্মিনাল সিলেটের জন্য গর্বের প্রতিষ্ঠান। কদমতলী বাস টার্মিনাল চালু হলে পরিবহন ব্যবস্থায় সিলেট বিশ্বমানে যুক্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিলেটের পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে যেসব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সবাইকে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে টার্মিনালের সেবা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না। সবাই মিলে এটির সেবা ও সুবিধা যাত্রীদের জন্য নিশ্চিত করতে পারলেই সার্থকতা আসবে।’
এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এখানে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা ও যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। ইচ্ছামতো কাউন্টার বসানো যাবে না। নির্দিষ্ট স্থান থেকে সবকিছু পরিচালিত হবে।’
বাস টার্মিনালে থাকছে যেসব সুবিধা
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট একর জমিতে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে বিমানন্দরের আদলে বহির্গমন, আগমনের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কার্যালয়, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন কার্যালয় স্থাপন করা হবে।
যাত্রী ওঠানামার জন্য পৃথক টার্মিনাল ভবন, সুপরিসর পার্কিং ব্যবস্থা, পরিবহন সেবাদানকারীদের জন্য যাবতীয় সুবিধা সংবলিত পৃথক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট, পর্যাপ্ত যাত্রী বিশ্রামাগার, নারী-পুরুষ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য সিকবেড, প্রার্থনা কক্ষসহ সব প্রকার সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন করা হয়েছে।
পুরো টার্মিনালের নির্মাণকাজ তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম অংশের বহির্গমন ভবনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩০০ ফুট। এই অংশে ৪৮টি বাস একসঙ্গে রাখা যাবে। এ ছাড়া যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল। রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ। পুরুষ, নারী ও বিশেষ সুবিধাসম্পন্নদের ব্যবহার উপযোগী ছয়টি শৌচাগার রয়েছে। প্রয়োজনে হুইলচেয়ার নিয়ে শৌচাগার ব্যবহার করা যাবে। ওপরে ওঠার জন্য রয়েছে লিফট এবং খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য আলাদা শয্যা ও ব্রেস্ট ফিডিং জোন থাকছে।
দ্বিতীয় অংশের আগমনী ভবন প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের। এখানে রয়েছে বাস বে, যাত্রীদের জন্য ৫১০ আসনের বসার স্থান ও ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক শৌচাগার সুবিধা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফট ও রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা।
আগমন ও বহির্গমন অংশ আলাদা করা হলেও করিডোরের মাধ্যমে পুরো স্থাপনাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। টার্মিনালের পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারে সড়কের সঙ্গে গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার রয়েছে। সেখানে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা অফিস থাকবে। সেখানে আরও থাকবে পুরো টার্মিনালের সিকিউরিটি কন্ট্রোল ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস। টার্মিনালের পেছনের দিকে তৃতীয় অংশে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ বেডের বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যানটিন, মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য মিলনায়তন।
নগরের ক্বিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও আসাম-আদলে বাংলার স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে টার্মিনালের নকশা করা হয়েছে। নকশা প্রণয়ন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষক সুব্রত দাশ, রবিন দে এবং স্থপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
নকশা প্রসঙ্গে সুব্রত দাশ বলেন, ‘বাস টার্মিনালের নকশায় সিলেটের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। সিলেটের ঐতিহ্য আসাম-আদলের বাড়ি আর আলী আমজাদের ঘড়ির মিশেলে নকশা তৈরি করা হয়েছে।’
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.