Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন করোনাকালে দেশে আসা সিলেটের প্রবাসীরা


মৌলভীবাজারের মোহাম্মদ আনখার মিয়া। দুবাইয়ে একটি কোম্পানিতে গাড়ির গ্লাস লাগানোর কাজ করেন। নিয়মিত ছুটিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে দুবাই থেকে দেশে ফিরেন তিনি। পরিবার পরিজনের সাথে সময় কাটানোর জন্য ৩ বছর পর কফিলের (কোম্পানির মালিক) কাছ থেকে ৫ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন তিনি। গত মে মাসে দুবাই ফেরার কথা তার। কিন্তু চলমান করোনা মহামারির কারণে দুবাইর ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। তাই দুশ্চিন্তায় দিন যাপন করছেন তিনি। কিছুদিন ধরে সীমিত আকারে ফ্লাইট খুললেও এখনও ভিসা পাননি তিনি।(খবর :সিলেট টুডে)

এদিকে অতিরিক্ত সময় দেশে থাকার কারণে আনখার মিয়া পড়েছেন আর্থিক সংকটে। বর্তমানে নিকটাত্মীয়দের কাছে ধারদেনা করে চলছেন। এই কয়েক মাসে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ঋণ হয়েছে তার।

মোহাম্মদ আনখার মিয়া বলেন, ৩ বছর পর স্ত্রী সন্তানের সাথে ভালভাবে সময় কাটানোর জন্য দেশে এসেছিলাম। ৫ মাসের ছুটি নিয়ে এসেছিলাম, এখন যেতে পারছি না। আমার আকামার মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু ভিসা দিচ্ছে না। ঢাকা বিমান অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে থেকে একটা কোড নাম্বার আর ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া হয়েছে। সেখানে দুবাইয়ের আইডি নাম্বার, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে এন্ট্রি করতে বলেছে। এন্ট্রি করার পর আমাকে মেসেজে বলছে ৬০ দিন পর আবার যোগাযোগ করতে।

তিনি বলেন, আমি ৫ মাসের হিসাবে খরচ নিয়ে এসেছিলাম। তাছাড়া আমার কোনো মজুদ টাকা নেই। এখন ধার দেনা করে চলছি।

করোনার আগে ও করোনা চলাকালীন সময়ে দেশে ফেরা প্রায় সকল প্রবাসীরাই আনখার মিয়ার মত সংকটে আছেন। করোনাভাইরাসের কারণে নানা সমস্যায় হাজারো অভিবাসী কর্মী বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই আবার করোনার আগে নিয়মিত ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। দেশে ফেরা বেশিরভাগ প্রবাসীই এখন রয়েছেন আর্থিক সংকটে।

প্রবাসীদের এই সংকটের কথা উঠে আসে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির পৃথক দুটি জরিপে।

চলতি মাসের ১২ তারিখে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) “র‌্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন এর মধ্যে বিদেশফেরতদের প্রায় ৭০ শতাংশ জীবিকাহীন। ফেরত আসা অভিবাসীরা জীবিকা, আর্থিক সংকট (উপার্জনের অভাব এবং বর্ধিত ঋণ) এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়সহ পুনঃরেকত্রীকরণে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একেকজন অভিবাসী কর্মী গড়ে তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। সেক্ষেত্রে, অপরিকল্পিত ও বৃহৎ সংখ্যক জীবিকাহীন অভিবাসী কর্মীদের ফেরত আসার ফলে সারাদেশে রেমিটেন্স নির্ভর জনগোষ্ঠীর উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের সাথে সমন্বয় করে মোট ১,৪৮৬ জন বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের উপর পরিচালিত জরিপের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইওএম।

২০২০ সালের মে এবং জুলাই মাসে দেশের ১২ টি উচ্চ অভিবাসন প্রবণ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়, যার মধ্যে সাতটি জেলায় ভারতের সাথে সীমান্ত রয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ৫৫ শতাংশ জানান, তাদের উপর বর্ধিত শোধ না করা ঋণের বোঝা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুর কাছে ঋণগ্রস্ত, ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), স্বনির্ভর দল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণগ্রস্ত। ১৫ শতাংশ পাওনাদারদের কাছে ঋণগ্রস্ত। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারীদের ৮৬ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ নিয়েছেন, অন্যদিকে এমএফআই, এনজিও এবং বেসরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে গৃহীত ৬৫ শতাংশকে ঋণের জন্য সুদ বহন করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। মহাজন বা সুদে টাকা ধার দেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ ঋণগ্রহীতাকে সুদ গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ শতাংশ।

এদিকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির “বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব” শীর্ষক জরিপে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির সময়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের ৮৭% এর এখন কোনো আয়ের উৎস নেই। নিজের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন এমন সংখ্যা ৩৩%। আর ৫২% বলছেন, তাদের জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ফেরত এসেছেন এমন ৫৫৮ প্রবাসী কর্মীর সাথে কথা বলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৮৬% ফিরেছেন মার্চে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৫% এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন ওমান এবং কুয়েত থেকে। বাকিরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন। ব্র্যাকের ২০ কর্মী ঢাকা, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, নরসিংদী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, খুলনা এবং যশোরে রয়েছেন এমন প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জরিপটি পরিচালনা করেন।

জরিপে অংশ নেওয়া অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ৩৪% জানান, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ১৯% জানান, তাদের যে সঞ্চয় আছে তা দিয়ে আরও এক-দুই মাস চলতে পারবেন। নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন এমন সংখ্যা ৩৩%। ১০% জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে তারা ঋণ গ্রহণ করেছেন।

কুয়েত প্রবাসী হবিগঞ্জের বানিয়াচং এলাকার নসিবুর রহমান। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আসেন। কুয়েতে তিনি একটি হোটেলের ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করতেন।

একই এলাকার কুয়েত প্রবাসী মির্জাহান, হেলাল মিয়া, অহি মিয়া ও আনোয়ার মিয়া নিয়মিত ছুটিতে দেশে আসেন চলতি বছর জানুয়ারি মাসে। তারা প্রবাসে ব্যবসা, গাড়ি চালানো ও ইলেকট্রনিকের কাজ করতেন।

তাদের সবার সাথে কথা বলে জানা যায়, চলমান করোনা মহামারীর কারণে তারা বিদেশ যেতে পারছেন না। যে টাকা নিয়ে দেশে এসেছিলেন তা শেষ করে এখন ধার দেনা করে চলছেন। পরিবার চালাতে ও এই ধার দেনা পরিশোধ করতে হলেও তাদের প্রবাসে যাওয়া প্রয়োজন। তাদের সবারই কুয়েতের কাজের আকামার মেয়াদ আছে বলে জানান তারা।

তবে দেশে থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে রাজী নন কেউ। তাদের মতে বিদেশে কাজ করে যে টাকা আয় করেন, একই কাজ দেশে করে ওই পরিমাণ আয় করা সম্ভব না।

কুয়েতের একটি স্কুলের গাড়ি চালনা অহি মিয়া। তিনি বলেন, ওই দেশে গাড়ি চালিয়ে আমি যে টাকা পাই, দেশে গাড়ি চালিয়ে সেই টাকার চার ভাগের এক ভাগও পাবো না। তাই আমি চাই কুয়েত চলে যেতে। কারণ ইতোমধ্যে জমানো টাকা শেষ করে অনেক ধার দেনা হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘প্রবাসীদের বর্তমান অবস্থা, তাদের সংকট এবং করোনাভাইরাস তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর কি কি প্রভাব ফেলেছে সেটা জানতেই আমরা একটি জরিপ করি। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিদেশ ফেরত ৮৭% প্রবাসীর এখন কোনো আয়ের উৎস নেই। ৫২% বলছেন, তারা জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা চান।’

তিনি বলেন, ‘করোনার আগে ও পরে অনেকেই ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে যারা বছর খানেক হয় প্রবাসে গিয়েছিলেন, তারা যে টাকা খরচ করে গেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেননি। ৩৩% প্রবাসী বলছেন নিজের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন। তাই বলা যায় বর্তমানে তারা আর্থিক সংকটে আছেন। অনেকেই হয়তো ধার দেনা করে চলছেন। সরকার তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে তাদের অনেক ঋণের বোঝা আছে এটাও বুঝতে হবে।’

শরিফুল হাসান বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষিতে প্রবাসীরা যেন তাদের কর্মস্থলে যেতে পারেন সেই সরকারকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশে যারা আছেন তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। প্রবাসীদেরকেও দেশে কর্মসংস্থানের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ পৃথিবী আবার কবে স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না। তাই দেশেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে তাদের সাহায্য করতে হবে।’
খবর : sylhettoday24.news

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.