Beanibazarview24.com
ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত মাল্টা দ্বীপ থেকে আবারও ১৫৮ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাল্টা প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি। এই খবর জানাজানির পর ইতোমধ্যে প্রবাসীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, এসব বাংলাদেশি অবৈধভাবে মাল্টায় প্রবেশ করেছেন।
এর আগেও মাল্টা থেকে ৪৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। গত ১২ জানুয়ারি মাল্টা প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে বিশেষ একটি ফ্লাইটে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় আবারও অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে মাল্টা সরকার। তবে অভিযোগ উঠেছে এসব বাংলাদেশিদের ব্যাপারে গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো সহযোগিতা না করে বরং তাদেরকে পাঠাতে আউট পাস দিয়ে মাল্টা সরকারকে সহায়তা করছেন দূতাবাস।
মাল্টায় অবস্থিত বাংলাদেশিরা রাজনৈতিক ও মানবিক আশ্রয় চেয়েছিলেন মাল্টা সরকারের কাছে। অন্যদিকে মাল্টায় কোনো দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস না থাকায় গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের পাসপোর্টসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দূতাবাস অবগত রয়েছে।
এ ব্যাপারে মাল্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিউর রহমান জানান, আমরা ১৫৮ বাংলাদেশি পাঠানোর খবরটি নিশ্চিত হয়েছি। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদেরকে রাখার জন্য আইনজীবীদের সঙ্গেও পরামর্শ করেছি। আইনের মাধ্যমে তাদেরকে রাখা সম্ভব তবে এথেন্স দূতাবাস কোনো সহযোগিতা না করলে তাদেরকে মাল্টায় রাখা অসম্ভব বলে জানিয়েছেন। যতটুকু জেনেছি আউট পাস দেয়ার জন্য রাষ্ট্রদূত ও কাউন্সিলর মাল্টায় অবস্থান করছেন। তিনি এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে গতকাল এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের জরুরি বিভাগে ফোন করা হলে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ ও কাউন্সিলর মো. খালেদ মাল্টার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফ্রান্সে অবস্থিত সামাজিক সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, ইউরোপে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সর্বাত্মক স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের সংগঠন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি দাবি করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয়া চুক্তিভিত্তিক ৯৩ হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে জনপ্রতি ১০ হাজার ইউরো দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একজনকেও ফেরত পাঠানো হয়নি। দীর্ঘ কয়েক বছর ওই বাংলাদেশিরা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে মাল্টায় অবস্থান করছেন। তার মধ্যে কিছু বাংলাদেশি কা.রা.গা.রেও ছিলেন।
এর আগের ৪৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে দূতাবাসের কাউন্সিলর মো. খালেদ বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি হয়। ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) ফর রিটার্ন অব ইয়েগুলার বাংলাদেশি ন্যাশনাল লিভিং ইন ইউরোপ’ নামে এ চুক্তির আওতায় যেসব বাংলাদেশি অভিবাসী অনিয়মিতভাবে ইউরোপে বা মাল্টা প্রবেশ করে, আইনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করার পরও তারা যদি বৈধ হতে না পারে সেক্ষেত্রে সেই দেশের সরকার বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করলে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত নেবে।
এ ব্যাপারে মাল্টা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব দাস বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। ধারদেনা করে এসে ফেরত চলে গেলে তাদের পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়বে। তবে আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের রাখার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক টাকা খরচ পড়বে, মাথাপিছু প্রায় দুই লাখ টাকা করে লাগবে। সমস্যা হলো- ১৫৮ জন বাংলাদেশি। এটা দূতাবাসের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবে সম্ভব নয়। আমরা চাই, তারা মাল্টা থেকে কাজ করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করবে।
এদিকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে অস্ট্রিয়া থেকে আয়েবার অন্যতম সহ-সভাপতি আহমেদ ফিরোজ মাল্টা যান। সেখানে গিয়ে বিস্তারিত জানার পর এ বিষয়ে রোববার স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে মাল্টায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেন। এতে আয়েবা সহ-সভাপতি তার সংগঠনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ সময় মালটা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজেম আলী স্বপন, সহ-সভাপতি মুন্সী জাকারিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তপন ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব দাস, প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, শাওন, মিল্টন, শহিদসহ মাল্টায় বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির আরও অনেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো বিষয় নিয়ে ২৩ জুন মাল্টা বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে এথেন্স বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাদের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.