Beanibazarview24.com
সাবধান! ইউরোপ আসতে গিয়ে মৃ’ত্যু ফাঁ’দে পা দেবেন না
Be careful! Don't fall into the trap of death when you come to Europe
হাসান তামীম, ভিয়েনা থেকে:
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বাংলাদেশী ভাইরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন কিংবা অনেকেই অবৈধভাবে সাগরপথ দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন। সাগরপথের এই ভয়ংকর যাত্রায় প্রান হারিয়েছেন অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী যাদের সংখ্যা অজানা। কত মায়ের বুক খালি হয়েছে, কত বোন তার স্বামী হারিয়েছেন কিংবা সন্তান হারিয়েছেন তাদের বাবাকে আমরা অনেকেই জানি না।
কিন্ত প্রতি বছর এই অবৈধ ভাবে অনেক বাংলাদেশী মধ্যপ্রাচ্য হয়ে সাগরপথে ইউরোপে যাত্রা করে থাকেন। যারা এই ভয়ংকর যাত্রা সফলভাবে শেষ করে ইউরোপে এসেছেন তারাও কি খুব ভালো আছেন? ইউরোপের প্রবেশ করার পর অজানা শংকা তাদের মধ্যে কাজ করে। অবৈধপথে এসেও অনেকেই এখনো ইউরোপে বৈধতার সুযোগ পাননি। এই সব অসহায় প্রবাসী ভাইদের দেখার কেউ নেই।
কারন তারা ইউরোপে আসার জন্য অবৈধ রাস্তা বেছে নিয়েছেন। এ কারনে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। আর এই সব নিরীহ মানুষকে ফা’দে ফেলে বহুল অংশে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত কিছু দালাল। বাংলাদেশের দালালরা বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হন না। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থাবিরাজমান বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিয়ে অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে কিংবা জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন আরো অনেক টাকা।
যার ফলে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেক পরিবার অথবা দিতে হচ্ছে জীবন। আমার ব্যক্তিগত জীবনে এমন দুইটি ঘটনা নিজে দেখেছি। বাংলাদেশের কিছু দালাল ইরাকে জনশক্তি রপ্তানির কথা বলে সেখানে লোক পাঠায় এবং সেখানে অন্য একজন দালালের হাতে বিক্রি করে দেয় আর ইরাকে অবস্থানরত দালাল তাদের জিম্মি করে কিংবা নির্যাতন করে আরো টাকা আদায় করে এবং সেই টাকা দুই দালাল ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। উপায়ন্তর না দেখে পরিবার সন্তানের কথা চিন্তা করে দালালদের টাকা দিতে বাধ্য হয়।
এ যেন আদিম যুগের দাসপ্রথার কেনবেচার মত অবস্থা। এই অবস্থাই চলছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে। এই সব দালালদের নিয়ে টিভি কিংবা পত্রিকায় খবর প্রচার হলেও গ্রামে থাকা সাধারন জনগনের মধ্যে সেই সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। গতকালের লিবিয়ার সংঘর্ষে নিহত অধিকাংশ বাংলাদেশীদের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে। বর্তমান উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের খবর অনায়াসে দেখতে পাই। মধ্যপ্রাচ্যের এই অবস্থা দেখেও তারা কিভাবে দালালের প্ররোচনায় পা বাড়ালো করুন মৃ’ত্যুর দিকে।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নরপিশাচ দালালরা সর্বদা সচেষ্ট থাকে। ইউরোপের প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জিম্মি করার ঘটনা নতুন কিছু নয় তারপরেও আমাদের গ্রামাঞ্চলের মানুষের অসচেতনতা এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না। আইনের ফাক ফোকড় দিয়ে দালালরা বেচে যায় এবং তাদের কিছুই হয় না।
লিবিয়ার ঘটনা এবং স্বজনদের আর্তনাদ দেখার পর একটি কথাই বার বার মনে হয়েছে এইসব দালালদের শাস্তি একমাত্র মৃ’ত্যুদন্ড। দুই একটি দালালদের মৃ’ত্যুদন্ড কার্যকর হলে হয়তবা দালালদের এমন দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। আমাদের গ্রামাঞ্চলের মানুষকে এই বিষয়ে আরো সচেতন করা জরুরি। অবৈধ পথে বিদেশ এসে নিজে কিংবা পরিবারকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা না করে অন্তত বৈধভাবে বিদেশ যাত্রা করি।
নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি। অবৈধ দালালদের হাত ধ্বংস করি। লিবিয়ায় নিহত ভাইদের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.